Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

যত্নে ‘গ্রাম’ গড়ে উজ্জ্বল দেবীরাই

জাগো মা! জাগো দশপ্রহরণধারিণী। রাজধানী-লাগোয়া এই প্রবাসে মাতৃ আরাধনায় উজ্বল নারীশক্তি। গুরুগ্রামের বঙ্গীয় পরিষদ সেক্টর ৫৬-র সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় এ বার শুধুই প্রমীলারা। মণ্ডপ সাজানো থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, ভোগ রান্না থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানো— প্রমীলা প্রতিভার সমূহ প্রকাশ এখানে।

মণ্ডপ তৈরির কাজেও প্রমীলা বাহিনী। গুরুগ্রামের বঙ্গীয় পরিষদ সেক্টর ৫৬-র সর্বজনীন দুর্গাপুজো।—নিজস্ব চিত্র

মণ্ডপ তৈরির কাজেও প্রমীলা বাহিনী। গুরুগ্রামের বঙ্গীয় পরিষদ সেক্টর ৫৬-র সর্বজনীন দুর্গাপুজো।—নিজস্ব চিত্র

অপরাজিতা মৈত্র
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

জাগো মা! জাগো দশপ্রহরণধারিণী।

রাজধানী-লাগোয়া এই প্রবাসে মাতৃ আরাধনায় উজ্বল নারীশক্তি। গুরুগ্রামের বঙ্গীয় পরিষদ সেক্টর ৫৬-র সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় এ বার শুধুই প্রমীলারা। মণ্ডপ সাজানো থেকে শুরু করে চাঁদা তোলা, ভোগ রান্না থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানো— প্রমীলা প্রতিভার সমূহ প্রকাশ এখানে। বয়সে নবীন হলেও তাই এই পুজো অভিনবত্বে টেক্কা দিচ্ছে প্রাচীন দুর্গোৎসবগুলিকে।

মাত্র ১১ বছর বয়স এই সেক্টর ৫৬-র। এ বারের থিম ‘গ্রাম বাংলা’। যে থিমের পুরোটাই পরিবেশ সচেতনতার মন্ত্রে গাঁথা। এই পুজো কমিটির মহিলারা দিনে অফিস সেরে রাতে মণ্ডপের কাজ করেছেন অক্লান্ত। গ্রাম বাংলার সাজ-সরঞ্জাম দিয়েই গড়া পুজো-চত্বর। চট, বাঁশ, চাটাই, খড় দিয়ে তৈরি মণ্ডপে যত্নে আঁকা আলপনা। অন্দরসজ্জার উপকরণের মধ্যে রয়েছে কুলো, গামছা, এমনকী মাটির মালসাও। লাইটিংয়ে মাটির ঝুড়ির ব্যবহারও দাবি রাখে অভিনবত্বের।

মণ্ডপ থেকে প্রতিমা— সব কিছুই পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস দিয়ে তৈরি। প্রতিমার গয়না থেকে শুরু করে শাড়ি, সবই মাটির। শুধু তা-ই নয়, মণ্ডপ ও প্রতিমা সাজানোর কাজে যাতে শুধু প্রাকৃতিক রংই ব্যবহৃত হয়, নজর রাখা হয়েছে সে দিকেও। পুজো প্রাঙ্গণে তিন ফুট অন্তর দু’টি করে ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। তাতে একটিতে শুধুমাত্র সেই সব জিনিসই ফেলা যাবে, যা প্রাকৃতিক নষ্ট হওয়া সম্ভব। ভোগের থালা-বাটি তৈরি হয়েছে কাগজ দিয়ে, জলের গ্লাসেও নেই প্লাস্টিকের ছোঁওয়া।

উদ্যোক্তারাই শুধু নন, পুজো দেখতে আসা সমস্ত মানুষও যাতে এই পুজোর থিমের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠেন, সেই লক্ষ্যে পুজো প্রাঙ্গণে কিছুক্ষণ অন্তরই প্লাস্টিক ব্যবহার না-করার কথা ঘোষণা হচ্ছে। পুজোর চার দিনের জন্য কিছু অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘গ্রিন ব্রিগেড’। এঁরা পুজো চত্বরে ঘুরে ঘুরে খেয়াল রাখছেন, ‘থিম গ্রাম বাংলা’র পরিবেশ যাতে সুরক্ষিত থাকে।

এ বারের থিম সম্পর্কে জানাতে গিয়ে পুজোর সাংস্কৃতিক কমিটির সচিব সেমন্তী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বর্তমান প্রজন্মের বাঙালিদের বাংলার গ্রামীণ রূপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই আমরা এই থিম বেছে নিয়েছি।’’ তিনি আরও জানান, প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা দূষণ সম্পর্কে জনতাকে সচেতন করতেই এই পরিবেশবান্ধব মণ্ডপ বানানোর উদ্যোগ। শুধু থিম নয়, মণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে পুজো প্রাঙ্গণের ছোট-বড় সমস্ত বিষয়েই প্রধান ভূমিকা মহিলাদের। সেমন্তীর কথায়, “মণ্ডপের ভিতরের আলপনা থেকে শুরু করে কোন জিনিস কোথায় কী ভাবে সাজানো হবে, সবটাই ঠিক করেছেন আমাদের কমিটির মহিলা শিল্পীরা। গত এক মাস ধরে রাত ৮টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত নিজেদের হাতে এই সমস্ত কাজ করেছেন তাঁরা।”

পরিবেশ সচেতনতার মতো পাশাপাশি এই পুজোয় রয়েছে দেদার মজাও। প্রত্যেক দিন সকালে থাকছে বিভিন্ন রকমের মজার খেলা। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও ক’দিনের জন্য ছোট হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এই সমস্ত খেলার আসরে! পুজোর ‘স্পোর্টস কমিটি’র চেয়ারপার্সন লীনা দাস বলছেন, ‘‘গত বার ঘড়ি-বাঁধা সময়ে আমরা রসগোল্লা এবং ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা করেছিলাম! তাতে দারুণ উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল!’’

এ বারেও পুজোর শেষ দিনে থাকছে অভিনব সব খেলা। তবে লীনা এখনই সবটা বলতে চান না। মজা নিয়ে আপাতত একটু রহস্যই থাক না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gurgaon sector 56 durga puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE