Advertisement
E-Paper

গতির স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছুটছেন মোদী

দেশবাসীকে বুলেট গতি উপহার দিতে চান তিনি। বুলেট ট্রেনের মাধ্যমে। বুলেট! সেই ট্রেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দৌড়চ্ছে ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনিক সক্রিয়তা। সরকার গড়া হয়নি। মন্ত্রী কে হবেন, জানা নেই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০৩:২৪

দেশবাসীকে বুলেট গতি উপহার দিতে চান তিনি। বুলেট ট্রেনের মাধ্যমে।

বুলেট!

সেই ট্রেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দৌড়চ্ছে ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনিক সক্রিয়তা। সরকার গড়া হয়নি। মন্ত্রী কে হবেন, জানা নেই। কিন্তু মোদীর নির্দেশে বুলেট ট্রেনের হাল-হকিকত জানতে বিদেশ ছুটলেন আমলারা। যাতে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পৌঁছে যায় বুলেট ট্রেনের নীল নকশা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অটলবিহারী বাজপেয়ী গড়েছিলেন সোনালি চতুর্ভুজ। সে ভাবেই মোদী বুলেট ট্রেন দিয়ে জুড়তে চান দেশের চার প্রান্তকে।

আসলে চিন, জাপান বা ফ্রান্সের মতো এ দেশেও বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন বহু দিনের। সেটিই এ বার বাস্তব করতে চাইছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা মোদী। প্রচারেও এই বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তাই কে কবে মন্ত্রী হবেন, তার জন্য বিষয়টি ফেলে রাখতে নারাজ মোদী।

এখন হাই স্পিড রেল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সতীশ অগ্নিহোত্রী। মন্ত্রকের খবর, কয়েক দিন আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে মোদীর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেন। তার পরেই মোদীর নির্দেশে বুলেট ট্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চলতি সপ্তাহে ফ্রান্সে উড়ে গিয়েছেন অগ্নিহোত্রী। সঙ্গে গিয়েছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দ্র কুমার এবং রেল বোর্ডের অধিকর্তা (পরিকাঠামো) গিরীশ পিল্লাই।

বিদায়ী ইউপিএ সরকারের আমলেই বুলেট ট্রেন চালানো নিয়ে ভারত-ফ্রান্সের মধ্যে মউ স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রেলের কর্তারা ফ্রান্সে গিয়ে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে প্রাথমিক রিপোর্ট বানিয়ে তা মোদীকে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে মন্ত্রক।

বহু দিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে ইতিমধ্যে একাধিক সমীক্ষা হয়েছে। কলকাতা-দিল্লি ভায়া পটনা, আমদাবাদ-মুম্বই রুটে বুলেট ট্রেন চললে লাভের মুখ দেখা যেতে পারে বলেও উঠে এসেছে সমীক্ষায়। কিন্তু প্রকল্প রূপায়ণে প্রয়োজন বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ। কিন্তু একে শূন্য কোষাগার, তার উপর ইউপিএ সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব। ফলে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল না বিদেশি সংস্থাগুলি। জাপান এগিয়ে এসেও পিছিয়ে যায়।

কিন্তু এ বার মোদী বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসায় বুলেট ট্রেন ছুটবে বলেই আশা করছে সব পক্ষ। এর আগে মোদী জাপান ও চিন সফরে গিয়েও এ দেশে বুলেট ট্রেন চালানো নিয়ে বৈঠক সেরে এসেছিলেন।

তবে ভারতে বুলেট ট্রেন হলে তা প্রথম চলবে মুম্বই-আমদাবাদের মধ্যে। রেলমন্ত্রকের কথায়, কারণ, প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মুম্বই-আমদাবাদ রুটে বুলেট ট্রেন চললে বিনিয়োগকারীদের অর্থ উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে মোদীর এই স্বপ্নের পথে কাঁটাও রয়েছে। কারণ মোদী চাইলেও মন্ত্রকের একটি বড় অংশ নীতিগত ভাবে বুলেট ট্রেনের বিপক্ষে। তাদের বিরোধিতার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, বুলেট ট্রেনের পরিকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থ কোথা থেকে আসবে, উঠছে সে প্রশ্ন? স্রেফ মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেনের পরিকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজন প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটার পিছু একশো কোটির বেশি। বিদেশি সংস্থারা বিনিয়োগে আগ্রহী। তাই এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের মতো ভর্তুকি দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে টিকিটের যা দাম হবে, তা মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে থাকবে। শুধু ব্যবসায়ী বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মাধ্যমে ওই বিপুল অর্থ উঠে আসবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বুলেট ট্রেনের মূল শর্ত গতি। এ জন্য প্রয়োজন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন নির্দিষ্ট লাইন। রেলের ভাষায় ‘ডেডিকেটেড এলিভেটেড করিডর’। ওই নতুন লাইন পাততে যে জমির প্রয়োজন, তা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

আর ভাড়া? সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, পরিকাঠামোগত খরচ মেটাতে হবে যাত্রীদেরই। তবে অবশ্যই বিমানের ভাড়ার থেকে কম রাখা হবে বুলেট ট্রেনের ভাড়া। কলকাতা থেকে দিল্লির রাজধানীতে বাতানুকূল প্রথম শ্রেণির ভাড়া ৪,২৬৫ টাকা। বিমানেও গড়ে পড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। মন্ত্রকের মতে, ওই দু’টি ভাড়ার মাঝামাঝি রাখা হবে বুলেট ভাড়াকে। তবেই যাত্রী হবে। নচেৎ নয়।

এ সব জট কাটিয়েই বুলেট ট্রেন ছোটাতে ছুটছেন মোদী।

anamitra sengupta narendra modi bullet train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy