Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩

হিসেবের ভুলেই কি বাঁচল ভারত, তদন্তে গোয়েন্দারা

সতর্কতা ছিল গত সাত দিন ধরেই। ওয়াগায় সীমান্তের ও পারে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে নিরাপত্তার বাড়তি কড়াকড়ি ধরা পড়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখেও। খবর ছিল ওয়াগা সীমান্তে বড়সড় হামলার ছক কষছে পাক জঙ্গিরা। তাই গত কাল বছর পনেরোর এক কিশোরকে ভারী জামাকাপড় পরে ওয়াগা প্যারেড গ্রাউন্ডের এক্সিট গেট-এর দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই সন্দেহ হয় পাক রেঞ্জারদের। রেঞ্জার্স বাহিনী ওই কিশোরকে চ্যালেঞ্জ করতেই শরীরে বাঁধা বোমার সুইচ টিপে নিজেকে উড়িয়ে দেয় সে।

কুচকাওয়াজের সময় জাতীয় পতাকা নামাচ্ছে পাকিস্তানি রেঞ্জার ও বিএসএফ। সোমবার ওয়াগা সীমান্তে। ছবি: রয়টার্স

কুচকাওয়াজের সময় জাতীয় পতাকা নামাচ্ছে পাকিস্তানি রেঞ্জার ও বিএসএফ। সোমবার ওয়াগা সীমান্তে। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
Share: Save:

সতর্কতা ছিল গত সাত দিন ধরেই। ওয়াগায় সীমান্তের ও পারে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে নিরাপত্তার বাড়তি কড়াকড়ি ধরা পড়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখেও। খবর ছিল ওয়াগা সীমান্তে বড়সড় হামলার ছক কষছে পাক জঙ্গিরা।

Advertisement

তাই গত কাল বছর পনেরোর এক কিশোরকে ভারী জামাকাপড় পরে ওয়াগা প্যারেড গ্রাউন্ডের এক্সিট গেট-এর দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই সন্দেহ হয় পাক রেঞ্জারদের। রেঞ্জার্স বাহিনী ওই কিশোরকে চ্যালেঞ্জ করতেই শরীরে বাঁধা বোমার সুইচ টিপে নিজেকে উড়িয়ে দেয় সে। মারা যান ৬০ জন। ওই ফিদায়েঁর শরীরে পাঁচ কেজি বিস্ফোরক ছিল।

নাশকতা চালানোর জন্য ওয়াগাকে বেছে নেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। সব ছেড়ে এই মৈত্রীর প্রতীক জায়গাটিতে এসেই কেন বিস্ফোরণ ঘটানো হল, তা খতিয়ে দেখ হচ্ছে। গোয়েন্দাদের মতে, দু’দেশকে বার্তা দিতেই এই হামলা চালিয়েছে পাক সেনা, আইএসআই ও কট্টর মোল্লাতন্ত্র। নওয়াজ শরিফ পঞ্জাবের লোক। পাকিস্তান অশান্ত থাকলেও দীর্ঘদিন বড় নাশকতার শিকার হয়নি পাক পঞ্জাব। নওয়াজকে কোনও মতেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে দিতে রাজি নয় পাক সেনার একাংশ ও মোল্লাতন্ত্র। ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, পাক সেনার একটি অংশের মদতেই ওয়াগা সীমান্তে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

কিন্তু ভারতকে কী ভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে? কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই ঘটনার পরে স্বভাবতই পাকিস্তানকে আরও বেশি সন্দেহের চোখে দেখবে ভারত। আবার মৌলবাদীদের ভয়ে চট করে নয়াদিল্লির সঙ্গে মৈত্রীর পথেও এগোবেন না নওয়াজ শরিফ। ভারতের দিকেও নাশকতার প্রভাব পড়লে জঙ্গিরা আরও বেশি সফল হতো বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

বিস্ফোরণটি ঘটানোর ক্ষেত্রে কোনও ‘হিসেবের ভুল’ হয়ে গিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। পাক ভূখণ্ডের যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে সেই এলাকা থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ব্যবধান নামমাত্র। অর্থাৎ ওই আত্মঘাতী জঙ্গি আরও একটু এগোলেই ভারতের দিকে প্রভাব পড়তে পারত।

এই সূত্রে কূটনীতিকরা আরও মনে করছেন, ঘটনাটি পাক নিরাপত্তাবাহিনীর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের প্রমাণ। কারণ, পাক সেনার একাংশের মদতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ওয়াগা সীমান্তে আত্মঘাতী জঙ্গিকে আটকেছে পাক রেঞ্জাররাই।

নভেম্বরের শেষে কাঠমান্ডুতে সার্ক সম্মেলন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই। এখনও পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে কোনও বৈঠক হবে বলে স্থির হয়নি। কিন্তু তার আগেই সার্ক-এর পরিবেশ বিষিয়ে দিতে এই নাশকতা চালানো হয়েছে বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। একমাত্র ওয়াগা-আট্টারি পথেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চলে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “ওয়াগায় বিস্ফোরণ ঘটানোর অর্থই হল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য তথা স্বাভাবিক সম্পর্ক যেটুকু রয়েছে, তাকে নষ্ট করে দেওয়া।” সে কাজে কিছুটা সফলও হয়েছে জঙ্গিরা। ওই পথে বাণিজ্য আজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ভারত থেকে আগামিকাল যে দু’হাজার শিখ তীর্থযাত্রী গুরু নানকের জন্মতিথি পালন করতে লাহৌরে যাবেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে আজ পাক প্রশাসন জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.