পরমাণু দায়বদ্ধতা আইনের জটেই থমকে রয়েছে ভারতে মার্কিন পরমাণু সংস্থাগুলির বিনিয়োগ। অথচ ছ’বছর হয়ে গেল ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তির বয়স। অচলাবস্থা কাটাতে, অর্থাৎ মার্কিন ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী সংস্থাগুলির আর্থিক ভার কমাতে এ বার একটি ‘সার্বিক বিমা তহবিল’ গঠনের দিকে হাঁটছে ভারত। ওবামার আসন্ন সফরে এ ব্যাপারে দিশামুখ তৈরি হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কুর্সিতে বসার পর নরেন্দ্র মোদী বিষয়টিকে যে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তা স্পষ্ট। চার মাস আগে ভারত-মার্কিন একটি ‘নিউক্লিয়ার কনট্যাক্ট গ্রুপ’ তৈরি হয়েছে, যারা দু’বার বৈঠকে বসেছে ভিয়েনা এবং নয়াদিল্লিতে। ওবামার আসন্ন সফরের আগে গত দু’দিন ধরে তৃতীয় বারের জন্য এই গ্রুপের নাগাড়ে বৈঠক চলছে লন্ডনে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী।” বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, “পরমাণু বিদ্যুতের বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সহযোগিতা পেতে আমেরিকার সঙ্গে যেমন আলোচনা চলছে, পাশাপাশি পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়েও ভারত তৎপর হয়েছে। ওবামার সফরে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে।”
মনমোহন সিংহ এবং জর্জ বুশের জমানায় এই চুক্তি সই হয়েছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু আমেরিকার প্রবল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ভারতের মাটিতে নতুন চুল্লির জন্য একটি ইটও গাঁথা হয়নি। কারণ ২০১০ সালে পাশ হওয়া পরমাণু দায়বদ্ধতা আইনের জটে বিনিয়োগের গোটা প্রক্রিয়াই থমকে যায়। সেখানে বলা হয়েছিল, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী মার্কিন সংস্থাগুলিকে ক্ষতিপূরণের বিশাল অঙ্ক দিতে হবে। কিন্তু এই শর্ত মানতে গেলে মুনাফা বলে হাতে কিছুই থাকবে না, সেই যুক্তি তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আমেরিকা। তার পরেও আইন বদলাতে রাজি হয়নি তৎকালীন ইউপিএ সরকার। সরকারের বক্তব্য ছিল দেশের সংসদ সর্বসম্মত ভাবে এই দায়বদ্ধতা বিলটি পাশ করিয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সম্মান জানাতে গেলে তা পরিবর্তন করা যায় না।
মোদী আসার পর খুচরো শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়া হলেও বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে যে পরমাণু ক্ষেত্রটিতে, সেটি অচ্ছুৎই রয়ে গিয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রটি নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করে মোদী সরকার। আমেরিকাও গত কয়েক বছরে এই নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে দরবার করে এসেছে নয়াদিল্লির কাছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, যৌথ কনট্যাক্ট গ্রুপ তাদের বৈঠকে যে সূত্রটি স্থির করেছে তা হল, মার্কিন ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী সংস্থাগুলির উপর দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যে বিশাল অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে বর্তাচ্ছে, তা কমাতে এগিয়ে আসবে ভারতীয় বিমা সংস্থা। তবে কোনও একটি বিমা সংস্থার পক্ষে এই বিশাল অঙ্কের ধাক্কা সামলানো সম্ভব নয় বলেই স্থির হয়েছে, কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিমা সংস্থা মিলে একটি তহবিল তৈরি করা হবে। সূত্রের খবর, জট আরও আছে। তাদের দেওয়া পরমাণু জ্বালানি কী ভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তার ওপর নজরদারি করতে চায় আমেরিকা। স্বভাবতই ভারত তাতে রাজি নয়।
ওবামার সফরের আর তিন দিন বাকি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা চলছে জট কাটিয়ে এই চুক্তিকে বাস্তবায়িত করার। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না হলেও আসন্ন সফরে এ ব্যাপারে যদি একটি ইতিবাচক দিশামুখ তৈরি করা যায়, তা হলে তা নিঃসন্দেহে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। ওবামার সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসেবে থাকার জন্য মোদী ভার দিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযুষ গয়ালকে, পরমাণু বিদ্যুৎও যাঁর দায়িত্বের তালিকায় পড়ে। সন্দেহ নেই, হিসেব কষেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy