ডিমা হাসাও জেলায় পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে জেলাসদর হাফলঙে হাহাকার অবস্থা। স্বশাসিত পরিষদ মাসে এক দিন জল দেয়। অভিযোগ, ওই দিনও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল মেলে না। একে তো এত জল দেওয়া হয় না। তার উপর এক মাসের জল ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকে না অধিকাংশ বাড়িতে। এতে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সমস্যা মেটাতে অনেকেই বাইরে থেকে জল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তা-ও নদীর জল। প্রতি হাজার লিটারের দাম ৪০০ টাকা। প্রতি দিন হাফলং শহরে কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ লিটার জল বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা নদী থেকে ড্রাম ভর্তি করে গাড়িতে নিয়ে আসেন। তা কেনার পর ফটকিরি দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা হয়। ওই জলই পান করেন সবাই।
এটা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়। কয়েক বছর ধরে শীত-গ্রীষ্মে একই অবস্থা। যখনই যাঁরা পরিষদের ক্ষমতায় থাকেন, নতুন জল সরবরাহ প্রকল্পের গল্প শোনান। কিন্তু কোনও কিছুই শেষ পর্যন্ত হয় না।
পরিষদের বর্তমান মুখ্য কার্যবাহী সদস্য দেবজিত থাউসেনও জানান, জল সমস্যা মেটাতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সব রকম চেষ্টা চলছে।
জলের সমস্যা এমন তীব্র হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। জল সরবরাহ প্রকল্পের আধুনিকীকরণে পরিষদ বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর আগ্রহী নয়। লোকসংখ্যা বাড়লেও পরিকাঠামো পুরনো। অনেক জায়গায় পাইপ ফেটে জল বেরিয়ে যায়। সে দিকে কারও খেয়াল নেই। সব চেয়ে বড় সমস্যা বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া। কয়েক বছর আগেও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি, শিলঙের পরই হাফলঙে সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতো। এখন বৃষ্টির অভাবে নদীগুলিও সরু নালার চেহারা নিয়েছে। পরিবেশবিদরা এই অবস্থার জন্য অবাধে গাছ কেটে ফেলাকে দায়ী করছেন। তাঁদের কথায়— প্রকৃতি ক্রমে ভারসাম্য হারাচ্ছে। সে জন্যই জলধারা শুকিয়ে যাচ্ছে। জুম চাষকেও অনেকাংশে দায়ী করছেন তাঁরা। উপজাতিরা বড়াইল পাহাড়ের ঢালু অংশে ঝোপঝাড় পুড়িয়ে ফসল ফলায়। রাজ্য সরকার ও স্বশাসিত পরিষদ জুমচাষ বন্ধে নানা প্রকল্প চালু করলেও উপজাতিরা সে সবে আগ্রহ দেখান না। অনেকে প্রকল্প গ্রহণ করেও বনজঙ্গল কেটে জুমচাষ ব্যবহার করেন।
হাফলঙের প্রাক্তন বিধায়ক ও স্বশাসিত পরিষদের প্রাক্তন মুখ্য কার্যবাহী সদস্য সমরজিত হাফলংবার এই পরিস্থিতির জন্য ব্রডগেজ ও ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের মত বড় প্রকল্পগুলিকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই সব প্রকল্পের জন্য অনেক গাছ কাটা হয়েছে। তেমনি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পাহাড় কেটে প্রচুর মাটি নদীতে ফেলা হয়েছে। নদীর গভীরতা কমেছে, প্রস্থ ছোট হয়েছে। এতেই পানীয় জলের উৎস শুকিয়ে গিয়েছে এবং সঙ্কট বেড়েছে।’’ একই কথা শোনালেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার লোকমান আলিও। তিনি জানান, হাফলং শহরে জল সরবরাহ হয় দিয়ুং ও দিবালং নদী থেকে। দুই নদীতেই এক সমস্যা। গভীরতা কমে যাওয়ায় জল কম। এ সবের কি কোনও সমাধান নেই? পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী সদস্য দেবজিত থাওসেনের আশ্বাস, দ্রুত জল সঙ্কট দূর হবে। বিষয়টি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। এ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy