Advertisement
E-Paper

জঙ্গল রাজের স্মৃতি ভোলানোই চ্যালেঞ্জ লালুর

বিহারে মহাজোট সরকারের শপথ আগামী সপ্তাহে। নীতীশ কুমারের সামনে উন্নততর প্রশাসন উপহার দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ। লালুপ্রসাদ যাদব কিন্তু নামছেন আরও বড় পরীক্ষায়। নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের পরীক্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৩

বিহারে মহাজোট সরকারের শপথ আগামী সপ্তাহে। নীতীশ কুমারের সামনে উন্নততর প্রশাসন উপহার দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ। লালুপ্রসাদ যাদব কিন্তু নামছেন আরও বড় পরীক্ষায়। নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের পরীক্ষা।

দশ বছর আগে নীতীশ কুমারের কাছে যখন লালুপ্রসাদকে রাজ্যপাট হারাতে হয়েছিল, তখন তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল— পনেরো বছরে রাজ্যকে কার্যত জঙ্গলরাজ-এ পরিণত করেছেন তিনি। এক দিকে অনুন্নয়ন আর অন্য দিকে যাদবদের অত্যাচার। ২০০৫ সালে যাদববাহিনীর গুন্ডাগিরির হাত থেকে বাঁচতে নীতীশকেই আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল বিহারবাসী। ক্ষমতায় এসে শক্ত হাতে হাল ধরেন নীতীশ। গোটা রাজ্যে কমে আসে অরাজকতা। যাদবদের শক্ত হাতে দমন করে নীতীশ প্রশাসন।

কিন্তু চাকা ফের ঘুরেছে। দশ বছর পর সেই যাদব কুলপতি আবার ক্ষমতায়। নীতীশের জোটসঙ্গী হিসেবে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বিহারের জনজীবনে কি ফিরে আসতে পারে যাদবদের দাদাগিরি? ভোট প্রচারে এই ভয়টা দেখাতে কিন্তু কসুর করেননি ছোট-বড় কোনও বিজেপি নেতাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছিলেন, লালুপ্রসাদের ফিরে আসার অর্থই হল ‘জঙ্গলরাজ কি ডর’ জনমানসে ফিরে আসা।

মহাজোটের সামনে এটি যে বড় চ্যালেঞ্জ, তা বিলক্ষণ জানেন নীতীশও। বিহারের প্রায় ১১ কোটি বাসিন্দার ১১ শতাংশ যাদব সম্প্রদায়ের। প্রতি চার জন বিধায়কের এক জন যাদব সম্প্রদায়ের লোক। নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিধায়ক সংখ্যার বিচারে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে লালুপ্রসাদের দল আরজেডি। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যাদবেরা আবার ফণা তুলতে পারে, এমন একটা চোরা আশঙ্কা প্রশাসনের অন্দরমহলেও রয়েছে। তাই শুরু থেকেই সতর্ক ভাবে পা ফেলতে চাইছেন নীতীশ। নীতীশ শিবিরের বক্তব্য স্পষ্ট, অরাজকতা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এই বার্তা নির্বাচনের আগেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল আরজেডি প্রধানকে। ভোটের ফলাফলের পরেও সেটা ফের এক বার বলা হয়েছে তাঁকে। লালুপ্রসাদ শিবিরের সঙ্গে এ বিষয়ে একপ্রস্ত বৈঠকও করেছেন নীতীশের প্রচার-পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পরেই আরজেডির পক্ষ থেকে যাদব-কুলকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন লালুপ্রসাদের ছোট ছেলে তেজস্বী। দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘মহাজোটের সরকার কোনও ধরনের আইনবিরুদ্ধ কাজ মেনে নেবে না। যত বড় লোকই হোন না কেন, অন্যায় কড়া হাতে দমন করা হবে।’’

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, লালুপ্রসাদের পক্ষেও এ যাত্রা যাদববাহিনীকে প্রশ্রয় দেওয়া কঠিন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিহারের ক্ষমতায় এসে রাজ্যে নিম্নবর্ণের ক্ষমতায়নের প্রধান কান্ডারি হয়ে উঠেছিলেন লালু। কিন্তু প্রথম পর্বের শাসনের শেষ দিক থেকে যাদবদের অত্যাচার লাগামছাড়া হয়ে উঠতে শুরু করে। সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, আইন করে যে ক্ষমতায়ন হওয়া উচিত ছিল, তা যাদবেরা করে নিজেদের লাঠির জোরে। তার জেরেই বিহারে শুরু হয় তথাকথিত ‘জঙ্গলরাজ’।

এক দিকে এই জঙ্গলরাজের অভিযোগ এবং অন্য দিকে অনুন্নয়ন— এই দু’য়ের কারণেই যে তাঁকে সরে যেতে হয়েছিল, তা জানেন আরজেডি প্রধান। লালুর ঘনিষ্ঠ শিবিরের পর্যবেক্ষণ— এক সময়ে লালুপ্রসাদ মনে করতেন অনুন্নয়ন যত থাকবে, নিম্ন বর্ণের মানুষ তত তাঁকে তাদের মসিহা ভাববেন। তাঁর পক্ষে ভোট দেবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যে সেই সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে, তা মসনদ হারানোর পরে বুঝতে পেরেছিলেন লালু। ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে উন্নয়নের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ইউপিএ সরকারের প্রথম দফায় দিল্লিতে রেলমন্ত্রী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি বদলাতে খুবই তৎপর ছিলেন তিনি।

এত দিন পরে আবার নতুন করে ক্ষমতায় এসে অরাজকতাকে প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেটাও ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন লালু। তাই সূত্রের খবর, নীতীশের উন্নয়ন যজ্ঞে সক্রিয় ভাবে যোগদান করতে চায় আরজেডি। লালু ঘনিষ্ঠদেরও মতে, আরজেডি প্রধানের উচিত বিহারের উন্নয়নে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। যার সুফল পাবেন তাঁর উত্তরসূরিরা। কিন্তু সেটা কি লালু শেষ অবধি পারবেন? পারলেও কতটা পারবেন? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। না পারলে বড় দাম চোকাতে হতে পারে বিহার রাজনীতির ‘দুই ভাই’কে। নীতীশের চেয়ে তাই চ্যালেঞ্জটি অনেক বেশি কঠিন লালুপ্রসাদের কাছে।

bihar lalu prasad yadav jangal raj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy