আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও উঠে যায়নি। তবে নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে যোজনা কমিশনের আসল কাজগুলি ইতিমধ্যেই সরে গিয়েছে অর্থ মন্ত্রকে।
আগামী আর্থিক বছরে উন্নয়ন খাতে কেন্দ্রীয় সরকার মোট কত টাকা ব্যয় করবে, তা ঠিক করতে যোজনা কমিশনই এত দিন প্রধান ভূমিকা নিত। অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় দফতরের কাজ ছিল শুধু অর্থ বরাদ্দ করা। এ বার অর্থ মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করেছে, সমস্ত মন্ত্রক ব্যয় দফতরের কাছেই তাদের খরচ নিয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। এত দিন বাজেটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকার যোজনা কমিশনের কাছে বার্ষিক ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠাত। সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখার পরে, যোজনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রক যৌথ ভাবে ঠিক করত, পরিকল্পনা খাতে মোট কত ব্যয় হবে। গোটা প্রক্রিয়াতেই ব্যাপক রদবদল এ বার। তার মধ্যেই যদিও বিকল্প প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্বকে গুরুত্ব দিয়ে, পেশাদারদের সামনে এনে উন্নয়নের নতুন প্রতিষ্ঠানটির রূপ দিতে চাইছেন তিনি। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই সরকারের ভাবনার কথা প্রাথমিক ভাবে জানাতে চাইছে কেন্দ্র।
তার আগে পরিবর্তিত ব্যবস্থায় অর্থ দফতরের ব্যয় সচিব আর এন ওয়াট্টালের ঘাড়েই তুলে দেওয়া হয়েছে দু’টি দায়িত্ব। তিনি বাজেট প্রস্তাবও খতিয়ে দেখবেন। আবার ব্যয় বরাদ্দও অনুমোদন করবেন। বদলে যাওয়া ব্যবস্থার আর একটি নতুন দিক হল, এত দিন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রককে জানাতে হত, তারা কোন প্রকল্পে কত টাকা খরচ করতে চাইছে। এ বার কত টাকা প্রয়োজন, তা জানানোর পাশাপাশি ওই প্রকল্পে কী ফল মিলবে, তা-ও বলতে হবে। নতুন ব্যবস্থায় কোনও মন্ত্রককেই আর যোজনা কমিশনের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
যোজনা কমিশন উঠে গেলে এর অধীনে থাকা সংস্থাগুলির কী হবে? সরকারি সূত্রের খবর, কমিশনের অধীনে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন দফতর ছিল। যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কতখানি কাজ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা। সেই মূল্যায়ন দফতরও গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। আধার কর্তৃপক্ষের দফতরটিও ছিল যোজনা কমিশনের অধীনে। সেটি ইলেকট্রনিক্স দফতরের অধীনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আগামী আর্থিক বছর শুরুর আগেই যোজনা কমিশনের বিকল্প প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।
লাল কেল্লায় প্রথম বার জাতীয় পতাকা উড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, নেহরুর পরিকল্পিত যোজনা কমিশন উঠে যাবে। আসবে নতুন প্রতিষ্ঠান। নেহরুর ১২৫ বর্ষপূর্তি নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে যথেষ্ট দড়ি টানাটানি হয়েছে। ঠিক এই সময়েই নেহরুর যোজনা কমিশনের বদলে নরেন্দ্র মোদীর পরিকল্পিত নতুন প্রতিষ্ঠানের কাঠামো কেমন হবে, তার রূপরেখা প্রকাশ হতে চলেছে। সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই মোদী সরকার এ বিষয়ে মুখ খুলতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
সোভিয়েতের আদলে নেহরু যে যোজনা কমিশন তৈরি করেছিলেন, তার প্রধান কাজ ছিল অর্থ বরাদ্দ ও উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা তৈরি। মোদী বলছেন, নতুন প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার জোগান। সেই প্রতিষ্ঠানে রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আগামী দিনে অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রেও রাজ্যগুলির হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা থাকবে। সেই নীতি মেনেই নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির আগেও রাজ্যগুলির সঙ্গে মত বিনিময় করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী।
সরকারি সূত্র বলছে, এত দিন যোজনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আমলা, গবেষক, অধ্যাপক বা পেশাদারদের নিয়োগ করা হতো। নতুন প্রতিষ্ঠানে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিত্বই সব থেকে বেশি থাকবে। দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের আমলারা যোজনা কমিশনে আসবেন। শিল্প মহলের তরফে বণিকসভাগুলির প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ ছাড়া কয়েক জন পেশাদারকে নিয়োগ করা হবে।
নতুন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে সব রাজ্যের মত চাওয়া হবে। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ডাকা হতে পারে। দেশের অর্থনীতির দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধির জন্য নরেন্দ্র মোদী রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাইছেন। তাই রাজ্যগুলির মত নিয়েই নতুন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা হবে। তবে তার আগে সংসদে এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠবে আঁচ করে সেখানে নতুন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রাথমিক রূপরেখা জানিয়ে রাখতে চায় সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy