Advertisement
E-Paper

লালুর সঙ্গে জোটের পথ খুলে ইস্তফা নীতীশের

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির দায় মেনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নীতীশ কুমার। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিলের কাছে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার কোনও সুপারিশ তিনি করেননি। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে নীতীশ বলেন, “বিকল্প সরকার গড়ার পথ খোলা রেখে দিয়েছি।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এখানেই বিহার রাজনীতির ‘চাণক্য’ মোক্ষম চাল চেলেছেন। তাঁর লক্ষ্য, মোদী ঝড়ে বিধ্বস্ত বিহারের সমস্ত অ-বিজেপি বা বলা ভাল, বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে জোটবদ্ধ করে বিধানসভায় আপাতত আগামী দেড় বছরের জন্য বিজেপি-কে রুখে দেওয়া।

স্বপন সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০৩:১৬
সাংবাদিক বৈঠকে নীতীশ কুমার। শনিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই

সাংবাদিক বৈঠকে নীতীশ কুমার। শনিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির দায় মেনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নীতীশ কুমার। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিলের কাছে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার কোনও সুপারিশ তিনি করেননি। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে নীতীশ বলেন, “বিকল্প সরকার গড়ার পথ খোলা রেখে দিয়েছি।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এখানেই বিহার রাজনীতির ‘চাণক্য’ মোক্ষম চাল চেলেছেন। তাঁর লক্ষ্য, মোদী ঝড়ে বিধ্বস্ত বিহারের সমস্ত অ-বিজেপি বা বলা ভাল, বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে জোটবদ্ধ করে বিধানসভায় আপাতত আগামী দেড় বছরের জন্য বিজেপি-কে রুখে দেওয়া। প্রসঙ্গত, বিহারে বিধানসভা ভোট আগামী বছর নভেম্বরে।

লোকসভা ভোটে বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে নীতীশের সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) পেয়েছে মাত্র দু’টি। অন্য দিকে বিজেপি একাই পেয়েছে ২২টি। তাদের জোটসঙ্গী লোকজনশক্তি পার্টি ৬টি এবং রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি ৩টি। এ হেন খারাপ ফলের দায় স্বীকার করে নিয়ে নীতীশ আজ বলেন, “আমি সামনে থেকে ভোট প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছি। তাই দায় নিয়ে ইস্তফা দিচ্ছি।” একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে তাঁর দাবি, এ বারের মতো সাম্প্রদায়িক লাইনে ভোট রাজ্যে এর আগে আর কখনও হয়নি।

দীর্ঘদিন বিজেপির জোটসঙ্গী থাকার পরে নীতীশ গাঁটছড়া খুলেছিলেন মোদী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পরেই। এ নিয়ে জেডিইউ নেতৃত্বের একটা বড় অংশের আপত্তি থাকলেও নিজের লড়াইকে মূলত মোদীর বিরুদ্ধেই নিয়ে যান নীতীশ। অনেকেরই ধারণা, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভোটের ফল বলছে, সংখ্যালঘু ভোট সে ভাবে নীতীশের ঝুলিতে তো যায়নিই, উল্টে বিজেপির সঙ্গত্যাগের ফলে উচ্চবর্ণের একটা বড় অংশের ভোট হারিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, নীতীশের কপালের ভাঁজ গভীর করে উত্থান হয়েছে লালু প্রসাদের দল আরজেডি-র। লোকসভা ভোটে ৪টি আসন পেয়েছে তারা।

জেডিইউ সূত্র বলছে, লালুর সঙ্গেও নীতীশের ‘অহং’-এর লড়াই থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদীকেই বড় শত্রু বেছেছেন বিহারের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী। জেডিইউ ভাঙিয়ে বিজেপি যাতে সরকার গড়তে না পারে, সে জন্যই তড়িঘড়ি ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। কারণ, একদা রামবিলাসের ঘনিষ্ঠ, নীতীশ মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নরেন্দ্র সিংহের নেতৃত্বে এক দল জেডিইউ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে খবর। আজ নীতীশের ইস্তফার পরে জেডিইউ-এর এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, “আমাদের ক্ষোভ তো নীতীশের বিরুদ্ধে। তিনি সরে গেলে সেই ক্ষোভ তো আর থাকে না। আর বিধায়করা যদি দেখেন যে বিজেপি সরকার গড়তে পারছে না, তবে দু’এক জন বাদে কেউই দল ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না।”

এই পরিস্থিতি বুঝে সরকার গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী নন একদা নীতীশ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা সুশীল মোদী। তিনি বলেন, “মূলত নিজের

ভাবমূর্তি বাঁচাতেই এই চালটি নীতীশ চেলেছেন। আমরা পুরো বিষয়টি নজরে রেখেছি।”

২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় জেডিইউ-এর বিধায়ক সংখ্যা এখন ১১৮। কংগ্রেসের ৪ জন ছাড়াও ৮ নির্দল বিধায়ক তাদের সঙ্গে আছে। অ-বিজেপি দল হিসেবে বাকি রইল লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ২২ বিধায়ক। জেডিইউ-এর ওই শীর্ষ নেতার মতে, নির্দলদের বাদ দিলেও অ-বিজেপি জোটের বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪৪। যা ৯১ বিধায়কের দল বিজেপি-কে ঠেকানোর পক্ষে যথেষ্ট।

পরিস্থিতি যে সে দিকেই যেতে চলেছে তার ইঙ্গিত দিয়ে জেডিইউ-এর সর্বভারতীয় সভাপতি শরদ যাদব বলেছেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে লালুপ্রসাদের সঙ্গে আমরা জোট বাঁধতেই পারি। কোনও অসুবিধা নেই।” আর পটনায় বসে লালুর বক্তব্য, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। সোমবার পরিষদীয় দলের বৈঠকও ডেকেছি।”

শেষ পর্যন্ত লালু যদি জেডিইউ-এর সঙ্গে হাত মেলান, তা হলে সেই জোটের নেতা কে হবেন? এ ক্ষেত্রেও উঠে আসছে সদ্য মাধেপুরা লোকসভা কেন্দ্রে হারা শরদ যাদবেরই নাম। কারণ, লালুর সঙ্গে তাঁর তেমন বিরোধ নেই। শরদ বিধানসভার সদস্য নন। তবে বিধান পরিষদে তাঁকে জিতিয়ে আনতে সমস্যা হবে না। এক জেডিইউ নেতার কথায়, “নীতীশও তো বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছিলেন। এখনও তিনি বিধানসভার সদস্য নন।”

বিজেপি-কে প্রধান শত্রু ধরে নিয়ে এক জোট হতে পারলে বিধানসভা ভোটের অঙ্ক অনেকটাই পাল্টে যাবে বলে আশাবাদী জেডিইউ নেতারা। কারণ, লোকসভায় বিজেপি জোট ৩১টি আসন পেলেও শতকরা হিসেবে কিন্তু তারা বিরোধীদের মোট ভোটের থেকে পিছিয়ে। তাদের মোট ভোটের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ। অন্য দিকে, কংগ্রেস-আরজেডির মিলিত ভোট ৩০.২৫ শতাংশ। এর সঙ্গে নীতীশের ১৬ শতাংশ ভোট যোগ করলে বিজেপি-বিরোধী মোট ভোটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশ।

swapan sarkar nitish resignation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy