Advertisement
০৪ মে ২০২৪

লেখনীতেও লেখা থাকতে পারে বিপদ, তল্লাশিতে বাদ নয় কিছু

কলম, চশমার খাপ, চাবির রিং, টর্চ, কোমরের বেল্ট। কিংবা পাগড়ি, জামার কলার, বগল, জামার হাতার অগ্রভাগ বা ‘কাফ’, মায় জুতো। কিছুই হেলাফেলা করার অবকাশ নেই। এখন আর প্রশ্ন নেই তুচ্ছ জিনিসকে তুচ্ছ ভাবে নেওয়ার। সব কিছু ভাল ভাবে ঘেঁটে দেখতে হবে। শ্যেনদৃষ্টিতে নজর রাখতে হবে সব কিছুর উপর। কারণটা আর কিছুই নয়। মারাত্মক বিপদ ঘাপটি মেরে থাকতে পারে এই সমস্ত আপাত নিরীহ বস্তুতেও।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

কলম, চশমার খাপ, চাবির রিং, টর্চ, কোমরের বেল্ট। কিংবা পাগড়ি, জামার কলার, বগল, জামার হাতার অগ্রভাগ বা ‘কাফ’, মায় জুতো। কিছুই হেলাফেলা করার অবকাশ নেই। এখন আর প্রশ্ন নেই তুচ্ছ জিনিসকে তুচ্ছ ভাবে নেওয়ার। সব কিছু ভাল ভাবে ঘেঁটে দেখতে হবে। শ্যেনদৃষ্টিতে নজর রাখতে হবে সব কিছুর উপর।

কারণটা আর কিছুই নয়। মারাত্মক বিপদ ঘাপটি মেরে থাকতে পারে এই সমস্ত আপাত নিরীহ বস্তুতেও। কারণ এগুলোর মধ্যেই আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস)-এর অংশবিশেষ লুকিয়ে রাখার কৌশল জঙ্গিরা রপ্ত করে ফেলেছে, এ কথা জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

যে ভাবে মারণাস্ত্র লুকোনোর নিত্যনতুন পদ্ধতি বার করে জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত চমকে দিচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেহ তল্লাশির সামগ্রিক পদ্ধতিটাই আরও ব্যাপক হতে হবে এবং অনেক বেশি খুঁটিয়ে তল্লাশি করতে হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে।

সম্প্রতি, ভিআইপি-র কোনও অনুষ্ঠান বা সভায় যোগ দিতে আসা লোকজনের দেহ তল্লাশির গোটা ব্যবস্থাই ঢেলে সাজার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর হামলা চালানো হবে বলে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান গোষ্ঠীর নেতা এহসানউল্লাহ এহসান যে হুমকি দিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রের খবর।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, এহসানউল্লাহর হুঁশিয়ারি আত্মঘাতী হামলারই ইঙ্গিত। ২ নভেম্বর ওয়াঘা সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় প্রায় ৬০ জন নিহত হন। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের একটি অংশ ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেহ তল্লাশির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শরীরের বিভিন্ন অংশে জঙ্গিরা যে ভাবে আইইডি বা তার অংশবিশেষ গোপন করে রাখছে, তাতে দেহ তল্লাশির পদ্ধতি ও চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে বদল আনা অপরিহার্য।

যেমন, কারও কাছে কোনও আপত্তিকর বস্তু বা ছোটখাটো অস্ত্র পাওয়া গেলে তখনই তল্লাশি থামিয়ে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, ওই ধরনের কিছু পাওয়ার পরেও তল্লাশি চালিয়ে যেতে হবে। হয়তো দেখা যাবে আরও বিপজ্জনক বস্তু আরও গোপন কোনও জায়গায় লুকোনো আছে। অনেক সময় ছোট ছুরি কিংবা লাইসেন্সড রিভলভার সহজেই ধরা পড়ার মতো অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ভাবেই রাখা হয়। যাতে আরও বেশি আশঙ্কাজনক হাতিয়ারকে আড়াল করে রাখা যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, এক জনের কাছেই যে একটা আস্ত আইইডি থাকবে, তা না-ও হতে পারে। কারণ এতে সহজে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তার চেয়ে এক এক জন জঙ্গি আইইডি-র এক একটি অংশ বহন করলে নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে ধুলো দেওয়া সহজ। সে ক্ষেত্রে কেউ বিস্ফোরক, কেউ ডিটোনেটর, কেউ ব্যাটারি, কেউ বা মোবাইল ফোন নিয়ে পৌঁছয়। তার পর বিস্ফোরণস্থলে বসেই তৈরি করে নেয় আইইডি। আর এই ভাবে বিস্ফোরণ ঘটালে তা ঠেকানো বেশ কঠিন বলে স্বীকার করছেন গোয়েন্দারাও।

নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কাউকে তল্লাশির সময়ে মনে রাখতে হবে, সে সশস্ত্র। সেই মতো সাবধানতাও নিতে হবে। বাচ্চা-বুড়ো, পুরুষ-মহিলা, সবার ক্ষেত্রে একই সতর্কতা প্রযোজ্য। তল্লাশির আগে নিশ্চিত করতে হবে, তার হাত ও পকেট যেন সম্পূর্ণ খালি থাকে। ছুরি, কাঁচি বা বন্দুকই শুধু নয়, কোনও জিনিসই থাকা চলবে না। কারণ মামুলি জিনিসের আড়ালেই মারণাস্ত্র বহন করছে জঙ্গিরা।

নির্দেশ বলছে, এক জনের দেহ তল্লাশিতে নিয়োগ করতে হবে দু’জন করে নিরাপত্তারক্ষী। এক জন রক্ষী তল্লাশি চালাবেন, অন্য জন সেই সময়ে গোটা প্রক্রিয়ার উপর কড়া নজর রাখবেন। কারণ, হঠাৎ ধরা পড়ে গেলে ধৃত ব্যক্তি গুলি চালাতে পারে, কিংবা আইইডি সক্রিয় করে দিতে পারে। এমন বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে, এক জন নিরাপত্তারক্ষী কারও মাথা (পাগড়ি বা টুপি সমেত) থেকে কোমর পর্যন্ত পরীক্ষা করবেন দাঁড়িয়ে। আর অন্য নিরাপত্তারক্ষী চেয়ারে বসে কোমর থেকে পা (জুতো-সহ) পর্যন্ত তল্লাশি চালাবেন ‘হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর’ দিয়ে। আইইডি বা আইইডি-র অংশ লুকিয়ে রাখার নিয়ে জঙ্গিদের ব্যবহৃত কৌশল যেন নিরাপত্তারক্ষীদের জানা থাকে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র এক অফিসার জানান, গত বছর অক্টোবরে পটনার গাঁধী ময়দানে নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত হায়দার আলি জেরায় জানিয়েছে, প্রথমে তারা জ্যাকেট-বোমা দিয়ে হামলা চালানোর কথা ভেবেছিল। কিন্তু রাঁচির কাছে এক জায়গায় পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেখা যায়, ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই, পরিকল্পনা বাতিল করে তারা। ওই গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “হায়দার আলির বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, পটনাতেই মোদীর উপর আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা ছিল। আর এখন তো মোদী প্রধানমন্ত্রী।”

আইবি-র বক্তব্য, এ বছরের ২৯ জুলাই প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের তুতো ভাই হাশমত কারজাইকে যে আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়, তার পাগড়িতে আইইডি লুকোনো ছিল। তালিবান জঙ্গিরাই ওই হামলা চালিয়েছে বলে জানা যায়। ওই গোয়েন্দাকর্তা আরও বলেন, “তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে ‘খতম’ করার হুমকি দিয়েছে, সেখানে এই ধরনের হামলার ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে আমাদের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

surbek biswas security for modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE