Advertisement
E-Paper

আকাশযানের গেরোয় মমতা থেকে মোদী

আজ বাদে কাল যুদ্ধ। এ দিকে সব পক্ষের সেনাপতিকেই নিত্য ভোগাচ্ছে পুষ্পক রথ। গত কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তো আজ দেশের দু’প্রান্তে রাহুল গাঁধী এবং নরেন্দ্র মোদী। দু’দিন আগে আবার খোদ বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। আকাশযানের নানান গেরোয় কমবেশি নাজেহাল সকলেই। ভোট মরসুমে এক সভা থেকে অন্য সভায় চটজলদি পৌঁছতে হেলিকপ্টার বা চার্টার্ড বিমানেই ভরসা রাখেন নেতারা। যার জের টেনে চল হয়েছে ‘ভোট-পাখি’ কথাটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১১
বরেলীতে কপ্টার-সওয়ার নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

বরেলীতে কপ্টার-সওয়ার নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

আজ বাদে কাল যুদ্ধ। এ দিকে সব পক্ষের সেনাপতিকেই নিত্য ভোগাচ্ছে পুষ্পক রথ। গত কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তো আজ দেশের দু’প্রান্তে রাহুল গাঁধী এবং নরেন্দ্র মোদী। দু’দিন আগে আবার খোদ বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। আকাশযানের নানান গেরোয় কমবেশি নাজেহাল সকলেই।

ভোট মরসুমে এক সভা থেকে অন্য সভায় চটজলদি পৌঁছতে হেলিকপ্টার বা চার্টার্ড বিমানেই ভরসা রাখেন নেতারা। যার জের টেনে চল হয়েছে ‘ভোট-পাখি’ কথাটার। এমনকী আধুনিক বাংলা গানেরও বিষয়বস্তু হয়েছে নেতাদের হেলিকপ্টার। ভোটের বাজারে হেলিকপ্টার নিয়ে বিভ্রাটের ঘটনা অবশ্য একেবারে নতুন নয়। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে তিনটি বড় দলের কান্ডারি আকাশে উড়তে গিয়ে যেমন বিড়ম্বনার মুখে পড়লেন, তেমন নজির খুব সাম্প্রতিক কালে নেই। রাহুলকে আজ ভুগিয়েছে যান্ত্রিক গোলযোগ, মোদীকে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়েছে তাঁর ভাড়া করা বিমান ও কপ্টারের উড়ানের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। যা নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। গত কাল যেমন তুলেছিলেন মমতা। বিজেপি অবশ্য নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ করে বসেছে। আর রাজনাথের হেলিকপ্টার তো দিন দুয়েক আগে ভুল অক্ষাংশ-দ্রাঘিমার গেরোয় পড়ে অসমের জঙ্গলে পথই হারিয়ে ফেলেছিল।

হেলিকপ্টারে গত কাল পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন প্রান্তে তিনটি সভা করতে যাওয়ার কথা ছিল মমতার। গত সপ্তাহে তাঁর মালদহ সফরের জন্য মুম্বই থেকে ‘গ্লোবাল ভেকট্রা হেলিকর্প’ সংস্থার একটি কপ্টার ভাড়া করা হয়েছিল। গত কাল সেটিরই ফের আসার কথা ছিল, কিন্তু আসেনি। মমতা তখন রাজ্য সরকারের ভাড়া নেওয়া পবন হংসের কপ্টারে মেদিনীপুর যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি যেহেতু তৃণমূল নেত্রী হিসেবে প্রচারে যাচ্ছেন, তাই সরকারের ভাড়া নেওয়া কপ্টারে চড়লে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের আশঙ্কা ছিল। তাই শেষমেশ সড়কপথেই রওনা হন মমতা। কেশিয়াড়ির সভায় পৌঁছে ক্ষুব্ধ মমতা কপ্টার-বিভ্রাটের পিছনে চক্রান্তের অভিযোগ তোলেন। আজ ত্রিপুরা সফরে গিয়ে আগরতলা বিমানবন্দর থেকে শান্তির বাজারের সভাস্থলে সড়কপথেই গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সভাস্থলে পৌঁছেই তিনি বলেন, “গরিবের দল তৃণমূল। হেলিকপ্টারের ভাড়া দেওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। তাই গাড়িতে আসতে দেরি হল।” বস্তুত, হেলিকপ্টার না পাওয়ার জন্যই অসমের বরপেটায় মমতার আগামিকালের সভা বাতিল করে দিতে হয়েছে।

কপ্টার বড় বালাই। আজ ঝাড়খণ্ডের গুমলায় রাহুলের সভা বাতিল করে দিতে হয়েছে কপ্টার-বিভ্রাটের জেরে। গোড্ডা জেলার একটি সভায় বক্তৃতার পর হেলিকপ্টারে রাঁচি পৌঁছন রাহুল। সেখানেই কপ্টারের ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত তা মেরামত না হওয়ায় রাঁচি থেকেই বিশেষ বিমানে গয়া রওনা হয়ে যান রাহুল। রাহুল অবশ্য প্রকাশ্যে রেগেছেন বলে খবর নেই। স্থানীয় কেউ কেউ একটু গোসা করেছেন।

কিন্তু মোদী একেবারে ফোঁস করে উঠেছেন। উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে আজ সভা ছিল তাঁর। দিল্লি থেকে চার্টার্ড বিমানে বরেলীর সামরিক বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে সভাস্থলে যাওয়ার কথা ছিল মোদীর। বিজেপির অভিযোগ, মোদী সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দিল্লি বিমানবন্দরে বসে ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিমানের ওড়ার অনুমতি পেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। বরেলী থেকেও কপ্টার ওড়ার অনুমতি দিতেও দেরি করা হয় ঘণ্টাখানেক।

মোদী সভায় পৌঁছেই জনতার কাছে দেরির জন্য ক্ষমা চান। অভিযোগ করেন, ইচ্ছে করে তাঁর উড়ানের অনুমতি দিতে দেরি করা হয়েছে। ও দিকে, দিল্লিতে বিজেপি নেতারা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, প্রতি দিন মোদী গড়ে ৪-৫ টি করে সভা করছেন। ফলে একটিতে দেরি হলে সবক’টিতে দেরি হবে। তাই মোদীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন তাঁরা। এমনকী এ ক্ষেত্রে মোদী পাশে পান তাঁর বিরোধী শিবিরের শিবরাজ সিংহ চৌহানকেও।

বিমান মন্ত্রক গোটা ঘটনার দায় ঠেলেছে যে সংস্থার থেকে মোদীরা বিমান নিয়েছিলেন, তার উপরে। তাদের বক্তব্য, ওই সংস্থাই উড়ানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে দেরি করেছিল। কিন্তু বিজেপির দাবি, কলকাতা বা গোয়াতেও মোদীর কপ্টার নামার অনুমতি প্রথমে দেওয়া হয়নি। রাজ্য নেতাদের চাপে শেষ মুহূর্তে অনুমতি মেলে। বিশেষজ্ঞদের অবশ্য বক্তব্য, কলকাতার ব্রিগেড বা গোয়ায় মোদীর সভাস্থল যথাক্রমে সেনা ও নৌসেনার এলাকা। সেখানে হেলিকপ্টার নামাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি লাগে। এমনিতেও চাটার্ড বিমান বা কপ্টারের যাত্রী-তালিকা আগে থেকে জমা করতে হয়। আর সেই তালিকায় মোদীর মতো কারও নাম থাকলে তো নিরাপত্তার প্রয়োজনেই গন্তব্যস্থানে বহু আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে।

তবে বিজেপি নেতারা ঘরোয়া স্তরে বলছেন, মোদীর ব্যাপারটা না হয় অনুমতি দিতে দেরির ঘটনা। রাজনাথের তো প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়েছিল!

রবিবার সকালে রাজনাথ চার্টার্ড বিমানে পৌঁছন শিলচর বিমানবন্দরে। সেখান থেকে রাজ্য কমিটির ভাড়া করা হেলিকপ্টারে করিমগঞ্জ, কার্বি আংলং জেলার ডিফু এবং তিনিসুকিয়ার মাকুম-এ যাওয়ার কথা ছিল বিজেপি সভাপতির। প্রথম দুটি সভা নির্বিঘ্নে হয়। বিপদ বাধে ডিফু থেকে মাকুম যাওয়ার পথে। রাজনাথের উড়ানসঙ্গী, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজদীপ রায় জানান, নির্ধারিত অক্ষাংশ-দ্রাঘিমা ২৭ ডিগ্রি ২৮ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড উত্তর এবং ৯৫ ডিগ্রি ৩৯ মিনিট ৫৯.৯ সেকেন্ড পূর্বে পৌঁছে দেখা যায়, নীচে ঘন জঙ্গল। বসতির চিহ্ন নেই। দু-তিন বার চক্কর কেটে বোঝা যায়, সভার অবস্থানটাই ভুল পাঠানো হয়েছে।

রাজদীপের কথায়, “এ-ওর মুখের দিকে দেখলাম। মুহূর্তে মনে পড়ে গেল, প্রাক্তন স্পিকার বালযোগী, রাজশেখর রেড্ডিদের নাম। এঁদের প্রাণ গিয়েছিল কপ্টার দুর্ঘটনায়। ভাগ্যিস, মনে আসেনি মালয়েশিয়ার সেই বিমানটার কথা!” পাইলট অবসরপ্রাপ্ত উইং কম্যান্ডার হেমন্ত সচদেব সভা বাদ দিয়ে ডিব্রুগড়ের মোহনবাড়ি বিমানবন্দরে নামতে চান। কিন্তু কপ্টারে পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকায় রাজনাথের অনুরোধে মোবাইলে ধরা হয় মাকুমের সভার দায়িত্বে থাকা নেতা সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যকে। ইতিমধ্যে একটি রেললাইন দেখতে পেয়ে পাইলট ওই ট্র্যাক ধরে ধরে এগিয়ে পেয়ে যান তিনিসুকিয়া রেলস্টেশন। সেখান থেকে সিদ্ধার্থবাবুর নির্দেশ মতো পূর্ব দিকের লাইন ধরে গিয়ে মেলে মাকুমের সভাস্থল।

কী ভাবে এমন ভুল হল? কাছাড়ের জেলাশাসক গোকুলমোহন হাজরিকার বক্তব্য, কপ্টার যেখানে নামবে, সেখানকার জেলাশাসকেরই দায়িত্ব অক্ষাংশ-দ্রাঘিমা জানানো। তা মেনেও নিচ্ছেন তিনিসুকিয়ার জেলাশাসক পুরু গুপ্ত। তিনি জানান, বিজেপির তরফে সভার অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তিনি সেটি পাঠান পুলিশ সুপারের কাছে। এসপি-র অফিস থেকে তথ্য আসার পর তা ফের যাচাই করেই পাঠানো হয়েছিল বিজেপিকে। এর পরেও এমন ভুল ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেই মন্তব্য করেন তিনি। কংগ্রেস অবশ্য কপ্টার-বিতর্কে তেমন আমল দিচ্ছে না। তাদের বক্তব্য, ‘এমন হয়েই থাকে।’

bareli copter modi mamata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy