Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঘাটতিতে রাশ, ভর্তুকি ছাঁটার ইঙ্গিত

দুই অরবিন্দ বলছেন, রাজকোষ ঘাটতির কথা না ভেবে পরিকাঠামোয় খরচ হোক। তাতেই অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বলছেন, পরিকাঠামোয় খরচ হবে। কিন্তু ঘাটতিতে লাগাম দিতেই হবে। সেই সঙ্গে কমানো হবে ভর্তুকির বহর। এমনকী কেন্দ্র যে খাদ্য ও সারেও ভর্তুকি কমাতে চাইছে, আজ তারও ইঙ্গিত মিলেছে।

ডাভোসে অরুণ জেটলি। বৃহস্পতিবার। ছবি:পিটিআই।

ডাভোসে অরুণ জেটলি। বৃহস্পতিবার। ছবি:পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

দুই অরবিন্দ বলছেন, রাজকোষ ঘাটতির কথা না ভেবে পরিকাঠামোয় খরচ হোক। তাতেই অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বলছেন, পরিকাঠামোয় খরচ হবে। কিন্তু ঘাটতিতে লাগাম দিতেই হবে। সেই সঙ্গে কমানো হবে ভর্তুকির বহর। এমনকী কেন্দ্র যে খাদ্য ও সারেও ভর্তুকি কমাতে চাইছে, আজ তারও ইঙ্গিত মিলেছে।

দুই অরবিন্দ অর্থাৎ অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম এবং অরবিন্দ পানাগাড়িয়া। প্রথম জন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। দ্বিতীয় জন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তৈরি নীতি আয়োগের ভাইস-চেয়ারম্যান। দু’জনেরই বক্তব্য, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আপাতত শিকেয় তোলা থাক আর্থিক শৃঙ্খলা। বাজেটের আগে বেশ কয়েকটি রাজ্যও দাবি তুলেছে, তাদেরও ইচ্ছে মতো ব্যয় করতে দেওয়া হোক। কিন্তু জেটলি আজ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ও-পথে হাঁটবেন না। এ বছর ৪.১ শতাংশের ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করাই অর্থ মন্ত্রকের কাছে যথেষ্ট কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেটলির বক্তব্য, এতখানি ঘাটতি মেনে নেওয়া যায় না। রাজকোষ ঘাটতিকে ধাপে ধাপে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার দিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি বাজেট তৈরি করবেন।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ হবে। আজ সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এ জেটলির বক্তব্যে বাজেট সম্পর্কে তিনটি ইঙ্গিত মিলেছে। এক, যাঁদের একান্ত প্রয়োজন, শুধু তাঁদেরই ভর্তুকি দেওয়া হবে। গরিব মানুষের জন্য ভর্তুকি একেবারে তুলে দেওয়া হবে না। দুই, বাজেটে বিশেষ কোনও ছাড় দেওয়া সম্ভব বলে অর্থমন্ত্রী মনে করছেন না। তিন, কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনও আগ্রাসী মনোভাব তিনি নিতে চান না।

আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ায় এমনিতেই জ্বালানিতে ভর্তুকির বহর যথেষ্ট কমে এসেছে। আজ দাভোসে জেটলি জানিয়েছেন, মোদী সরকার ভর্তুকির পরিমাণকে মোট জাতীয় আয়ের ২ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে চায়। ভর্তুকির বহর কমিয়ে সেই অর্থ রেল, সড়ক, সেতুর মতো পরিকাঠামো তৈরিতে ব্যয় করা হবে। তবে যে দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনও দারিদ্র সীমার নীচে বাস করছেন, সেখানে ভর্তুকি তুলে দেওয়া যায় না।

কী ভাবে ভর্তুকি কমাতে চাইছে মোদী সরকার? খাদ্য নিগমের সংস্কার করার জন্য বিজেপি সাংসদ শান্তা কুমারের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। আজ সেই কমিটি সুপারিশ করেছে, খাদ্য-সুরক্ষার আওতায় দেশের জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশকে নিয়ে আসার কোনও প্রয়োজন নেই। তার বদলে ৪০ শতাংশ মানুষকে খাদ্য-সুরক্ষা দেওয়া হোক, যাঁদের সত্যিই ভর্তুকিতে খাদ্যশস্য কেনা ছাড়া উপায় নেই। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ৩০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি কমবে। একই ভাবে সারের দাম সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দিয়ে ভর্তুকি সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। তার ফলেও বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার বোঝা কমবে বলে ওই কমিটির মত।

কেন রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম দেওয়ায় এত গুরুত্ব দিচ্ছেন জেটলি?

কারণ জেটলি রেটিং এজেন্সিগুলি ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নেবে। তিনি মনে করেন, ভারতের অর্থনীতিতে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ ছোঁয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ৩০ বছর পরে ভারতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এমন এক জন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, যিনি ‘সিদ্ধান্ত নিতে পারেন’। কিন্তু এখনও দেশের বিনিয়োগকারীরাই লগ্নি করছেন না।

জেটলির দাবি, সুদের হার কমলেই লগ্নি শুরু হবে।

কালো টাকার তথ্য

সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের কালো টাকা নিয়ে নয়াদিল্লির কাছে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণ রয়েছে বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সুইৎজারল্যান্ডের ডাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন জেটলি। কালো টাকা নিয়ে সুইস অর্থমন্ত্রী ইভলিন উইডমার-শুলমফের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। জেটলি জানিয়েছেন, যে সব ক্ষেত্রে ভারতের কাছে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণ রয়েছে সে সব ক্ষেত্রে দ্রুত তথ্য দিতে সুইৎজারল্যান্ড রাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arun jaitley Davos Shining India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE