Advertisement
১১ মে ২০২৪

জ্যোতিষ ঘিরে বিতর্কে ত্রিপুরার বিজ্ঞানমন্ত্রী

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রীর জ্যোতিষে ‘ভরসা’ নিয়ে গোল বেধেছে ত্রিপুরায়। গোল বেধেছে খোদ সিপিএমের মধ্যেই। মন্ত্রীর বক্তব্যের এবং ভূমিকার প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন স্বয়ং দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর। প্রতিবাদে নেমেছে বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থাও।

বিজিতা নাথ।—নিজস্ব চিত্র।

বিজিতা নাথ।—নিজস্ব চিত্র।

বাপি রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রীর জ্যোতিষে ‘ভরসা’ নিয়ে গোল বেধেছে ত্রিপুরায়। গোল বেধেছে খোদ সিপিএমের মধ্যেই। মন্ত্রীর বক্তব্যের এবং ভূমিকার প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন স্বয়ং দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর। প্রতিবাদে নেমেছে বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থাও।

গত ৩০ নভেম্বর অল ত্রিপুরা অ্যাস্ট্রোলজার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি সম্মেলন ছিল। সেই সম্মেলন উপলক্ষ্যে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে জ্যোতিষ সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখা ছাপা হয়। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু সেই স্মরণিকার শুরুতেই রাজ্যের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রী বিজিতা নাথের একটি শুভেচ্ছা-বার্তাকে ঘিরে বিতর্কের শুরু। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি মার্কসবাদী পার্টিটির দলীয় নীতিতে কোনও বড়সড় পরিবর্তন হল? তা না হলে মন্ত্রী জ্যোতিষীদের ‘সাফল্য’ কামনা করেন কী করে? প্রশ্ন উঠেছে, মন্ত্রী কি অ্যাস্ট্রোনমি-র সঙ্গে অ্যাস্ট্রোলজি-কে গুলিয়ে ফেলেছেন?

মন্ত্রী বিজিতা নাথের অবশ্য দাবি, এই ফারাক তিনি ভাল মতোই জানেন। তবে কেন জ্যোতিষীদের ‘সংস্থার সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা’ করলেন? বিজিতা দেবীর কথায়, “ওঁরা সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তা আমি প্রত্যাখ্যান করি। স্মরণিকার জন্য শুভেচ্ছে বার্তা চান। শেষ পর্যন্ত আমি তা দিই। জ্যোতিষে আমি বিশ্বাস না করলেও বহু মানুষ করেন। জ্যোতিষীদের কাছে মানুূষ আসেন। আমি ওই সংস্থার কাছে দাবি করেছি, জ্যোতিষের বাইরে এসে ওই সব মানুষকে সামাজিক অবক্ষয় থেকে দূরে সরিয়ে আনুন।” যদিও মন্ত্রীর ব্যাখ্যা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন আছে। মন্ত্রীর এই যুক্তি দলের এক নেতা খারিজ করে দিয়েছেন। দলও মন্ত্রীকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বিজিতা নাথের বার্তা যে দল অনুমোদন করছে না তা জানিয়ে ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, “বিজিতা নাথের বক্তব্য ব্যক্তিগত। তা সঠিকও নয়। দলের পক্ষে তা অনুমোদনের কোনও প্রশ্নই নেই।” বিষয়টি নিয়ে বিজিতা দেবীর বক্তব্য যে জানতে চাওয়া হয়েছে তা স্বীকার করে বিজনবাবু বলেন, “জ্যোতিষ মানুষকে পিছনে নিয়ে যায়। আর বিজিতা দেবী আমাদের মন্ত্রী হলেও বলি, সবাই সব কিছু সম্পর্কে সচেতন থাকবেন এমন কোনও কথা নেই। এই বার্তা দেওয়ার আগে দলের সঙ্গে ওঁর আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল।” ত্রিপুরা যুক্তিবাদী বিকাশ মঞ্চ এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মঞ্চের পক্ষে সম্রাট ভট্টাচার্য বলেন, “বাম শাসিত ত্রিপুরার বিজ্ঞানমন্ত্রীর কাছ থেকে রাজ্যের মানুষ এই আচরণ আশা করেন না। আমরা মন্ত্রীর স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই।” ত্রিপুরা জ্ঞান-বিজ্ঞান সংস্থার সম্পাদক সত্যেন্দ্র পালও মন্ত্রীর কথার ও আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাজপেয়ী সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জ্যোতিষকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগী হয়। সেই সময় বামপন্থীরা, বিশেষ করে সিপিএমই তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শেষ পর্যন্ত ইউজিসি-কে থামতে হয়। সেই দলেরই এক মন্ত্রীর এই আচরণে বিস্মিত রাজ্যের সব মহলই। আর দল অস্বস্তিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

astrology controversy tripura bapi roychowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE