Advertisement
০৫ মে ২০২৪

প্রকাশ্যে ঝগড়া ঠেকাতে কড়া বার্তা সনিয়ার

গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে অবশেষে রাশ ধরলেন সনিয়া গাঁধী। লোকসভা ভোটে একেই গোহারা হেরেছে দল। তার ওপর ব্যর্থতার দায় নিয়ে যখন প্রবল চাপানউতোর শুরু হয়েছে কংগ্রেসে, তখন সনিয়া আজ স্পষ্ট করে দিলেন যে, প্রকাশ্যে কাটাছেঁড়া আর বরদাস্ত করবেন না তিনি। দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আগে মুখে লাগাম টানতে হবে নেতাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

গৃহযুদ্ধ ঠেকাতে অবশেষে রাশ ধরলেন সনিয়া গাঁধী।

লোকসভা ভোটে একেই গোহারা হেরেছে দল। তার ওপর ব্যর্থতার দায় নিয়ে যখন প্রবল চাপানউতোর শুরু হয়েছে কংগ্রেসে, তখন সনিয়া আজ স্পষ্ট করে দিলেন যে, প্রকাশ্যে কাটাছেঁড়া আর বরদাস্ত করবেন না তিনি। দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আগে মুখে লাগাম টানতে হবে নেতাদের।

সর্বসম্মত ভাবে আজ ফের সনিয়াকে কংগ্রেস সংসদীয় দলের সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তার পর দলীয় সাংসদদের উদ্দেশে কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, “হারের কারণ খতিয়ে দেখতে ক’দিন আগেই ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সেটাই শেষ নয়। সাংগঠনিক রদবদলের আগে দলে আরও বিতর্ক হবে। সকলের কথা শোনাও হবে। কিন্তু প্রকাশ্যে চাপানউতোর চললে আখেরে সেই প্রক্রিয়াটাই ধাক্কা খেতে পারে।”

বস্তুত ভোটের ফল ঘোষণার পরেই যে কংগ্রেসে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা নয়। বরং তার অনেক আগে থেকেই রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব ও তাঁর কর্মপন্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল দলের অন্দরে। আর ভোট মিটতেই কংগ্রেসের এক ঝাঁক নবীন ও প্রবীণ নেতা এখন রাহুলের পরামর্শদাতাদেরও প্রকাশ্যে বিঁধতে শুরু করেছেন। যাতে ঘুরেফিরে নিশানা হচ্ছেন সেই রাহুলই।

কংগ্রেস সূত্র বলছে, আজ সে কারণেই নেতাদের মুখে লাগাম টানার নির্দেশ দিয়েছেন সনিয়া। কারণ, তিনি বুঝতে পারছেন, এতে শুধু যে সামগ্রিক ভাবে দলের ক্ষতি হচ্ছে, তা নয়। রাহুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতও সংকটের মুখে পড়ছে। সনিয়ার আশঙ্কা, এ ধরনের সমালোচনা অব্যাহত থাকলে কংগ্রেসে রাহুলের কর্তৃত্ব ক্রমশই কমতে থাকবে। বরং দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারলে তবেই সাংগঠনিক পুনর্গঠন সুষ্ঠু ভাবে করতে পারবেন রাহুল।

ছেলের ভূমিকায় হতাশ হয়ে পড়া কংগ্রেস নেতারা অবশ্য আজ মায়ের ভূমিকায় কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছেন। দলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “অতীতে যত বারই ভরাডুবির মুখে পড়েছে কংগ্রেস, তত বারই দলে ভাঙনের পরিস্থিতি হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রীর দৃঢ়তা দেখে অন্তত এটুকু আশা করা যাচ্ছে, সে অবস্থা এ বারে এড়াতে পারবেন তিনি।”

তাৎপর্যপূর্ণ হল, সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে সনিয়াই যাতে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হন, সেই দাবিও এখন উঠতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অন্দরে। যদিও সংসদীয় দলের বৈঠকে আজ সনিয়ার সামনে সেই দাবি কেউ তোলেননি। তবে সংসদ থেকে বেরিয়ে নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে বেশির ভাগ কংগ্রেস সাংসদ আজ এই মর্মেই মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও আজ ছেড়ে দেওয়া হয় সনিয়ার ওপরে।

অনেকেই আশা করেছিলেন, আজই লোকসভা ও রাজ্যসভায় দলের নেতা ঘোষণা করে দেবেন সনিয়া। কিন্তু কংগ্রেস সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত তা না করাটাও হয়তো কৌশলগত। কারণ, নেতা নির্বাচন নিয়েও দলে টানাপড়েন রয়েছে। লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ রাহুল গাঁধী যাতে পান, সে জন্য দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ নেতাদের একাংশ সক্রিয়। আবার বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কমলনাথও সেই পদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তেমনই রাজ্যসভার নেতা হতে আগ্রহী এ কে অ্যান্টনি, গুলাম নবি আজাদ, অম্বিকা সোনির মতো নেতা-নেত্রীরা। হতে পারে, সেই কারণেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় নিচ্ছেন সনিয়া।

এর আগে সংসদীয় দলের বৈঠকে সনিয়া আজ বলেন, “কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের যে এতো অসন্তোষ, তা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। সেই কারণগুলি খুঁজে বের করেই শুদ্ধিকরণের পথ নিতে হবে।” একই সঙ্গে দলের মনোবল ধরে রাখতে তিনি জানান, বিজেপি-র ১৫ শতাংশ আসনও দল পায়নি, এটা যেমন ঠিক, তেমনই দেশের সাড়ে দশ কোটি মানুষের ভোট পাওয়াটাও মোটেই তুচ্ছ ব্যাপার নয়। যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের আস্থা ধরে রেখেই পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটতে হবে দলকে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সনিয়ার দাওয়াই, দুই কক্ষ মিলিয়ে কংগ্রেস এবং ইউপিএ-র সদস্য সংখ্যা মোটেই কম নয়। তার সঙ্গে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংসদে গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে কংগ্রেসকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sonia conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE