Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ছ’দিন শ্মশানে পড়ে, মৃত্যু ক্যানসার আক্রান্ত প্রৌঢ়ের

অবশেষে মৃত্যু এল আশীর্বাদ হয়েই! ক্যানসারে আক্রান্ত এক মুমূর্ষুর জন্য তো বটেই। স্বস্তি ফিরল তাঁর পরিবার, পুলিশ ও প্রশাসনের। চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে মৃত্যুপথযাত্রী ক্ষিরো বরাকে শ্মশানে ফেলে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে দীপেন। ক্যানসারের কোপে ওই প্রৌঢ়ের শরীর ঢেকেছিল পোকায়। দুর্গন্ধে তাঁর ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেন না কেউ। ছ’দিন ধরে শ্মশানেই পড়েছিলেন অসহায় ক্ষিরোবাবু।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

অবশেষে মৃত্যু এল আশীর্বাদ হয়েই!

ক্যানসারে আক্রান্ত এক মুমূর্ষুর জন্য তো বটেই। স্বস্তি ফিরল তাঁর পরিবার, পুলিশ ও প্রশাসনের।

চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে মৃত্যুপথযাত্রী ক্ষিরো বরাকে শ্মশানে ফেলে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে দীপেন। ক্যানসারের কোপে ওই প্রৌঢ়ের শরীর ঢেকেছিল পোকায়। দুর্গন্ধে তাঁর ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেন না কেউ। ছ’দিন ধরে শ্মশানেই পড়েছিলেন অসহায় ক্ষিরোবাবু। মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য সেবাযত্ন পেলেও, আজ সকালে তাঁর হৃদ্স্পন্দন বন্ধ হয়। অসমের নগাঁও জেলার রহা এলাকার ঘটনা।

ছাত্র সংগঠন আসুর নেতা মৃদুল হাজরিকা জানান, জেলাসদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ছেলে, বৌমার সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন ক্ষিরোবাবু। হোটেলে রাঁধুনির কাজ করতেন তিনি। ছেলে দীপেন বাস-কন্ডাক্টর। বছর তিনেক আগে ক্ষিরোবাবুর গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। কিন্তু, চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে পারেনি দরিদ্র পরিবারটি। রোগ ক্রমে ছড়াতে থাকে। তাঁর গলায় ঘা হয়ে যায়। পোকা ধরে শয্যাশায়ী ক্ষিরোবাবুর শরীরে। ঘর ছাড়িয়ে এলাকাতেও ছড়ায় দুর্গন্ধ।

রহা থানা সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে বাড়িওয়ালা উপেন পাতর দীপেনকে জানিয়ে দেন, এই অবস্থায় ক্ষিরোবাবুকে তাঁর বাড়িতে রাখা যাবে না। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বাবাকে রহা শ্মশানে নিয়ে যায় দীপেন। সেখানে তাঁকে ফেলে চলে যান।

কথা বলার শক্তি ছিল না বছর ষাটেকের ক্ষিরোবাবুর। দুর্গন্ধে শ্মশানে যাওয়া মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ওষুধ-পথ্য ছাড়াই সেখানে পড়ে ছিলেন অসহায় প্রৌঢ়। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুকামনা করলেও, এত দিন তা আসছিল না।

মৃদুলবাবু জানান, গত কাল আসুর কয়েক জন সদস্য তাঁকে ওই অবস্থায় শ্মশানে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। বিষয়টি জানানো হয় স্বাস্থ্য বিভাগেও। কিন্তু স্বাস্থ্য বা পুলিশকর্মী কেউ-ই ক্ষিরোবাবুর কাছে যেতে রাজি ছিলেন না।

জেলাশাসক মোনালিসা গোস্বামী জানান, আত্মীয় ছাড়া মৃত্যুপথযাত্রী এমন রোগীর দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগ নিতে চায়নি। প্রশাসনের তরফে জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ডেকে পাঠানো হয় ক্ষিরোবাবুর ছেলে, বাড়িওয়ালাকে। পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, এই অবস্থায় চিকিৎসা করেও লাভ নেই। তাঁর শরীরে পোকা ছড়িয়ে গিয়েছিল। জেলাশাসকের কথায়, “অবহেলা না করে ক্ষিরোবাবুকে আগেই সরকারি হাসপাতালের ভর্তি করা হলে, তাঁকে এই অমানবিক পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।”

পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গন্ধ ও সংক্রমণের জন্য ক্ষিরোবাবুকে নগাঁও সিভিল হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি করা যায়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে ছুঁয়েও দেখেননি। খবর পেয়ে গুয়াহাটির বি বরুয়া ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ও হাসপাতালের তরফে নগাঁওয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তার আগেই এ দিন ভোরে মারা যান ক্ষিরোবাবু।

আসুর সদস্যরাই তাঁর সৎকারের ব্যবস্থা করেন। মৃদুলবাবু শ্মশান থেকে ফোনে বলেন, “এই ঘটনা সমাজ, পুলিশ বা প্রশাসনের অমানবিক চেহারাটা ফের তুলে ধরল। বেঁচে থাকতে অসুস্থ লোকটি মানবিক ব্যবহার পাননি। অন্তত, সৎকারের সময় তিনি যেন মানুষের মর্যাদাটুকু পান, আমরা সেই চেষ্টাই করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajibakhyo raxit guahati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE