Advertisement
০২ মে ২০২৪

অর্ডিন্যান্স নিয়ে উষ্মা ফের বোঝালেন প্রণব

জমি আইন সংশোধন অর্ডিন্যান্সে সই করার আগে কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ইতিমধ্যেই এক বার বার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কথায় কথায় অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করার প্রশ্নে আজ ফের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সতর্ক করলেন তিনি। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি ও এনআইটি-র ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে আজ এক ভিডিও কনফারেন্সে সংসদের কাজ ও নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রপতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

জমি আইন সংশোধন অর্ডিন্যান্সে সই করার আগে কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ইতিমধ্যেই এক বার বার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কথায় কথায় অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করার প্রশ্নে আজ ফের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সতর্ক করলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি ও এনআইটি-র ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে আজ এক ভিডিও কনফারেন্সে সংসদের কাজ ও নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রপতি। তখনই তিনি বলেন, “অর্ডিন্যান্স জারি করার জন্য সংবিধান খুবই সীমিত ক্ষমতা দিয়েছে সরকারকে। সংসদের অধিবেশন যখন চলবে না সেই সময় কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি হলে তবেই অর্ডিন্যান্স জারি করা যায়। এই পদক্ষেপ যে জরুরি তাও যুক্তিগ্রাহ্য হওয়া চাই।” রাষ্ট্রপতি এও জানান, রাজ্যসভায় সরকার সংখ্যালঘু হলে বিল পাশ করানোর জন্য বার বার যৌথ অধিবেশন ডাকাও ‘ব্যবহারিক (প্র্যাকটিকাল) পথ নয়’।

কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠনের পর আট মাসে দশটি অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের ব্যাখ্যা, জরুরি কারণে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাছাড়া সংসদ অচল থাকায় বিমা বিল, কয়লা খনি বণ্টন বিল পাশ করানো যায়নি।

কিন্তু সরকার যাই ব্যাখ্যা দিক, এ নিয়ে বিরোধীরা সমালোচনা করছেন কেন্দ্রের। মোদী সরকার ‘অর্ডিন্যান্স কারখানা’ বলেও মন্তব্য করেছে কংগ্রেস। সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে বরাবর রক্ষণশীল প্রণব মুখোপাধ্যায়ও এতে খুশি নন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রের আরও দাবি, কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ডেকে ঘন ঘন অর্ডিন্যান্স জারির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন প্রণববাবু।

তবে রাষ্ট্রপতি আজ সরকারকে বার্তা দিলেও বিরোধীদেরও খুশির কিছু নেই। কারণ, তাঁদেরও ছেড়ে কথা বলেননি প্রণববাবু। তাঁর মতে, সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করা, খারিজ করার গণতান্ত্রিক অধিকার বিরোধীদের রয়েছে। কিন্তু হট্টগোল করে সংসদ অচল করা মানে মূল্যবান সময় নষ্ট করা। তাতে নীতিপঙ্গুতার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তুলনায় সরকার-বিরোধী আলোচনার মাধ্যমে কার্যকরী মীমাংসা সূত্র বেরোতে পারে।

অতীতে ইউপিএ জমানায় বিজেপি যখন দিনের পর দিন সংসদ অচল করে রাখত, তখনও সমালোচনা ঝরে পড়েছে প্রণববাবুর মুখে। এখন তিনি কংগ্রেস-সহ বিরোধীদেরও ছাড় দিতে নারাজ। প্রণববাবুর ঘনিষ্ঠ এক কংগ্রেস নেতার মতে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় কমলনাথ, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিরা লোকসভা অচল করতেন। তখনও ঘরোয়া স্তরে তার বিরোধিতা করতেন প্রণববাবু। তাঁর মতে, দিনের পর দিন সংসদ অচল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পথ কংগ্রেসই দেখিয়েছে। গত দশ বছর কেন্দ্রে ইউপিএ জমানায় কংগ্রেসের দেখানো পথ অনুসরণ করেই বিজেপি সংসদ চলতে দেয়নি।

অনেকের মতে, প্রণবের এই সতর্কবার্তা বিরোধীরা কতটা শুনবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে অর্ডিন্যান্স জারি করার ব্যাপারে সরকার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। রাষ্ট্রপতির মন্তব্য সরকারকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। শুধু অর্ডিন্যান্স জারি করা নয়, সম্প্রতি দিল্লি আইআইটি-র অধিকর্তা অপসারণে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত নিয়েও ব্যাখ্যা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

কয়েকটি শিবিরের দাবি, সরকার-রাষ্ট্রপতির সম্পর্কে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তার আরও পরিবর্তন হয় কিনা সেও দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pranab mukhopadhyay central ordinance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE