চার বছর আগে যখন সস্ত্রীক ভারতে এসেছিলেন, সে বার দুই মেয়েকে সঙ্গে আনতে পারেননি। মালিয়া ও সাশা, দু’জনেরই পরীক্ষা ছিল সে সময়। পরীক্ষার দিন ক্ষণ বাধ না সাধলে এই যাত্রায় দুই কন্যাকেও ভারত দেখানোর ইচ্ছে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গত সেপ্টেম্বরেই ওয়াশিংটনে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা হয়েছিল বারাকের। মোদী সে সময়ই ওবামা পরিবারকে ঘরোয়া ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই মোদীকে জানান, আগের বার ভারতে নিয়ে যাননি বলে দুই মেয়ের কিছুটা অভিমান রয়েছে। এখন দু’জনেই আরও বড় হয়েছে। এক জন ষোড়শী, আর এক জন ত্রয়োদশী। দু’জনেরই ভারত দেখার ইচ্ছে। আমেরিকা সফরের মাস দুই পরে মোদী যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশেষ অতিথি হিসেবে ওবামাকে আমন্ত্রণ জানান, তখনও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসার অনুরোধ করেন।
ওবামা পরিবারের আর একটি অপূর্ণ ইচ্ছেও এ বার পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত সফরে সময়ের অভাবে তাজমহল দেখা হয়নি। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বার আগরা যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্টের কর্মসূচিতে একটি টাউন হল বক্তৃতাও থাকছে।
ওবামার সফরের কথা ঘোষণা হওয়ার পরপরই ভারতকে ঘিরে জঙ্গি সংগঠনগুলির সক্রিয়তা বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর একটা অন্য কারণও নজরে আনছেন কূটনীতিকরা। সাধারণ ভাবে পশ্চিমের কোনও শীর্ষ নেতা দক্ষিণ এশিয়া সফরে এলে ভারত-পাকিস্তান, দু’টি দেশেই সফর করেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বারে কিন্তু ইসলামাবাদ যাচ্ছেন না ওবামা। সন্ত্রাসবাদ এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার সব চেয়ে জ্বলন্ত সমস্যা যার আঁচ পড়ছে মার্কিন মুলুকেও। আল কায়দা এবং তালিবানি শক্তির মোকাবিলার জন্য যৌথ ভাবে লড়াই করার কৌশল নিয়ে কথা হবে হবে মোদী-ওবামা বৈঠকে।
এর পাশাপাশি, যে বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা চাপ তৈরি করতে চাইবে, তা হল কার্বন দূষণ কমানো ও পরিবেশ বিষয়ক চুক্তি করা। কার্বন দূষণ কমানোর বিষয়টি ভারতে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে শিল্পায়নের গতি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মোদীর পক্ষে শিল্পসংস্থাগুলির উপরে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়া দুষ্কর। যে কারণে আর্থিক সংস্কারের বিভিন্ন দিকের মতো এই ক্ষেত্রেও ভারতে গতি কিছুটা শ্লথ। তবে প্রতিবেশী চিন এর মধ্যেই আমেরিকার সঙ্গে পরিবেশ সংক্রান্ত চুক্তি সেরে ফেলছে। এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান হল, শিল্পজনিত দূষণ কমানোর চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক ভাবে আরও বেশি সহায়তা জোগানো উচিত ধনী দেশগুলির। ওবামার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের এই অবস্থানই জোরালো ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা হবে। দুই শীর্ষ নেতা ও দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো, অসামরিক পরমাণু চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়েও কথা হওয়ার সম্ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy