তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা পোড়ানোয় বিপদ ঘিরে ধরছে দু’দিক থেকে। প্রথমত, বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, ক্রমাগত ভূগর্ভের কয়লা তুলতে থাকায় টান পড়ছে প্রকৃতির ভাঁড়ারে। এই জোড়া বিপদের মুখে পরমাণু শক্তিই তাপবিদ্যুতের বিকল্প হতে পারে কি না, তা নিয়ে এক মঞ্চে ভিন্নমত পোষণ করলেন দুই বিদ্যুৎমন্ত্রী। কেন্দ্রের পীযূষ গয়াল এবং রাজ্যের মণীশ গুপ্ত।
শুক্রবার কলকাতায় বণিকসভা ‘বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র একটি অনুষ্ঠানে মণীশবাবু বলেন, ‘‘দেশের প্রভাবশালীদের একটি অংশ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সক্রিয়। কিন্তু পরমাণু শক্তি দেশের চাহিদা মেটাতে পারবে না।’’ তাঁর যুক্তি, এখন পরমাণু কেন্দ্র গড়লে তা থেকে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হতে কয়েক বছর লাগবে। সেই কেন্দ্রে হয়তো ৪-৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। কিন্তু সেই কয়েক বছরে চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার চের্নোবিল এবং জাপানের ফুকুশিমা দাইচি পরমাণু কেন্দ্রের বিপর্যয়ের উদাহরণ টেনে বিপদের আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
মণীশবাবুর পরেই বলতে ওঠেন গয়াল। তাঁর সাফ কথা, ‘‘পরিবেশ-বান্ধব শক্তি অর্জনই লক্ষ্য। তাই দেশ পরমাণু শক্তির দিকেই এগোবে।’’ তাঁর সুরে অনেকেই বলছেন, পরিবেশ-বান্ধব শক্তির অন্যতম হল পরমাণু শক্তি। এর উৎপাদন ক্ষমতাও বেশি। তাই বিপদের আশঙ্কা থাকলেও এর গুরুত্ব এড়ানো যায় না।
মণীশবাবুর মন্তব্যের বিরোধিতা করে পরমাণু-বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বই এখন পরমাণু শক্তির দিকে এগোচ্ছে। এ দেশের বিদ্যুৎ-সঙ্কট মেটাতে পরমাণু বিদ্যুৎই প্রয়োজন। মণীশবাবু কেন অন্য কথা বলছেন, তা আমি জানি না।’’ এ রাজ্যের হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বাধায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। হরিপুর প্রসঙ্গে বিকাশবাবুর মন্তব্য, ‘‘ওই প্রকল্প বাতিল হওয়া অত্যন্ত দুঃখের।’’
রাজ্য কোন বিকল্পের কথা ভাবছে?
মণীশবাবুর মতে, সেরা হাতিয়ার হতে পারে সৌরশক্তি। কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ছাদে ‘সোলার প্যানেল’ বা সৌরকোষ বসানোর পরিকল্পনা চলছে। দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে গুজরাত, কর্নাটকের কাছে পিছিয়ে পড়ে বাংলা। তাই সৌরবিদ্যুতের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে, প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। অনেকে আবার বলছেন, কলকাতায় বছরের বেশির ভাগ সময়েই চড়া রোদ মেলে না। ফলে সৌরবিদ্যুৎ কম তৈরি হবে। এই প্রকল্প বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ায় অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে।
রাজ্য তাদের অধীনে থাকা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির দূষণে লাগাম টানতে পারবে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। ছাই ফেলে বক্রেশ্বর ও চন্দ্রভাগা নদীর জল দূষিত করার অভিযোগ তুলে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানান, তাপবিদ্যুতের ছাই উপচে পড়ে নদীর জল দূষিত হয়েছে। পরবর্তী কালে জানা যায়, গত ডিসেম্বরের পর থেকে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ছাড়পত্র দেয়নি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
সেই মামলায় পর্ষদ এ দিন আদালতে জানায়, ৩০ জুন বক্রেশ্বর-কর্তৃপক্ষকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে এ-পর্যন্ত তিন বার বক্রেশ্বর পরিদর্শনের পরে যে-রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, তা-ও আদালতে পেশ করেন পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী। জুনে কীসের ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হল এবং এ বিষয়ে আইন কী বলছে, পর্ষদের সদস্য-সচিবের কাছে তা জানতে চেয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy