Advertisement
E-Paper

বিদ্রোহে দলেরই ক্ষতি, বার্তা সঙ্ঘের

নিরস্ত হওয়ার লক্ষণ নেই যশোবন্ত সিংহের। আজ দুপুরে বাড়মের কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেশ করলেন তিনি। আর তার পরেই তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি-র বর্তমান নেতৃত্ব, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীকে। বাজপেয়ী আমলের বিদেশমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রীর কথায়, “নমো নমো বলে যে তামাশা চলছে, আর যে ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাকে ১৯৭৫ সালের (জরুরি ব্যবস্থার) কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।”

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৩

নিরস্ত হওয়ার লক্ষণ নেই যশোবন্ত সিংহের। আজ দুপুরে বাড়মের কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেশ করলেন তিনি। আর তার পরেই তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি-র বর্তমান নেতৃত্ব, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীকে। বাজপেয়ী আমলের বিদেশমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রীর কথায়, “নমো নমো বলে যে তামাশা চলছে, আর যে ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাকে ১৯৭৫ সালের (জরুরি ব্যবস্থার) কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।”

যশোবন্ত বিদায়ে এমনিতে সঙ্ঘ পরিবারের কোনও আপত্তি নেই। বিজেপি-র প্রবীণ নেতাদের সরিয়ে নতুন মুখদের জায়গা করে দেওয়াটা নাগপুরেরই সিদ্ধান্ত। বস্তুত, মোহন ভাগবত নিজেই আজ দিল্লিতে সঙ্ঘের মুখপত্র আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেছেন, “পরিবর্তন এক অপরিবর্তনীয় নিয়ম। পরিবর্তন যদি মঙ্গলের জন্য হয়, তা হলে সেটি অবশ্যম্ভাবী।” আসলে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, যশোবন্ত সিংহদের মতো প্রবীণ নেতাদের সরিয়ে ‘জো হুজুর’ নেতাদের নিয়ে নতুন টিম তৈরি করতে আগ্রহী সঙ্ঘ। কিন্তু সেই পথে হাঁটতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহরা উদ্ধত আচরণ করছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতকে ভাবাচ্ছে। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে তিনি আজ এই বলে সতর্ক করেছেন যে, যা-ই করুন সাংগঠনিক গণতন্ত্রের পরিবেশ যেন কোনও অবস্থাতেই লঙ্ঘিত না হয়। জনগণের কাছে এই বার্তা যেন না যায় যে, বিজেপি একটি উদ্ধত দলে পরিণত হয়েছে। সেখানে আলাপ-আলোচনার পরিবেশ, প্রবীণদের সম্মান জানানোর সংস্কৃতিটাই উধাও হয়ে গিয়েছে।

ক’দিন আগে আডবাণীকে গাঁধীনগর থেকে প্রার্থী করার প্রশ্নেও একই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। জনমানসে বার্তা যাচ্ছিল যে, আডবাণীর মতো প্রবীণ এবং দলে প্রতিষ্ঠাতা নেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে মর্যাদা না-দিয়ে তাঁকে অপছন্দের আসন থেকে দাঁড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। সে দফায় ভাগবতের নির্দেশে মোদী সাতসকালে আডবাণীর বাড়ি গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এমন একটা বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছিল, যেন আডবাণী নিজেই নিজের কেন্দ্র বেছে নিচ্ছেন।

কিন্তু ঠিক তার পরেই যশোবন্তকে ঘিরে সেই একই ঘটনা ঘটল। মোদীর আপত্তিতে টিকিট দেওয়া হল না গুজরাতের আডবাণী-ঘনিষ্ঠ সাত বারের সাংসদ হারীন পাঠককেও। যশোবন্ত আজ দাবি করেন, দেড় বছর আগেই তিনি আডবাণীকে জানিয়েছিলেন যে, জীবনের শেষ ভোট তিনি জন্মস্থান বাড়মের থেকে লড়তে চান। বসুন্ধরা রাজেও তাঁকে সেই আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন টিকিট দেওয়া হচ্ছে কিছু দিন আগে পর্যন্ত কংগ্রেসে থেকে বিজেপি-কে গালি দেওয়া সোনারাম চৌধুরীকে। যশোবন্তের কথায়, “দু’জন মানুষ আমাকে ঠকিয়েছেন। এক জন বিজেপি সভাপতি। এই নিয়ে দু’বার আমাকে আঘাত করলেন তিনি। অন্য জন হলেন বসুন্ধরা রাজে। এই ষড়যন্ত্র শুধু যশোবন্ত সিংহের বিরুদ্ধে নয়, বিজেপি-র নীতি ও আদর্শের উপরেই আঘাত।”

যশোবন্তের এই প্রকাশ্য উষ্মাপ্রকাশের পরে তাঁকে বহিষ্কার করা ছাড়া দলের সামনে আর কোনও উপায় থাকছে না। কিন্তু আডবাণী-হারীন-যশোবন্ত গোটা ঘটনাপ্রবাহে আখেরে বিজেপি-রই লোকসান হবে বলে আশঙ্কা সঙ্ঘ নেতৃত্বের। কারণ, তাঁদের মতে, মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গড়ার মতো অবস্থায় চলে এলেও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জেরে নতুন কোনও বিতর্ক চাগিয়ে তোলা উচিত হবে না। ভাগবত মোদীকে বুঝিয়েছেন, প্রবল আত্মবিশ্বাসী নেতাকেও ভোটের মুখে সবাইকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। কারণ, সমর্থকের সংখ্যা বাড়লে ক্ষতি নেই বরং লাভ। এখন আডবাণী, যশোবন্ত, হারীন যদি লাগাতার বিদ্রোহ শুরু করেন, তা হলে জনমানসে যে বার্তা যাবে, সেটা বিজেপি-র পক্ষে মোটেই ভাল হবে না। ভোটের পর যদি কোনও কারণে শরিক সন্ধানের প্রয়োজন হয়, সেই চেষ্টাও ধাক্কা খেতে পারে। কারণ, তারা মনে করতে পারে যে মানুষ নিজের দলের প্রবীণ নেতাদের সম্মান করেন না, তাঁর কাছ থেকে সম্মান পাওয়া যাবে কী ভাবে!

তা ছাড়া, মোদী শিবির কংগ্রেসকে যতটা খরচের খাতায় ফেলে দিচ্ছে, ততটা বেড়ে খেলার কোনও কারণ দেখছেন না সঙ্ঘ নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, অতি দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বীকেও সমীহ করে চলা উচিত। যশোবন্তদের বিদ্রোহ আখেরে কংগ্রেসকেই আক্রমণের অস্ত্র জোগাবে। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ ইতিমধ্যেই বলছেন, ভোটের সময় বিজেপি যে ভাবে প্রবীণ নেতাদের সরাচ্ছে এবং পছন্দের নবীন নেতাদের নিয়ে আসছে তাতে সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় জনসমাজের উপরেই প্রভাব পড়ছে। তাঁর মতে, প্রশ্নটা বিজেপি বা কংগ্রেসের নয়। প্রশ্নটা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার। সঙ্ঘ নেতাদের মতে, বিজেপি-র উচিত সমালোচনার এই পরিসরটা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা।

মোদী ও রাজনাথের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে আবার পাল্টা বলা হচ্ছে, প্রবীণ নেতারা যদি ব্ল্যাকমেল করে প্রার্থী হতে চান, তা হলে সেটা বরদাস্ত করা চলে কি? কোন কেন্দ্রে কে জিততে পারেন, সে ব্যাপারে নিচুতলার থেকে মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই প্রার্থী করা হয়েছে। সংসদীয় বোর্ডেও এই সিদ্ধান্তগুলি সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সঙ্ঘ নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রবীণ নেতাদের সরিয়ে নতুন মুখ আনার ব্যাপারে নীতিগত কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পরিবর্তনের নীতি রূপায়ণের প্রশ্নে আরও সহিষ্ণু হওয়ার দরকার ছিল। যে প্রবীণ নেতাকে সরানো হবে, আগাম যদি তাঁর সঙ্গে কেউ আলোচনা করতেন, তাঁকে সুষ্ঠু ভাবে বোঝাতেন, তা হলে পরিস্থিতি এতটা ঘোরালো হয়ে উঠত না।

সব মিলিয়ে যশোবন্তকে নিয়ে বিজেপি-র এখন খুব সুখের সময় নয়। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “এটা সার্জিক্যাল অপারেশন। একটু ব্যথাবেদনা তো হবে। কিন্তু বৃদ্ধতন্ত্র ভাঙতে এটা জরুরি ছিল।” যার উত্তরে সেই ঠান্ডা পানীয়ের বিজ্ঞাপনের মতো সঙ্ঘ বলছে, ‘জোর কা ঝটকা ধীরেসে লাগে!’ অর্থাৎ, কঠিন সিদ্ধান্ত নিশ্চয় নেবে, কিন্তু সইয়ে সইয়ে।

jayanta ghosal loksabha election bjp rss jaswant singh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy