এক মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আর এক মৃত্যু-রহস্য! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রাক্তন কূটনীতিক শশী তারুরের এ বারের নির্বাচনী লড়াইয়ে লম্বা ছায়া ফেলছে অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরপর ঘটনা।
মাসদুয়েক আগে দিল্লিতে এআইসিসি-র অধিবেশন চলাকালীন অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল শশীর স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের। আইনের চোখে সেই ঘটনায় শশী এখনও মুক্ত। রাজনীতির আদালতে বিরোধীরা তাঁকে ছাড় দিতে নারাজ! কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার কিনারা কেন হল না, তিরুঅনন্তপুরমে ভোটের প্রচারে এই প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস-বিরোধীরা। ব্যক্তিগত জীবনের দুর্ঘটনাকে রাজনীতির হাতিয়ার করায় শশী যখন বাম-বিজেপি-র বিরুদ্ধে অমানবিকতার অভিযোগ আনছেন, সেই সময়েই তিরুঅনন্তপুরমের এক চা-বিক্রেতার মৃত্যু ঘটনাপ্রবাহকে আরও জটিল করেছে। শশী বিরোধীদের অপপ্রচার এবং অতিরঞ্জনকেই দুষছেন।
নিজের লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ শশী শুক্রবার গিয়েছিলেন ইউসুফ নামে এক ব্যক্তির চায়ের দোকানে। তিরুঅনন্তপুরমের শহরতলি আম্বালাতারার ওই দোকান-মালিক কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যান। শশীর দাবি, বাড়িতে ফিরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ইউসুফের। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং বিরোধীদের অভিযোগ, ঘটনা এত সোজা নয়। তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা রমেশ নায়ারের কথায়, “সুনন্দার মৃত্যুর বিচার হয়নি। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে প্রচারে দেখে ওই চা-বিক্রেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এসেছেন? তাঁকে ফিরে যেতে বলেছিলেন তিনি সকলের সামনেই। তার পরে কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা ইউসুফকে মারধর করে। তার জেরেই হৃদ্রোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।” যার জবাবে শশী বলছেন, “আমি গুণ্ডা পুষি না! রাজনীতিতে উন্নয়নের কথাই বলি। ইউসুফের সঙ্গে আমি সৌজন্যবশত হাত মিলিয়েছিলাম। গল্প তৈরি করে আমাকে ভিলেন বানানোর জন্য বিশেষ কিছু দলের সমর্থকেরা এই সব কথা রটাচ্ছেন!”
বস্তুত, ভোটের প্রচারে সুুনন্দা-প্রসঙ্গ বারেবারেই এসে পড়ায় কেরলে এখন নড়েচড়ে বসতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও। টিভি চ্যানেলে শশী সম্পর্কে ‘খুনি’ বিশেষণ ব্যবহার করায় সিপিএম এবং বিজেপি-র দুই নেতাকে নোটিসও দিয়েছে কমিশন। বিজেপি-র মহিলা মোর্চা তিরুঅনন্তপুরম শহরে কিছু হোর্ডিং লাগিয়েছে, যেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নারীঘাতী হিসাবে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে স্বয়ং শশীও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ করেছেন।
গোটা পরিস্থতি সম্পর্কে টুইটারে শনিবার শশী লিখেছেন, “আমি আবিষ্কার করছি, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা কত নীতিহীন এবং অসৎ হতে পারেন! কোন তলে এঁরা নামতে পারেন, তার কোনও সীমা নেই! পুরোটাই ঘৃণ্য রাজনীতি!” এক জন নিরীহ মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুকে নিয়ে দু’দিন ধরে যে হইচই চলছে, সুনন্দা-কাণ্ডের পাশাপাশি সেই দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন সহ-মহাসচিব।
ভিএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সুনন্দা-ক্ষত খুঁচিয়ে তুলেছেন রাজনৈতিক স্বার্থে। শশীর বক্তব্য, “ওই ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসকে দোষ দিয়ে লাভ কী? আমার নামে এফআইআর নেই, চার্জশিটও নেই। দিল্লি পুলিশকে গিয়েই বরং ওঁরা তদন্তের অগ্রগতি জিজ্ঞাসা করুন!” ভিএসের পাল্টা দাবি, তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। বিরোধী দলনেতার কথায়, “এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর স্ত্রী ওই ভাবে মারা গেলেন। বিয়ের ৭ বছরের মধ্যে কোনও মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু পূর্ণাঙ্গ তদন্তসাপেক্ষ। অথচ এই ঘটনায় এখনও সত্য উদঘাটন হল না! এটা বলা কীসের অপরাধ?”
শশীর ভরসা, কেরলের রাজ্য প্রশাসন সব রকম ভাবেই তাঁর পাশে। মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি সব চেয়ে বেশি সময় দিয়েছেন তাঁর কেন্দ্রেই। শশীর মন্তব্য, “ভোটারদের সঙ্গে এক দিনে ৭টি মুখোমুখি আসরে মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়েছি। ওঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy