Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ছুরি নয় ফুলই তো দেখিয়েছি, বলছেন মোদী

অভিযোগ আগেও করেছে বিরোধীরা। এ বার নির্বাচন কমিশনই ভোটের বিধি ভাঙার অভিযোগে পদক্ষেপ করল নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। তবে এতে মোটেই বিড়ম্বিত নন তিনি। ভোট দিয়ে বেরিয়ে বুথ চত্বরে আঙুলের কালি তো অনেকেই দেখান। তারকা বা ওজনদার ভোটার হলে ঝাঁকে ঝাঁকে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ওঠে সে ছবি। টিভিতে ফলাও করে প্রচার হয় তা। ছাপা হয় খবরের কাগজে। আজ ভোট দিয়ে বেরিয়ে আঙুলের কালি দেখিয়েছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীও। তবে সেই আঙুলে জুড়ে নিয়েছিলেন দলের প্রতীক পদ্মের একটি খুদে কাট-আউট।

ভোট দেওয়ার পরে এই নিজস্বী-ই টুইটারে পোস্ট করেন মোদী।

ভোট দেওয়ার পরে এই নিজস্বী-ই টুইটারে পোস্ট করেন মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:২৬
Share: Save:

অভিযোগ আগেও করেছে বিরোধীরা। এ বার নির্বাচন কমিশনই ভোটের বিধি ভাঙার অভিযোগে পদক্ষেপ করল নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। তবে এতে মোটেই বিড়ম্বিত নন তিনি।

ভোট দিয়ে বেরিয়ে বুথ চত্বরে আঙুলের কালি তো অনেকেই দেখান। তারকা বা ওজনদার ভোটার হলে ঝাঁকে ঝাঁকে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ওঠে সে ছবি। টিভিতে ফলাও করে প্রচার হয় তা। ছাপা হয় খবরের কাগজে। আজ ভোট দিয়ে বেরিয়ে আঙুলের কালি দেখিয়েছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীও। তবে সেই আঙুলে জুড়ে নিয়েছিলেন দলের প্রতীক পদ্মের একটি খুদে কাট-আউট। উপস্থিত সাংবাদিকরা তো বটেই, নিজেও নিজের সেই ছবি তোলেন মোদী। বক্তব্য রাখার সময় বেশ কয়েক বার হাতে ধরা পদ্ম তুলে ধরেন তিনি। এখন নেট-জমানায় স্যেশাল নেটওয়ার্কের রমরমা। মোদী সেই ‘নিজস্বী (সেল্ফি)’ পোস্ট করেন টুইটারেও। যা নিয়ে পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল চর্চা শুরু হয়ে যায়। এই বিতর্কে সব চেয়ে বেশি টুইটের রেকর্ডও তৈরি হয়েছে।

ইন্টারনেটে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়তেই সরব হয় বিরোধী কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি। কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই গোটা পর্বের ভিডিও হাতে এসেছে কমিশনের। তা খতিয়ে দেখার পরেই মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত প্রশাসনকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় তারা। কমিশন জানিয়েছে, দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে। উপ নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসি আজ জানান, “গুজরাত সরকারও এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছে দিল্লিতে। কমিশন আজ দিনভর নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কাল এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

মোদী নিজে কী বলছেন এ ব্যাপারে? বিরোধীদের সমালোচনার মুখে হালকা চালে তাঁর জবাব, “কেউ যদি ছুরি হাতে হুমকি দেয় তবে তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। আমি তো শুধু প্রত্যেককে একটা পদ্মফুল দেখিয়েছি!” মোদীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশন যে ব্যবস্থা নিতে পারে, সেটা মোদীর অজানা কিছু নয়। তবু জেনেবুঝেই ভোটের দিনে ভোটারদের প্রভাবিত করতেই ওই কাজ করেছেন।

তবে এত কিছুর মধ্যেই আজ যে ভাবে গোটা রাজ্যে গত লোকসভার তুলনায় ভোটদানের হার ১৫ শতাংশ বেড়েছে তাতে দিনের শেষে স্বস্তিতে বিজেপি শিবির। দলের দাবি বাড়তি ভোট যাবে তাদের ঘরেই। বারাণসী ছাড়াও রাজ্যের বডোদরা কেন্দ্র থেকেও নির্বাচন লড়ছেন মোদী। সেখানে ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। বডোদরায় মোদীর জয় সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে দল। ভোট দিয়ে এসে উৎসাহী জনতার উদ্দেশে মোদী আজ বলেন, “এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং ভোটারদের মন বিশ্লেষণ করে আমি বলতে পারি মা-ছেলের সরকারকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। একটি শক্তিশালী সরকার ক্ষমতায় আসবে।” তবে এখনও দু’টি পর্বের নির্বাচন বাকি। যার মধ্যে নির্বাচন বাকি রয়েছে উত্তরপ্রদেশের ৩৩টি আসনে। নির্বাচন বাকি রয়েছে মোদীর দ্বিতীয় আসন বারাণসীতেও। ফলে আজ নির্বাচন বিধি উপেক্ষা করায় আগামী দিনে তাঁর প্রচারে কমিশন কোনও বাধানিষেধ করে কিনা তা নিয়ে চোরা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দলের মধ্যে।

বিজেপি শিবিরের দাবি, যদি কমিশনের কোনও নিয়ম ভঙ্গ হয়ে থাকে তা হলে তা মোদীর অজান্তেই হয়েছে। দিল্লিতে বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি বলেন, “ওখানে আগে থেকে কোনও সাংবাদিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল না।” সাধারণত ভোট দেওয়ার পরে প্রথম সারির নেতাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। মোদীর বিরুদ্ধে আপত্তি ওঠার মূল কারণ হল, ভোট চলাকালীন দলের প্রতীক হাতে নিয়ে তিনি সাংবাদিক বৈঠকে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে লেখির দাবি, “নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তার সিদ্ধান্ত আমরা মেনে চলব।” কংগ্রেস অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, “মোদী তো বারবার নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। ভোটের প্রথম দিন ওঁরা নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছিলেন। মোদী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ভোটের দিনই। ওঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত নির্বাচন কমিশনের।” একই যুক্তিতে কমিশনের দ্বারস্থ হয় আপ-ও।

রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে অভিযোগ আসার পরেই সক্রিয় হয় কমিশন। নির্বাচন কমিশন গুজরাতের মুখ্য সচিবকে জানায়, গুজরাত-সহ দেশের অন্যত্র যে দিন ভোট চলছে, সেই দিনই এ ভাবে জনতার উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৬ (১এ) এবং ১২৬ (১বি) ধারা লঙ্ঘন করেছেন মোদী। তাই মোদী-সহ যাঁরা ওই মিটিং-এর সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। তার পরেই আমদাবাদ অপরাধ দমন শাখা মোদীর বিরুদ্ধে এফআইআর করে।

পাঁজি দেখে ভোট দিলেন মোদীর স্ত্রী
সংবাদ সংস্থা • মেহসানা

দলীয় প্রতীক ও কালি লাগানো আঙুল দেখিয়ে সেলফি টুইট করা মাত্র নরেন্দ্র মোদী যখন বিতর্কের শীর্ষে, সংবাদমাধ্যমকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে নিজের মতো ভোট দিয়ে এলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর স্ত্রী যশোদাবেন। আমদাবাদে স্বামীর নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে মেহসানা জেলার উঞ্ঝায়। রীতিমতো পাঁজিপুঁথি দেখে ভোট দিলেন তিনি। তার আগে আবার স্বামীর সাফল্য কামনা করে পুজোও দিয়েছেন, জানালেন যশোদাবেনের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এই লোকসভা ভোটেই প্রথম বার মনোনয়নপত্রে যশোদাবেনকে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মোদী। তার পর থেকেই সংবাদপত্রে ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর নাম। কিন্তু যত বারই সাংবাদিকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন, খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

ভোট দিতে বুথে হাজির যশোদাবেন। গুজরাতের উঞ্ঝায়। ছবি: এ এফ পি।

যশোদাবেনের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তিনি বাড়িতে নেই, তীর্থে গিয়েছেন। পরে কিছু সংবাদপত্র দাবি করে, মোদী তাঁকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করামাত্রই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে যশোদাবেনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। ঘোষণা করা হয়, তিনি চারধাম যাত্রায় গিয়েছেন। এতেও বিতর্ক থেকে অবশ্য রক্ষা পাননি মোদী। বিরোধীদের বক্তব্য, বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মেয়েদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। অথচ নিজের স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেন না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা যশোদাবেনের সে সব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। দুপুর ১২টা বেজে ৩৯ মিনিটে উঞ্ঝার বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন। তাঁর ভাই অশোক মোদী ফোনে বললেন, “দিদি মন্দিরেও গিয়েছিলেন। দেশের উন্নয়ন চেয়ে পুজো দিয়েছেন। প্রার্থনা করেছেন, যাতে বিজেপি ৩০০ আসনে যেতে। আর মোদীজি যেন, বিশাল ব্যবধানে জেতেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi modi's wife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE