Advertisement
E-Paper

প্রমাণ নেই, ইশরাত মামলায় সিবিআইয়ের ছাড় অমিতকে

লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রচারে বহু বারই এসেছে প্রসঙ্গটা। কিন্তু ভোটের প্রায় শেষ লগ্নে এসে ইশরাত জহান হত্যা মামলায় আনা অভিযোগ থেকে অমিত শাহকে রেহাই দিল সিবিআই। আমদাবাদে বিশেষ আদালতে তারা জানিয়েছে, গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হচ্ছে না। উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সবথেকে বড় অস্ত্র ছিল ২০০৪ সালের ওই মামলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০২:৫৬

লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রচারে বহু বারই এসেছে প্রসঙ্গটা। কিন্তু ভোটের প্রায় শেষ লগ্নে এসে ইশরাত জহান হত্যা মামলায় আনা অভিযোগ থেকে অমিত শাহকে রেহাই দিল সিবিআই। আমদাবাদে বিশেষ আদালতে তারা জানিয়েছে, গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হচ্ছে না।

উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সবথেকে বড় অস্ত্র ছিল ২০০৪ সালের ওই মামলা। অভিযোগ ছিল, সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অমিত শাহ ও আমদাবাদের পুলিশ কমিশনার কে আর কৌশিকের নির্দেশেই ইশরাত ও তাঁর তিন সঙ্গীকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে পুলিশ গুলি করে মারে। দাবি করা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইশরাত ও তাঁর সঙ্গীদের মৃত্যু হয়েছে। এরা নরেন্দ্র মোদীকে খুনের ছক কষছিল।

সিবিআইয়ের সিদ্ধান্তে স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া বিজেপি শিবিরে। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। অমিত শাহ সম্পর্কে সিবিআইয়ের সিদ্ধান্তে সেটাই প্রমাণ হল।” বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন, তা হলে এত দিন অমিত শাহকে কালিমালিপ্ত করা হল কেন? কংগ্রেসের নির্দেশেই সিবিআই প্রমাণ না থাকা সত্বেও এত দিন সে কাজ করে এসেছে। এখন বাধ্য হয়ে আদালতে সত্যি কথা বলতে হয়েছে।

অমিত শাহর বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হাতছাড়া হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, সিবিআইয়ের তদন্তে যে ইউপিএ বা কংগ্রেস নাক গলায় না, এটা তারই প্রমাণ। দলের নেতা শশী তারুর বলেন, “অমিত শাহ ও বিজেপি নেতারাই সিবিআইকে কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বলেছিলেন। এখন চার্জশিটে অমিত শাহের নাম না থাকাতেই স্পষ্ট, পেশাদার সংস্থা হিসেবে সিবিআই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং কাজের ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।”

ইশরাত মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, বরখাস্ত আইপিএস অফিসার ডি জি বাঞ্জারা অমিত শাহর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। এক সময় মোদী-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন ওই আইপিএস অফিসার। ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে এখনও জেল খাটছেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে ইস্তফার চিঠিতে বাঞ্জারা জানান, রাজ্য সরকারের নির্দেশেই ঘটনার দিন গুলি চালিয়েছিল গুজরাত পুলিশ। অথচ এখন তাঁদের সুরক্ষার কথা ভাবছে না সরকার। এই ইস্তফার চিঠিতেই অমিত শাহের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বাঞ্জারা। বলেন, “মোদীর রাজত্বে অশুভ ছায়ার মতো কাজ করছেন অমিত।”

সিবিআই আজ আদালতে জানায়, বাঞ্জারার চিঠিতে অমিতের বিরুদ্ধে সাধারণ কিছু অভিযোগ করা হলেও ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় অমিতের ঠিক কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্যের উল্লেখ নেই। সিবিআই ইনস্পেক্টর বিশ্বাসকুমার মিনা জানান, চিঠিটি নিয়ে জেলেই একাধিক বার বাঞ্জারাকে জেরা করেছে সিবিআই। তখনও নতুন কোনও তথ্য দিতে পারেননি বাঞ্জারা। মিনার কথায়, “অমিত শাহের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই। আর তাই সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়নি।” মিনা জানান, ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় যে এফআইআর দায়ের হয়েছে তাতেও উল্লেখ করা হয়নি অমিতের নাম।

সিবিআই কেন লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে অমিত শাহকে ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, সেই প্রশ্ন ওঠেছে। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, এর আগের দু’টি চার্জশিটেও অমিত শাহের নাম ছিল না। ইশরাতের সঙ্গী এবং ওই ঘটনায় নিহত প্রণেশ পিল্লাইয়ের বাবা গোপীনাথ পিল্লাই সিবিআইয়ের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, তথ্য-প্রমাণ পেয়েও ইচ্ছাকৃত ভাবে তাতে আমল দেয়নি সিবিআই। ওই আবেদনে অমিতের সঙ্গে পুলিশ-কর্তাদের টেলিফোনে কথাবার্তার রেকর্ডও পেশ করা হয়। দাবি করা হয়, নরেন্দ্র মোদী তথা অমিত শাহের নির্দেশেই ভুয়ো সংঘর্ষ হয়েছিল।

সিবিআইয়ের ছাড়পত্রে কংগ্রেস আজ কিছুটা পিছু হঠলেও দলের নেতাদের যুক্তি, সিবিআইয়ের চার্জশিটই শেষ কথা নয়। ওই মামলা বা তাতে অমিত শাহের ভাগ্য এখনও নির্ধারিত হয়নি। আদালত এখনও কোনও রায় দেয়নি। তা ছাড়া নিহতদের পরিবারের সামনে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার রাস্তাও খোলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শশী তারুর। অমিতের সঙ্গে আমদাবাদের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কে আর কৌশিককেও এ দিন ছাড় দিয়েছে সিবিআই। তাঁকে এ বার সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আজ যে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার যুগ্ম-অধিকর্তা রাজেন্দ্র কুমারের নামও রয়েছে। আমদাবাদ পুলিশের দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতেই ইশরাতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। ভুয়ো সংঘর্ষের ষড়যন্ত্রে রাজেন্দ্র কুমারও জড়িত ছিল বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ।

ishrat jahan amit shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy