Advertisement
E-Paper

পুরুষ ছাড়াই আকাশ জয়ের স্মৃতিতে জোট দুই নারীর

অর্ধেক আকাশ নয়। পুরুষের সঙ্গে আকাশ ভাগাভাগি নয়। পুরো উড়ানপথেই বিমানের রাশ নারীর হাতে। নিরঙ্কুশ নারী-নিয়ন্ত্রিত উড়ান। নতুন নয়। সূচনা হয়েছিল তিরিশ বছর আগে। সে-দিন তাঁরাই ছিলেন নারী দিবসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ নারী-উড়ানের দুই নিয়ন্তা। ক্যাপ্টেন নিবেদিতা ভাসিন আর ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নাগরাত।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৪
ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নাগরাত এবং ক্যাপ্টেন নিবেদিতা ভাসিন।

ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নাগরাত এবং ক্যাপ্টেন নিবেদিতা ভাসিন।

অর্ধেক আকাশ নয়। পুরুষের সঙ্গে আকাশ ভাগাভাগি নয়। পুরো উড়ানপথেই বিমানের রাশ নারীর হাতে। নিরঙ্কুশ নারী-নিয়ন্ত্রিত উড়ান।

নতুন নয়। সূচনা হয়েছিল তিরিশ বছর আগে। সে-দিন তাঁরাই ছিলেন নারী দিবসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ নারী-উড়ানের দুই নিয়ন্তা। ক্যাপ্টেন নিবেদিতা ভাসিন আর ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নাগরাত। আড়াই যুগ পরে, রবিবার আর এক নারী দিবসে সেই জুটির হাতে বিমানের রাশ। সে-বার সফর ছিল ছোট্ট বিমানে, ছোট্ট পথে। এ বার এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশান্তরে পাড়ি। বিশাল বিমানে।

১৯৮৫। তখন ছোট ফকার বিমান চালাত এয়ার ইন্ডিয়া। তখন সংস্থার নাম ছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স। সে-বার সরকারি ওই বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, নারী দিবস উপলক্ষে ছোট্ট ফকার উড়বে শুধু নারী পাইলটদের হাতে। বিমানের অন্য কর্মীদের মধ্যেও পুরুষ রাখা হবে না। বিমানসেবিকা তো বটেই, অন্য কর্মীরাও হবেন মহিলা। সেই বিমানটি কলকাতা থেকে শিলচর উড়ে যায়। সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স, এখনকার এয়ার ইন্ডিয়ার দাবি, সেটাই ছিল পৃথিবীর পুরোপুরি মহিলা কর্মী ও পাইলট নিয়ন্ত্রিত প্রথম উড়ান।

আকাশে নারীর আপন ভাগ্য জয়ের সেই দিনটিকে স্মরণ করা হয় প্রতি বছরই। তার পর থেকে ফি-বছর নারী দিবসে পুরুষ বাদ দিয়ে এ ভাবে মহিলা পাইলট ও সেবিকাদের নিয়ে উড়ান চালানোটা রীতিমতো রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে রবিবার একটি তথ্য চমকে দেয় এয়ার ইন্ডিয়া-সহ উড়ান মহলকে। এ দিন ওই বিশেষ উড়ানের প্রস্তুতি পর্বে প্রায় আবিষ্কারের মতো আচমকাই জানা গেল, ১৯৮৫ সালের প্রথম নারী-উড়ানের দুই সদস্যা এ বারেও একসঙ্গে উড়ছেন! মিলের সঙ্গে অমিলও অবশ্য আছে। সে-বার ক্যাপ্টেন ভাসিন আর ক্যাপ্টেন নাগরাত উড়েছিলেন কলকাতা-শিলচর রুটে। এ বার দিল্লি থেকে মেলবোর্ন হয়ে সিডনির মতো দীর্ঘ রুটে তাঁদের উড়ান। সে-বার তাঁদের হাতে ছিল ছোট্ট বিমান ফকারের রাশ। এ বার ওই জুটির উপরে বিশাল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের ভার।

বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, নিবেদিতা আর লক্ষ্মী পাইলট হিসেবে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে যোগ দেন ’৮৫-তেই। পুরুষ পাইলট ও কর্মী-বর্জিত কলকাতা-শিলচর উড়ানের ভার দেওয়া হয় দুই নবাগতার হাতে। এখন তাঁদের বয়স বেড়েছে। বেড়েছে অভিজ্ঞতা। দেখা গেল, এ বার বেড়েছে তাঁদের উড়ানপথের দৈর্ঘ্য আর বিমানের আয়তনও। এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তার কথায়, “ওঁরা দু’জনে যে এর মধ্যে আর একসঙ্গে ওড়েননি, তা নয়। অনেক উড়েছেন। তবে নারী দিবস উপলক্ষে পুরোপুরি মহিলা নিয়ন্ত্রিত উড়ানে আবার দু’জনে ককপিটে পাশাপাশি বসলেন এত দিনে। ৩০ বছর পরে।”

এ দিন মুম্বই থেকে মাসকট এবং মুম্বই-দিল্লি উড়ানও নিয়ে গিয়েছেন শুধু মহিলা পাইলট আর কর্মীরা। মহিলা পাইলট আর বিমানসেবিকারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন দিল্লি-জোধপুর-মুম্বই উড়ানেরও। এয়ার ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, পাইলট ও সেবিকা মিলিয়ে তাদের মহিলা কর্মীর সংখ্যা ৪৫০০। এ দিন সকালে দিল্লি ও মুম্বইয়ে ওই মহিলা-উড়ানগুলি ছাড়ার সময় শুধু মহিলা ইঞ্জিনিয়ার আর প্রযুক্তিবিদদের দিয়েই কাজ করানোর চেষ্টা হয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের উন্নয়নের জন্যও তারা আলাদা ভাবে কাজ করছে বলে এয়ার ইন্ডিয়ার দাবি।

নারী দিবসে পুরোপুরি মহিলা নিয়ন্ত্রিত ১৬টি বিশেষ উড়ান চালিয়েছে স্পাইসজেটও। যেখান থেকে (‘ফ্লাইট সাপোর্ট সেন্টার’) সংস্থার উড়ানসূচি নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এ দিন সেখানেও কাজ করানো হয়েছে শুধু মহিলাদের দিয়ে। সংস্থা সূত্রের খবর, নারী দিবসের প্রথম বিশেষ উড়ানটি ভোর ৪টেয় চেন্নাই থেকে ছেড়ে কলম্বো যায়। তার পরে সারা দিনে আরও ১৫টি উড়ান গিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সংস্থার দাবি, এই মুহূর্তে ভারতের অন্যান্য বিমান সংস্থার তুলনায় তাদেরই সব চেয়ে বেশি মহিলা পাইলট রয়েছেন।

নারী দিবসে সরকারি আর বেসরকারি দুই উড়ান সংস্থার মহিলাদের দাপট বুঝিয়ে দিয়েছে, আকাশ যতটা পুরুষের, ততটাই নারীর। এবং অর্ধেক নয়। পুরোটাই।

sunanda ghosh air india caption lakshmi nagrath caption nivedita vasin womens day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy