Advertisement
১১ মে ২০২৪

থরে থরে গাঁজা হরেক মৌতাতের, ফাঁদে পা পাণ্ডার

গুদামঘরে থরে থরে সাজানো প্যাকেট। ঠিক যে-ভাবে সাজানো থাকে চা। কোনওটা ‘দার্জিলিং’। কোনওটা বা ‘অসম’। একেবারে সেই রকম। এখানে কোনও প্যাকেটে লেখা ‘মালকানগিরি’। কোনও প্যাকেটে ‘কোরাপুট’। ভিতরে অবশ্য চা নেই, আছে গাঁজা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

গুদামঘরে থরে থরে সাজানো প্যাকেট। ঠিক যে-ভাবে সাজানো থাকে চা। কোনওটা ‘দার্জিলিং’। কোনওটা বা ‘অসম’। একেবারে সেই রকম। এখানে কোনও প্যাকেটে লেখা ‘মালকানগিরি’। কোনও প্যাকেটে ‘কোরাপুট’। ভিতরে অবশ্য চা নেই, আছে গাঁজা। এমন ভাবে সযত্নে এক-এক জায়গার গাঁজা আলাদা আলাদা ভাবে সাজিয়ে রাখা আছে দেখে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র অফিসারেরা হতবাক।

বুধবার পুরীর সমুদ্রসৈকত থেকে চার কিলোমিটার দূরে পুরী জেলাতেই ওই গুদামে গাঁজা-আফিম মিলিয়ে দেড় কোটিরও বেশি টাকার নেশার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে এনসিবি। গুদামের পাশে প্রাসাদোপম বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় রমেশ মহান্তি নামে ৪৬ বছরের এক ব্যক্তিকে। এনসিবি-র জোনাল ডিরেক্টর সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “রমেশ কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে গাঁজা সরবরাহ চক্রের প্রধান পাণ্ডা।” বুধবার তাঁকে পুরী আদালতে তোলা হয়। কে এই রমেশ মহান্তি?

রমেশের নামডাক ওড়িশার নামজাদা ব্যবসায়ী হিসেবেই। পুরী এবং ওড়িশার অন্যত্র বেশ কয়েকটি মদের দোকান এবং বার আছে তাঁর। আছে বিদেশি গাড়ির শো-রুমও। অনুমোদিত এই বিশাল ব্যবসার আড়ালে চলত গাঁজা ও আফিমের বেআইনি কারবার। ওড়িশার বিভিন্ন জেলা থেকে গাঁজা জোগাড় করতেন তিনি। এক-একটি জেলার গাঁজার স্বাদ ও মৌতাত এক-এক রকম। তাই গুদামঘরে আলাদা আলাদা প্যাকেটে ভরে তার উপরে স্থাননামের লেবেল সেঁটে দেওয়া হতো। যে-ক্রেতা যেখানকার গাঁজা চাইতেন, তাঁকে দেওয়া হতো সেখানকার প্যাকেট। শুধু মোড়কই আলাদা নয়, তারতম্য আছে দামেও। রমেশের গুদামে আফিম আসত রাজস্থান থেকে। ওড়িশার কিছু জায়গায় বিক্রি হতো ঠিকই।

তবে রমেশের গাঁজা-আফিম মূলত আসত পশ্চিমবঙ্গেই।

নামী ব্যবসায়ী পরিচয়ের আড়ালে থাকা অবৈধ মাদকের কারবারি রমেশের হদিস মিলল কী ভাবে?

এনসিবি-র জোনাল ডিরেক্টর সুব্রতবাবু জানান, কয়েক মাস ধরে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গাঁজা বিক্রির সময়ে হাতেনাতে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বলেছে, গাঁজা আসছে ওড়িশা থেকে। এমনকী নির্দিষ্ট কিছু নামও করেছে তারা। মিলে যাচ্ছে তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরও। সেই তালিকাতেই মেলে রমেশের নাম। “ধৃতদের জেরা করে জানা যায়, রমেশই মূল চাঁই। বাকি যাদের নাম পাওয়া গিয়েছে, তারা কাজ করে রমেশের পরের স্তরে। তারা গাঁজা ও আফিম কেনে রমেশের কাছ থেকেই,” বললেন সুব্রতবাবু। এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই কলকাতায় ধৃত এক গাঁজা বিক্রেতাকে দিয়ে গত সপ্তাহে ফাঁদ পেতেছিলেন এনসিবি-র কর্মীরা।

ফাঁদের ব্যাপারটা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি রমেশ। কথা হয়েছিল, তাঁর কাছ থেকে কেনা হবে ৯০ কিলোগ্রাম গাঁজা। সেই অনুযায়ী তাঁকে টাকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে পুরী গিয়ে গাঁজার প্যাকেট বুঝে নেওয়ার সময়েই হানা দেন এনসিবি অফিসারেরা। হাতেনাতে ধরা পড়েন রমেশ। তাঁর সাজানো গুদামে আড়াই হাজার কেজিরও বেশি গাঁজা, প্রায় ৩০ কেজি আফিম ছাড়াও লাইসেন্সহীন একটি রিভলভার এবং কিছু বুলেট পাওয়া গিয়েছে বলে জানান সুব্রতবাবু। রমেশকে জেরা করে তাঁর পরের স্তরের দালালদের খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

opium seize kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE