Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দাঙ্গায় ক্লিনচিট নিয়ে বিঁধে বিজেপির তোপে রাহুল

ফের নতুন করে দাঙ্গা-বিতর্ক উস্কে দিলেন রাহুল গাঁধী। গুজরাত দাঙ্গায় সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট নরেন্দ্র মোদীকে যে ভাবে ক্লিন চিট দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

ফের নতুন করে দাঙ্গা-বিতর্ক উস্কে দিলেন রাহুল গাঁধী।

গুজরাত দাঙ্গায় সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট নরেন্দ্র মোদীকে যে ভাবে ক্লিন চিট দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। কাল সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীকে যে ভাবে সিট ক্লিন চিট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সিটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সিটের কাজের ক্ষেত্রেও বহু ভুল পাওয়া গিয়েছে।”

সাক্ষাৎকারে যে ভাবে মোদীকে আক্রমণ শানিয়েছেন রাহুল, তা কিছুটা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি। রাহুল বলেন, “মোদীর ভূমিকা ও তাঁর বিরুদ্ধে যে দাঙ্গার অভিযোগ উঠেছে, তার যথেষ্ট তদন্ত হয়নি। ক্লিন চিট পাওয়াটা রাজনৈতিক প্রচারের কৌশল হলেও এখনও কিন্তু বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি রয়েছে।” সিটের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আখেরে রাহুল যে ভাবে ২০০২-এর দাঙ্গা প্রসঙ্গে টেনেছেন, তাকে রণকৌশল বলে মনে করলেও রাহুলকে আজ আক্রমণ করতে ছাড়েননি বিজেপি থেকে সমাজবাদী পার্টি। সপার অভিযোগ, মোদীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত তদন্ত না হওয়ার দায় এড়াতে পারে না কংগ্রেসও। দলের সাংসদ নরেশ অগ্রবালের দাবি, “দশ বছর কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার ছিল। উপযুক্ত তদন্ত না হলে দায় কংগ্রেস সরকারেরই। কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধী এর দায় এড়াতে পারেন না।”

বিজেপি শিবিরের দাবি, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া ঘোরাতেই এই কৌশল নিয়েছেন রাহুল। ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই পরিকল্পিত ভাবে মোদীকে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। দলের সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, “দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি ও আরও বিভিন্ন কারণে মানুষ ইউপিএ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের নজর ঘোরাতেই পরিকল্পিত ভাবে ২০০২ সালের দাঙ্গার ইতিহাস টেনে আনা হচ্ছে।”

রাহুলের এই কৌশল মোকাবলায় ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার স্মৃতি উস্কে দিয়ে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলতে পিছপা হয়নি বিজেপি শিবির। রবিশঙ্করের দাবি, “২০০২ সালের ঘটনার তদন্ত বা তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, তবে ১৯৮৪-র দাঙ্গা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।” তা ছাড়া রাহুল যে ভাবে ওই রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা আদালত অবমাননা বলেই অভিযোগ করেছে বিজেপি শিবির। তাদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সিট গঠন করা হয়। শুধু সৎ ও বিশ্বস্ত অফিসারদেরই নিয়োগ করা হয় তাতে। সিট একাধিক বার তদন্ত চালিয়ে একেবারে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদের রিপোর্ট পেশ করে থাকে। নরেন্দ্র মোদীর রণকৌশলের অন্যতম রচয়িতা অরুণ জেটলির কথায়, “কংগ্রেস নেতৃত্ব আদালত বা সিবিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে কতটা তৎপর, এটা তারই প্রমাণ।”

বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একশোর আশপাশে এসেই থমকে যেতে পারে। সম্প্রতি দলীয় কর্মীদের বৈঠকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে বারণ করেছিলেন রাহুল। দলীয় কর্মীদের সভার ধাঁচেই গত কালের সাক্ষাৎকারেও রাহুল দাবি করেন, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া থাকলেও দল ২০০৯ সালের চেয়ে ভাল ফল করবে। এবং ইউপিএ জোটই তৃতীয় বার সরকার গড়বে।

বিজেপি শিবিরের অবশ্য দাবি, এই দাবির কোনও বাস্তবতা নেই। মায়াবতী ও মুলায়ম কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তৃণমূল বা ডিএমকে পাশে নেই। নেই রামবিলাস পাসোয়ানও। এই পরিস্থিতিতে ইউপিএ-র সরকার গড়ার ভাবনাটা আকাশকুসম ছাড়া কিছু নয়। অরুণ জেটলির মতে, “এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গোটা দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই রাহুলের।” সম্প্রতি পি চিদম্বরম বা পি সি চাকোর মতো বর্ষীয়ান নেতারাও কবুল করেছেন কংগ্রেসের দুঃসময় আসছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তিনি লড়তে চান না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন চিদম্বরম। সেই প্রসঙ্গ টেনেও কংগ্রেসকে বিঁধে জেটলি বলেন, “বিভিন্ন শরিক দল আগেই ইউপিএ ছেড়েছে, কংগ্রেস ডুবন্ত জাহাজ বুঝতে পেরে দলের বর্ষীয়ান নেতারাও এখন পালাতে পারলে বাঁচেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul gandhi bjp congress riot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE