Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জমে ওঠার আগেই ভেঙে গেল ওয়াইসির মজলিস!

মজলিস জমার আগেই ভেঙে গেল আসর! তেলেঙ্গানা-মহারাষ্ট্রের পর বিহারে ভাল ফল করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে নজর দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-মুসলিমিন (এমআইএম) দলের নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৯:৪৭
Share: Save:

মজলিস জমার আগেই ভেঙে গেল আসর!

তেলেঙ্গানা-মহারাষ্ট্রের পর বিহারে ভাল ফল করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে নজর দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-মুসলিমিন (এমআইএম) দলের নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি। হায়দরাবাদের ওই নেতা, নিজের সংখ্যালঘু পরিচয়কে ব্যবহার করে গোটা দেশের মুসলিমদের মসিহা হয়ে ওঠার যে প্রচেষ্টা তিনি করছিলেন তাতে আজ জল ঢেলে দিয়েছেন বিহারবাসীরা। ওযাইসির মতোই যেমন ভোটের ফল আসতেই বাড়ির ভিতর সেঁধিয়ে গিয়েছেন হিন্দুত্বের জিগির তোলা কট্টর বিজেপি নেতারা।

আসাউদ্দিন ওয়াইসি যখন বিহারে নির্বাচনে লড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, দক্ষিণের ওই নেতা কেন হঠাৎ করে বিহারে নজর দিচ্ছেন। তাঁর উদ্দেশ্যটা কী! কেনই বা অন্ধ্র-তেলেঙ্গানা ছেড়ে পূর্ব ভারতে নজর ঘোরালেন কট্টর মৌলবাদী ওই নেতা।

ওয়াইসি-র যুক্তি ছিল, তাঁর দল গোটা দেশের মুসলিমদের স্বার্থে আগামী দিনে লড়াই করতে চায়। তাই হায়দরাবাদের গন্ডিতে আটকে না থেকে সারা ভারতে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যেই বিহার নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। বিহারের পর তাঁর আগামী লক্ষ্য হল ২৭ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৬ সালে রাজ্যের মুসলিমদের সমর্থন নিয়ে ভাল ফল করাই তাঁর আগামী নিশানা। সেই কারণেই তেলেঙ্গানা-মহারাষ্ট্রের পর এবার প্রথমে বিহার ও তারপর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে লড়বে তাঁর দল।

মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে ওয়াইসি সাফল্য পেলেও, বিহার কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে কট্টরবাদী নেতার ভাবধারা থেকে। যে কিষানগঞ্জকে ঘাঁটি করে পূর্ব ভারতে প্রভাব বাড়ানোর লড়াইতে নেমেছিলেন ওয়াইসি, আজ সবথেকে বড় ধাক্কা এসেছে সেখান থেকেই। জেলার চারটি আসনেই সন্ধ্যে পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে নীতীশ কুমারের দলের প্রার্থী। একই চিত্র আরারিয়া বা পূর্ণিয়ার মতো সীমাঞ্চলের অন্য জেলাগুলিতেও। প্রায় দু’ডজনের বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েও আজ সন্ধ্যে পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রেই খাতা খুলতে পারেনি এমআইএম প্রার্থীরা।

অথচ নির্বাচনে লড়তে নিজের মৌলবাদী তাস ব্যবহার করতে পিছপা হননি ওয়াইসি। সাফল্য পেতে লড়ার জন্য বেছে নেওয়া হয় মুসলিম অধ্যুষিত কিষানগঞ্জ (৭০ শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম) ও সংলগ্ন সংখ্যালঘু এলাকা আরারিয়া, পূর্ণিয়া ও কাটিহারের মতো জেলাগুলিকে। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, উত্তর বিহারের সীমাঞ্চলের জেলাগুলির মুসলিম সমাজকে বার্তা দেওয়া যে দশকের পর দশক ধরে বঞ্চিত সংখ্যালঘু সমাজের উন্নতি ও তাদের স্বার্থরক্ষায় নির্বাচনী ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন ওয়াইসি। মুসলিম সমাজের অধিকার রক্ষা করাই তার দলের প্রধান কাজ। বার্তা দেন, দেশের মুসলিমদের পরিত্রাতা হলেন তিনিই।

তাহলে কেন ব্যর্থ হলেন ওয়াইসি?

রাজনীতিকদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে একাধিক কারণ। প্রথমত-বিহারে ১৯৮৯ সালে ভাগলপুর দাঙ্গার পর কোনও বড় মাপের দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। লালুপ্রসাদ বা নীতীশ কুমারের জমানায় বিহারের মুসলিমরা কখনই সে ভাবে অসুরক্ষিত বোধ করেননি। ফলে মুসলিম সমাজ এ যাত্রায় সেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছে। তাছাড়া ওয়াইসির মতো নেতাদের ভোটে জেতানোর অর্থই হল, আগামী দিনে ওই এলাকায় হিন্দু মৌলবাদী শক্তির বাড়বাড়ন্ত। সূত্রের খবর, এমন বার্তাও স্থানীয় সংখ্যালঘু সমাজকে দেওয়া হয় নীতীশ শিবিরের পক্ষ থেকে। দ্বিতীয়ত-বিগত কয়েকটি নির্বাচনেই ওই এলাকায় লাগাতার ভাবে জিতে এসেছেন নীতীশ কুমারের দলের সংখ্যালঘু প্রার্থীরা। ফলে ওয়াইসি নির্বাচনে দাঁড়ানোয় মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সীমাঞ্চলের ভোট পর্বে মেরুকরণের উদ্দেশ্যে কোনও প্রচেষ্টাই বাদ রাখেননি বিজেপি নেতৃত্ব।

এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হলে সে ক্ষেত্রে বিজেপি প্রার্থী ফায়দা পেয়ে যাবেন এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই ওয়াইসির হঠাৎ আগমনের পিছনে নরেন্দ্র মোদী কিংবা অমিত শাহেরই হাত রয়েছে বলেই সরব হন নীতীশ-লালু জোট। ওয়াইসি যে পরোক্ষে বিজেপির সুবিধে করে দিতেই অবতীর্ণ হয়েছেন-এই বার্তাও সংখ্যালঘু সমাজের একেবারে নিচু স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। মহারাষ্ট্রে তাঁকে ব্যবহার করে কংগ্রেস-এনসিপি জোটের বিরুদ্ধে সাফল্য এলেও এ ক্ষেত্রে কিন্তু ভোট ভাগাভাগির ফায়দা নিতে ব্যর্থ হয় বিজেপি প্রার্থী। তৃতীয়ত-বিহারের রাজনীতিতে ভূমিপুত্র না হলে সফল হওয়া কঠিন। ওয়াইসির ক্ষেত্রেও সেই সমীকরণ খেটে গিয়েছে। সেই অর্থে আনকোরা ওয়াইসি-তে ভরসা রাখতে চায়নি সীমাঞ্চলের সংখ্যালঘু সমাজ। আর তাই এ যাত্রা কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে ওয়াইসিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

waiasi hyderabad patna india andhra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE