Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বিদেশি লগ্নি: ধাপে ধাপে এগোবেন মোদী

সরকারে বসেই নরেন্দ্র মোদী ও অরুণ জেটলি জুটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের এক সবিস্তার রূপরেখা তৈরি করতে সক্রিয় হলেন। কৌশল হল, দেশের অর্থনীতির মরা গাঙে বান আনা। গত দশ বছর ধরে যে ভাবে আন্তর্জাতিক দুনিয়া এ দেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, সেই সঙ্কট কাটিয়ে এ বার তাদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

সরকারে বসেই নরেন্দ্র মোদী ও অরুণ জেটলি জুটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের এক সবিস্তার রূপরেখা তৈরি করতে সক্রিয় হলেন।

কৌশল হল, দেশের অর্থনীতির মরা গাঙে বান আনা। গত দশ বছর ধরে যে ভাবে আন্তর্জাতিক দুনিয়া এ দেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, সেই সঙ্কট কাটিয়ে এ বার তাদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে মোদী সরকার।

এই কাজ করতে গিয়ে অবশ্য প্রতি পদে তাঁদের এক দিকে যেমন সঙ্ঘের ইচ্ছার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে, তেমনই দলের ভোটব্যাঙ্ক ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কথাও ভাবতে হচ্ছে। বিশেষ করে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি যে অনুমোদন করা হবে না, সঙ্ঘের চাপে সেই কথাও ইস্তাহারে লিখতে হয়েছে মোদীকে।

কিন্তু সরকারে এসে ঝট করে ইউপিএ আমলের নীতিকে বদলে দেওয়ারও বিপদ আছে। বিশ্ব বাজারে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সে কারণে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে দিয়ে বলিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখনই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে এমন একটি কৌশল নিতে চাইছেন জেটলি, যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে।

শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের একটি নোট প্রতিরক্ষা, রেল, পরিকাঠামো মন্ত্রকগুলিতে পাঠানো হয়েছে। যেখানে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের আমলাদের জেটলি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, প্রতিরক্ষায় ১০০ শতাংশ বিনিয়োগ এখনই তিনি কার্যকর করতে চান না। লগ্নিকারীদের আস্থা অর্জন করা হোক, কিন্তু তাই বলে ভারতের শিল্পমহলও চাইবে না গোটাটাই বিদেশি সংস্থার দখলে চলে যাক।

সে কারণে ধাপে ধাপে এগোনোর কৌশল নিচ্ছেন জেটলি। কোনও তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। কিন্তু মোদীর সরকার বিদেশি বিনিয়োগের যে পক্ষপাতী, সেই বার্তাও দিয়ে জল মাপার কাজটি শুরু করে দিয়েছেন। সরকারের এক সপ্তাহের মাথাতেই।

বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, দল-সঙ্ঘ ও বিজেপির ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে এখনই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। এর পিছনে আর একটি বাস্তব সমস্যাও রয়েছে। সেটি হল, এ দেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এই প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত নন। তাই ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে উৎপাদন শিল্পকে মজবুত করা হবে। তার পরেই এই বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। প্রায় দু’বছর আগে মনমোহন সিংহ সরকার খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি পুঁজির ছাড় দিলেও এখনও পর্যন্ত ব্রিটিশ সংস্থা টেসকো ছাড়া আর কেউ তেমন পরিকল্পনা করেনি। তারা টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে ভারতে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু ওয়ালমার্ট, আইকিয়ার মতো বিশ্বের তাবড় তাবড় সংস্থা ভারতের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার ধরার জন্য মুখিয়ে রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, প্রথমে ঘরোয়া স্তরে এই দেশগুলিকে সরকারের অবস্থান বোঝানো হবে। তাতে যদি পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকে, তা হলে ৫১ শতাংশ থেকে লগ্নির সীমা ৪৯ শতাংশে নামিয়ে এনে একটি মধ্যপন্থাও খোঁজা হতে পারে। আর যদি সঙ্ঘের চাপ বেশি বাড়ে, তা হলে এই নীতিই খারিজ করতে হবে। যদিও প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে ভারতের অবস্থানে ব্রিটেনের মতো দেশের আপত্তি নেই।

কিন্তু মোদী সরকার সব থেকে যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত, সেটি হল কোনও ভাবেই যাতে শিল্পমহলের আস্থা না হারায়।

মনমোহন জমানায় যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনাই আসল লক্ষ্য। সে কারণে খুচরো ব্যবসায় না হলেও বাকি ক্ষেত্রগুলিকে বিদেশের বাজারের জন্য ধাপে ধাপে খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এমনকী কয়েকটি ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত অটোমেটিক রুটও খোলা হতে পারে। এর ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব। এক, বিদেশি সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন মন্ত্রকের দোরগোড়ায় ঘুরে অযথা সময় অপচয় করতে হবে না। দুই, ৪৯ শতাংশ থাকলে মালিকানা ভারতীয় সংস্থার হাতেই থাকবে।

আর মোদী সরকারের আশা, এক বার শিল্পমহলের আস্থা ফিরে এলে বৃদ্ধির চাকাও ঠিক পথে গড়াতে শুরু করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi foreign investment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE