Advertisement
E-Paper

নিজেকে নিয়ে আশঙ্কা দূর করতে সচেষ্ট মোদী

তিন বচন। মানুষ যে দায়িত্ব দেবে, পরিশ্রম করে তা পূরণ করব। নিজের জন্য কিছু করব না। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও কাজ করব না। সংবাদমাধ্যমের কৌতুহল তাঁকে ঘিরে। গোটা দল তাঁকে সামনে রেখেই ইস্তাহার প্রকাশ করছে। তবু সোমবার বিজেপির অনুষ্ঠানে দলের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ইস্তাহার নিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে আসা সাংবাদিকদের প্রশ্ন গুলিকে একেবারে ঠেলে দিলেন মুরলী মনোহর জোশীর দিকে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৩

তিন বচন।

মানুষ যে দায়িত্ব দেবে, পরিশ্রম করে তা পূরণ করব।

নিজের জন্য কিছু করব না।

অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও কাজ করব না।

সংবাদমাধ্যমের কৌতুহল তাঁকে ঘিরে। গোটা দল তাঁকে সামনে রেখেই ইস্তাহার প্রকাশ করছে। তবু সোমবার বিজেপির অনুষ্ঠানে দলের প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ইস্তাহার নিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে আসা সাংবাদিকদের প্রশ্ন গুলিকে একেবারে ঠেলে দিলেন মুরলী মনোহর জোশীর দিকে। বরং ইস্তাহার প্রকাশ মঞ্চটিকেই সুকৌশলে ব্যবহার করলেন নিজের পৃথক বক্তব্য পেশের জন্য। তাঁকে ঘিরে যাবতীয় আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করে ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর আহ্বান, ভরসা রাখুন আমার উপরেই।

অথচ এই ব্যক্তি-কেন্দ্রিক প্রচার নিয়েই কটাক্ষ করেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। মোদী সরকার নয়, পদ্মের সরকার ক্ষমতায় আসবে বলে হালকা খোঁচা দিয়েছিলেন। মোদীকে একজন দক্ষ ইভেন্ট ম্যানেজারও আখ্যা দিয়েছেন। আজও বুঝিয়ে দিলেন নিজের অসন্তোষ। বললেন, “আমি অনুষ্ঠান সাজালে রাজনাথ সিংহ ও নরেন্দ্র মোদীর পর আর আমার বক্তব্য রাখার প্রয়োজন ছিল না।” তবু এর মধ্যেই মোদী ইস্তাহারের যাবতীয় খুঁটিনাটি এড়িয়ে তুলে ধরলেন তাঁর মোদ্দা কথাটি। তিনটি সুকৌশলী প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে।

অমিত শাহের ‘বদলা নেওয়ার’ বক্তব্য ঘিরে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, দু’-দু’টি এফআইআর দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, মোদী তখন তাঁর সঙ্গেও দূরত্ব রাখলেন। কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের কাছে এমনিতেই মোদীর আতঙ্ক দেখাচ্ছে। তাই সংখ্যালঘুদের প্রতি মোদীর বার্তা, কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি কাজ করতে চাননা। বুঝিয়ে দিে ত চাইলেন, অমিত শাহ যতই বদলা নেওয়ার কথা বলুন, আসলে তিনি হাঁটতে চান উন্নয়নের পথেই। সেই উন্নয়নের শরিক হতে আহ্বান সংখ্যালঘুদের। ইস্তাহারেও সংখ্যালঘুদের মন টানতে ভুরি-ভুরি বার্তা দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে নিজের জন্য কিছু না করার কথা বলে মোদী সেই নিজের ‘সেবক’ ভাবমূর্তিই তুলে ধরলেন। বোঝাতে চাইলেন, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলে তাঁর দুর্নীতি করার প্রশ্নই নেই। তবে দলের অনেকের বিশ্লেষণ, মোদী আসলে এই কথা বলে সংগঠনকেও বার্তা দিলেন। সঙ্ঘেরও অনেকের মধ্যে মোদী-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, যাঁরা মনে করছেন মোদী ক্ষমতায় এলে একাধিপত্য স্থাপন করবেন। সেই আশঙ্কাও দূর করার চেষ্টা করলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।

ইস্তাহারে তো মোদীর ভাবনার রূপরেখা পরতে পরতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সমাজের সব স্তরের জন্য তাঁর ঝুলিতে কী রয়েছে, দেরিতে হলেও আজ তা জানিয়ে দিয়েছেন। এই ইস্তাহার প্রকাশ মঞ্চটিতে ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদেরও হাজির করানো হয়েছিল আজ। ইস্তাহার নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দিচ্ছেন মুরলী মনোহর জোশী। কিন্তু এত বড় আয়োজনে ইস্তাহার নিয়ে মাত্র দুটি শব্দ ব্যয় করলেন মোদী। বললেন, “ইস্তাহার এক কথায় সুশাসন ও উন্নয়ন।”

বরং তাঁকে ঘিরে সকলের আশঙ্কা দূর করে মোদী যে বার্তাটি দিতে চাইলেন, সেটি হল সকলে যেন তাঁর উপরেই ভরসা রাখেন। জনতার উদ্দেশে বললেন, যে দায়িত্ব মানুষ তাঁকে দেবে, তা পরিশ্রম করে পূরণ করবেন। ইস্তাহার নিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর কম টানাপড়েন হয়নি। সুষমা স্বরাজও আজ সঙ্ঘের অবস্থান আওড়িয়েছেন। কংগ্রেসের ইস্তাহারের সঙ্গে বিজেপির ফারাক বোঝাতে গিয়ে টেনে এনেছেন বিদেশি লগ্নির বিষয়টি। এটি জেনেই এই ক্ষেত্রে সঙ্ঘের অবস্থানেই ঢোক গিলতে হয়েছে মোদীকে।

দলে প্রবল টানাপড়েনের মধ্যেই মোদী স্পষ্ট করে দিলেন, ভোটের পরিণতি যা-ই হোক, যাবতীয় দায় তাঁর কাঁধেই। ঘরে-বাইরে সমালোচনা যা-ই থাক, এই নির্বাচন নরেন্দ্র মোদী-কেন্দ্রিক। ফলে তাঁরই দায় সকলের আস্থা ও ভরসা অর্জনের।

diganta bandyopadhyay bjp modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy