আস্ত একটা ট্রাক পুরোপুরি গায়েব। তা নিয়েই টানাপড়েন শুরু হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ফল ক্ষতি হচ্ছে কোটি-কোটি টাকার রাজস্ব।
বাংলাদেশের নথি বলছে, মাল খালাস করে ট্রাক ফিরে গিয়েছে। ভারত বলছে, মাল নিয়ে ঢুকেছে সত্যি, কিন্তু তার পর সে ট্রাক আর দেশে ফিরে আসেনি। খোঁজ নেই চালকেরও। প্রতিবাদে সোমবার পেট্রাপোল সীমান্তে পরিবহণ বন্ধ করে দেয় আমদানি-রফতানিতে যুক্ত গোটা দশেক ভারতীয় সংগঠন। একটি চোরাই-চক্র এই ধরনের কাজ করছে অভিযোগ তুলে সংগঠনের সদস্যরা হুমকি দিয়েছে, ট্রাকের হদিস না মিললে এর পরে পেট্রাপোল, ঘোজাডাঙা, হিলি, চ্যাংড়াবান্ধার মতো ভারত-বাংলাদেশের সমস্ত বন্দর দিয়েই আমদানি-রফতানি অনির্দিষ্ট কাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুল্ক দফতরের হিসেব, এক দিন বন্ধের জেরে শুধু পেট্রাপোল সীমান্তেই প্রায় ৫০ কোটি টাকার আমদানি-রফতানি ও ২ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। শুল্ক দফতরের কর্তারা বলছেন, অবস্থা এমন চললে দু’দেশের বাণিজ্য বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। গোটা ঘটনাটি জানানো হয়েছে বাংলাদেশ হাই কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে। ট্রাক চুরি চক্রের খোঁজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর।
অ্যাসিড ও কিছু রাসায়নিক বোঝাই একটি ট্রাককে নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক। পেট্রাপোল ও বেনাপোল দুই শুল্ক দফতরের নথিতে দেখা যাচ্ছে, ইনভয়েস নম্বর-১৩৫ এর মাল বোঝাই ডব্লিউ বি ২৩ এ, ৯৬৭৫ নম্বরের ট্রাকটি ১১ মার্চ ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকে। বাংলাদেশের নথিতে দেখা যাচ্ছে, ১২ মার্চই ট্রাকটি ৩২ নম্বর ‘শেডে’ মাল খালাস করে। নিয়ম হল, খালাস হলেই ট্রাক ফিরে যাবে দেশে। কিন্তু ভারতীয় শুল্ক দফতরের নথি বলছে, ১২ তারিখ কেন, তার পরেও আর ট্রাকটি ফেরেনি। অথচ বাংলাদেশ শুল্ক দফতরের দাবি, তাঁদের নথি অনুযায়ী ট্রাকটি ১৮ তারিখ ফিরে গিয়েছে।
পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি কী হয়েছে তা বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছি।” খোঁজ নেই ট্রাক চালক ফিরোজ মণ্ডলেরও। ট্রাকটির মালিক প্রদীপ দেবনাথ বলেন, “গাড়ি আর তার চালক ফিরে না আসায় আমি সীমান্তের বিভিন্ন দফতরে ছুটোছুটি করি। কিন্তু খোঁজ মেলেনি।” সোমবার শুভেনবাবুর কাছে স্মারকলিপিও দেন ধর্মঘটে সামিল সংগঠনের সদস্যরা।
বনগাঁ মোটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ দাস বলেন, “আস্ত একটা ট্রাক ও চালক যদি গায়েব হয়ে যায়, তা হলে আর নিরাপত্তা কোথায়? একটা চক্র কাজ করছে। নৈশ প্রহরীরা তোলা আদায় করছে।” দিলীপবাবু বলেন, “আমরা ১০টি সংগঠন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ট্রাক ফেরত না পেলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমস্ত সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে দেব।”
শুল্ক দফতরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “দেদার মাল চুরি চলছে। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশ সরকার বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ঘটনা ঘটবে।” কার্তিকবাবু বলেন, “খোদ সীমান্ত দিয়েই এমন চুরি-ডাকাতি চক্রে বাংলাদেশের ট্রাক চালকদের একাংশ যুক্ত।”
তদন্তকারী অফিসারেরাও সে রকমই মনে করছেন। নিষিদ্ধ মাদক-সহ বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন যশোর জেলে রয়েছে ট্রাকটির চালক ফিরোজ। তদন্তে জানা গিয়েছে, বনগাঁর পাশাপাশি বাংলাদেশের শার্সার কাগজপুকুরেও বাড়ি রয়েছে ফিরোজের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy