Advertisement
E-Paper

নাটক করেছেন লালুর মেয়ে, খোঁচা রামকৃপালের

চাচাজিকে ঘরে ফেরাতে পারলেন না লালু-তনয়া মিসা ভারতী। আরজেডি শীর্ষ নেতার এক কালের ছায়াসঙ্গী, রাজ্যসভার সাংসদ রামকৃপাল যাদবের দিল্লির বাসভবনে গত কাল ঘণ্টা পাঁচেক ঠায় বসেছিলেন মিসা। কাপের পর কাপ চা-ই শুধু খেয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:১২
পটনায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি মিসা ভারতী। শনিবার।  ছবি: পিটিআই।

পটনায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি মিসা ভারতী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

চাচাজিকে ঘরে ফেরাতে পারলেন না লালু-তনয়া মিসা ভারতী।

আরজেডি শীর্ষ নেতার এক কালের ছায়াসঙ্গী, রাজ্যসভার সাংসদ রামকৃপাল যাদবের দিল্লির বাসভবনে গত কাল ঘণ্টা পাঁচেক ঠায় বসেছিলেন মিসা। কাপের পর কাপ চা-ই শুধু খেয়েছেন। তিনি ভেবেছিলেন, ভোটে পাটলিপুত্র আসনের টিকিট না-পেয়ে লালুর উপর রুষ্ট কাকার সঙ্গে দেখা করে ভুল বোঝবুঝি মিটিয়ে ফেলবেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও মিসার সঙ্গে দেখা হয়নি রামকৃপালের। তবে রাতের দিকে এমনও খবর রটেছিল, দু’জনের মধ্যে সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে।

আজ সকালেই উলট-পুরাণ।

তাঁর দিল্লির বাড়িতে ভাইঝি মিসার হাজির হওয়ার ঘটনাকে ‘ইমোশনাল অত্যাচার’ বলে মন্তব্য করে বসলেন রামকৃপাল। সাংবাদিক সম্মেলনে কান্নাভেজা গলায় তিনি বললেন, “এ সব করে আমার মতো সহজ সরল মানুষের উপর মানসিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে আরজেডি জাতীয় সম্পাদক জানালেন, দলের সদস্য পদ ছাড়া বাকি সব দায়িত্ব থেকেই ইস্তফা দিচ্ছেন। তবে রাজ্যসভার পদটি আপাতত তিনি ছাড়ছেন না।

রামকৃপাল-কাকার ওই মন্তব্যে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন মিসা। পটনায় সাংবাদিকদের ডেকে পাল্টা জবাবও দিলেন। তাঁর কথায়, “এক দিকে উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো বলছেন। পাশাপাশি বললেন, গত কাল সবকিছুই নাকি নাটক ছিল। তা হলে তো সব দরজাই বন্ধ হয়ে গেল।” এরপর মিসা জানিয়ে দেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে লোকসভা ভোটে পাটলিপুত্রেই তিনি লড়াই করবেন।

গত ২৪ ঘন্টা ধরে কাকা-ভাইঝির আবেগঘন ঘটনাক্রমের যবনিকা আজ এ ভাবেই পড়তে দেখল নয়াদিল্লি, পটনা।

নির্বাচনের মুখে পছন্দসই আসন না-পাওয়ায় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভরাজধানীতে কোনও নতুন ঘটনা নয়। বরং এটাই দস্তুর। কিন্তু কাকা এবং ভাইঝির নাটকীয় টানাপোড়েন বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

গত কাল দীর্ঘ সময় রামকৃপালের দিল্লির বাসভবনে বাইরের ঘরে নিঃসঙ্গ ভাবে বসেছিলেন মিসা। পাটলিপুত্র আসনটি রামকৃপালকে না-দিয়ে লালু তাঁর বড় মেয়ের নামে ঘোষণা করে দেওয়ায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছিলেন আরজেডি শীর্ষ নেতার এত দিনের ছায়াসঙ্গী। রামকৃপাল-কাকার অভিমান ভাঙাতে পটনা থেকে দিল্লি পৌঁছে যান খোদ মিসাই। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, চাচাজির সঙ্গে দেখা করে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে চান। প্রয়োজনে পাটলিপুত্র আসনটি তুলে দেবেন রামকৃপালের হাতে। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও খালি হাতে ফিরতে হয় মিসাকে। লালু-তনয়া তাঁর বাড়িতে ঢুকতেই অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান রামকৃপাল। মিসা থাকাকালীন আর ফেরেননি। নিরাশ হয়েই পটনার বিমান ধরেন মিসা।

আজ দুপুরে দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন রামকৃপাল। গত কালের ঘটনাটিকে ‘ইমোশনাল অত্যাচার’ হিসেবে বর্ণনা করে কান্নাভেজা গলায় মন্তব্য করেন, ‘‘ও তো আমার নিজের মেয়ের মতো’’। কিন্তু সেই মেয়ে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও কেন দেখা করলেন না, তার সদুত্তর দিতে পারেননি রামকৃপাল। শুধু বলেছেন, “আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম। এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তা-ই ফিরতে পারিনি।”

এই ঘুম কৌশলগত বলেই মনে করছে আরজেডি শিবিরের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, তা না-হলে ঘুম থেকে উঠে তো উনি মিসার অনুরোধ মেনে নিতে পারতেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ভিতরে ভিতরে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথা অনেক দূর এগিয়েছে। ফলে লালু-কন্যার আবেগদীপ্ত অনুরোধের সামনে তিনি যথেষ্টই অস্বস্তিতে পড়তেন। তাঁর এই বিক্ষুব্ধ রাজনীতির পাল থেকে হাওয়াও বেরিয়ে যেত।

রামকৃপাল এ দিন বলেছেন, “দলে সামাজিক ন্যায়ের থেকে পরিবারের প্রতি ন্যায়কেই এখন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।” ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ করতে চলেছেন, তা অবশ্য এখনই স্পষ্ট করেননি রামকৃপাল।

রামকৃপালের সিদ্ধান্ত ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পরই মিসা বলেছেন, “রামকৃপাল কাকার সঙ্গে কথা বলতেই দিল্লি গিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে দেখাই করলেন না। আমাকে দেখেও অন্য জায়গায় চলে গেলেন।” তাঁর কথায়, “আমি কাকাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি আমাদের পরিবারের লোক ছিলেন। তাঁর রাগের কারণ আমি হতে চাইনি।”

আজ সকালে প্রচারে যাওয়ার আগেই লালুপ্রসাদের বক্তব্যেও স্পষ্ট হয়েছিল, মিসাকে পাটলিপুত্র থেকে তিনি সরাবেন না। লালু বলেন, “রেসের মাঠ থেকে মাঝপথে ঘোড়া সরিয়ে নেওয়া হয় না।” তবে, এ দিনও রামকৃপাল প্রকাশ্যে দল এবং লালুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, “দল এবং লালুজি আমাকে সম্মান দিয়েছেন। রাজ্যসভাতেও পাঠিয়েছেন। কিন্তু, দলের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে কথা বলে প্রার্থী ঠিক করা।”

আসন বিন্যাসের পরে গত বছর পটনা লোকসভা কেন্দ্র ভেঙে পটনা সাহিব এবং পাটলিপুত্র হয়। রামকৃপাল বলেন, “মানুষের চাহিদা মেনে আমার ইচ্ছে ছিল ওই আসন থেকেই লড়াই করি। দলের সিদ্ধান্তে দুঃখ পেয়েছি।” এ নিয়ে মিসার মন্তব্য, “রাজ্যসভার সাংসদ হয়েও ফের লোকসভায় লড়তে চাইছেন। এটা দুর্ভাগ্যের।”

misa ramkripal rjd
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy