Advertisement
০৭ মে ২০২৪

এই রায় কি স্বীকৃতি দেবে স্বেচ্ছামৃত্যুকেও?

সেই শীর্ষ আদালতই বৃহস্পতিবার ব্যক্তিপরিসরের অধিকার (রাইট টু প্রিভেসি) কে মৌলিক অধিকারের অঙ্গ হিসাবে মেনে নেওয়ায় নতুন করে আবার ‘অ্যাকটিভ ইউথ্যানাশিয়া’ বা পুরোপুরি নিষ্কৃতি মৃত্যু-র অধিকারের বিষয়টি চর্চায় উঠে এসেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৬
Share: Save:

হায়দরাবাদের বাসিন্দা কোলাবেনু বেঙ্কটেশের নিষ্কৃতি-মৃত্যু চেয়ে আদালতে গিয়েছিলেন মা সুজাতা। অনুমতি পাননি। তিলে-তিলে কষ্ট পেয়ে ২০০৪-এ মারা যান বেঙ্কটেশ।

বান্ধবী অরুণা শনবাগের নিষ্কৃতি-মৃত্যু চেয়ে আবেদন করেছিলেন পিঙ্কি ভিরানি। তাঁকেও খালি হাতে ফিরতে হয়। মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে চার দশক কোমায় থাকার পর ২০১৫-এ মৃত্যু হয়েছিল অরুণার। তবে তার আগে ২০১১-য় পিঙ্কির আবেদনের ভিত্তিতেই বিশেষ অবস্থায় ‘পরোক্ষ নিষ্কৃতি মৃত্যু’ বা প্যাসিভ ইউথ্যানাশিয়া-র অধিকার স্বীকার করে নিয়েছিল শীর্ষ আদালত।

সেই শীর্ষ আদালতই বৃহস্পতিবার ব্যক্তিপরিসরের অধিকার (রাইট টু প্রিভেসি) কে মৌলিক অধিকারের অঙ্গ হিসাবে মেনে নেওয়ায় নতুন করে আবার ‘অ্যাকটিভ ইউথ্যানাশিয়া’ বা পুরোপুরি নিষ্কৃতি মৃত্যু-র অধিকারের বিষয়টি চর্চায় উঠে এসেছে। শীর্ষ আদালতের এ দিনের রায়ের ভিতরেই একটি অংশে রয়েছে— ‘সারা জীবন ধরে চিকিৎসা বা ওষুধ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করা বা জীবন শেষ করতে চাওয়া ব্যক্তিপরিসরের অধিকার (রাইট টু প্রিভেসি) এর মধ্যে পড়ে।’ এতেই প্রশ্ন উঠেছে— তা হলে কি এ বার ‘স্বেচ্ছামৃত্যু’ এ দেশে স্বীকৃত হবে?

আইন-বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, ‘পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যু’ মানে, মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর ওষুধ বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া। আর নিষ্কৃতি-মৃত্যুতে সম্মত কোনও রোগীকে সরাসরি ইঞ্জেকশন বা ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলা হলে তা ‘প্রত্যক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যু’র আখ্যা পাবে। যার উদাহরণ ছিল সঞ্জয় লীলা ভংসালীর ‘গুজারিশ’ ছবিতে। সেখানে দীর্ঘদিন পঙ্গু থাকা জাদুকর ইথান মাসকারেনহাসকে (ঋত্বিক রোশন) তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ইঞ্জেকশন দিয়ে মৃত্যু এনে দিয়েছিলেন তাঁর প্রেমিকা তথা নার্স সফিয়া ডিসুজা (ঐশ্বর্যা রাই)।

প্রসঙ্গত, জৈন ধর্মে ‘সান্থারা’ নামে একটি রীতি পালন করা হয়, যেখানে স্বেচ্ছায় এক জন উপবাস করে মৃত্যু বরণ করে। ‘ধর্মীয় রীতি’ বলে একে বন্ধ করার ব্যাপারে এত দিন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। এখন এটিও ব্যক্তিপরিসরের অধিকার (রাইট টু প্রিভেসি)-এর মধ্যে চলে আসবে বলে অনেকে মনে করছেন।

নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের মতো দেশে নিষ্কৃতি-মৃত্যু বৈধতা পেয়েছে। এ দেশেও নিষ্কৃতি-মৃত্যু নিয়ে আইন তৈরির প্রক্রিয়া আগে এক বার শুরু হয়েছিল। ২০০৬ সালে এ ব্যাপারে একটি বিল তৈরিও হয়। কিন্তু তার পর বিষয়টি ঠান্ডা ঘরে চলে যায়। ২০১১ সালে অরুণা শনবাগ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তাদের মতামত জানানোর পরে সরকার আবার নড়েচড়ে বসে। ২০১২ সালের অগস্টে জাতীয় আইন কমিশন পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যু নিয়ে একটি ৬৫ পাতার খসড়া আইন তৈরি করেছে। তার উপর বিভিন্ন স্তরের মানুষের এবং সব রাজ্যের মতামত চাওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে পিঙ্কি ভিরানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘প্যাসিভ ইউথ্যানাশিয়া বিল অনেক দিন ধরে ঠান্ডা ঘরে পড়ে রয়েছে। সরকার কিছুই করছে না। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’’

আইনজীবী সঞ্জয় বসুর ব্যাখ্যা, ‘‘নিষ্কৃতি মৃত্যুর বিষয়ে বৃহস্পতিবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও জানিয়েছে যে, বিষয়টি এখনও আদালতে পড়ে রয়েছে এবং এর অনেক ধূসর জায়গা রয়েছে। ফলে এখনই এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE