লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যসভা। সেখানে পাল্লা ভারী বিরোধীদেরই। এই অবস্থায় রাজ্যসভার কাঁটা এড়াতে বাজেট অধিবেশনের পর সরাসরি যৌথ অধিবেশন ডেকে একাধিক সংস্কারের বিল পাশ করানোর কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কেন্দ্রের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর সেনাপতি অরুণ জেটলির কথায়, “সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভেবেই সরকার সংস্কারের বিলগুলি এনেছিল। কিন্তু জনতার ভোটে জয়ী সাংসদরা যে বিল লোকসভায় পাশ করাচ্ছেন, সংসদের দুই কক্ষের সব দলের সাংসদকে নিয়ে গঠিত স্থায়ী কমিটি যে বিলে অনুমোদন দিচ্ছে, সেটি রাজ্যসভায় কিছু সাংসদের বিরোধিতায় আটকে যাচ্ছে! এটা কী করে হয়?”
বস্তুত রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার বিষয়টি গোড়া থেকেই মোদী-জেটলিদের বড় অস্বস্তির কারণ। এই অস্বস্তি কাটাতেই রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হওয়া পর্যন্ত কী ভাবে সংসদের উচ্চকক্ষকে এড়িয়ে বিভিন্ন বিল পাশ করানো যায়, তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা শুরু করেছে সরকার। মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্যের কথায়, “সবার সঙ্গে কথা বলে যেটি জানা গিয়েছে, তা হল, লোকসভায় বিল পাশের পর সেটি যদি রাজ্যসভায় না নিয়ে যাওয়া হয় বা নিয়ে যাওয়া হলেও তাতে সম্মতি না পাওয়া যায়, তা হলে ধরে নেওয়া হবে বিলটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ফলে সংস্কারের যে সব বিলে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি হয়েছে, সেগুলি লোকসভায় পাশ করিয়ে সরাসরি যৌথ অধিবেশন ডেকে পাশ করিয়ে নিতে পারে সরকার।”
তবে শুধু এখানেই থামতে চাইছেন না মোদী-জেটলিরা। অর্থবিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি শুধু মাত্র লোকসভাতেই পাশ করিয়ে যাতে সংসদের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়, সে জন্য একটি আইন সংশোধনের কথাও ভাবছে সরকার। কিন্তু এ ভাবে রাজ্যসভাকে সরাসরি পাশ কাটানোর চেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। মোদী সরকারকে ‘অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি’ বলে কটাক্ষও করছে তারা।
এতে কি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না সরকারের?জেটলির দাবি, মোটেই না। কারণ, দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে মোদী সরকার যে সব পদক্ষেপ করতে চাইছে, তা সাধারণ মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত করেই। বিরোধীরা বিল পাশের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কিন্তু বিলের সারবস্তু নিয়ে কিছু বলছে না। আর যৌথ অধিবেশন ডাকা মোটেই সংবিধান-বিরোধী নয়। যদি তাই হতো, তা হলে সংবিধান প্রণেতারা যৌথ অধিবেশন ডাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তই করতেন না। সরকারের মতে, ছ’মাসের মধ্যে অর্ডিন্যান্স করা বিলগুলি যদি পাশ না হয়, তা হলে কেন্দ্র আর এক বার অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে। কিন্তু তার আগে সংসদের একটি সভায় পাশ হয়ে গেলে যৌথ অধিবেশন ডাকা হতে পারে। বাজেট অধিবেশনের পরেই এক সঙ্গে সবক’টি বিল পাশ করানো হবে। সংবিধান অনুসারে যৌথ অধিবেশনে একাধিক বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
প্রশ্ন হল, তা হলে কি বিল পাশের জন্য সরকারকে বারবার যৌথ অধিবেশন ডাকতে হবে?
মোদী সরকারের আশা, এক বার যৌথ অধিবেশন ডাকার পর বিরোধীরা অনেকটাই শান্ত হবে। এক মন্ত্রীর কথায়, “যদি তারা দেখে, রাজ্যসভায় তাদের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার যৌথ অধিবেশন ডেকে বিল পাশ করাচ্ছে, তা হলে হয়তো ভবিষ্যতে এমন বিরোধিতা তারা করবে না। আর ২০১৭-র মধ্যে যখন আরও এক ডজন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাবে, তখন রাজ্যসভাতেও সরকারের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হবে।” বিজেপির বক্তব্য, তখন সংসদের কোনও কক্ষে কোনও বিল পাশেই অসুবিধা হবে না। সরকারের এক মন্ত্রীর কথায়, “সে সব না বুঝেই বিরোধীরা অযথা হট্টগোল পাকাচ্ছে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy