বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে নজরকাড়া ফল করতে ফের মোদী-জাদুতেই আশ্রয় নিতে চাইছে বিজেপি।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দু’মাস পার হয়ে যাওয়ার পরে দলের পক্ষ থেকে একটি সমীক্ষা করা হয়। বিশেষ করে ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে। বিজেপি সূত্রের মতে, সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাজ্য দখলের জন্য এখনও বিজেপির তুরুপের তাস নরেন্দ্র মোদীই। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতা সামনে এনে সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর এখন সেই মোদী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতাও বিচার করে দেখা হচ্ছে কষ্টিপাথরে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমতায় এসেই মোদী অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবেন, এমন প্রত্যাশা তৈরি হলেও অনেকাংশেই আশাহত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আমজনতার প্রত্যাশা ছিল, ক্ষমতায় এসেই মোদী জাদু-দণ্ড ছুঁইয়ে দিয়ে সব বদলে দেবেন। বাস্তবে তা হয়নি। মূল্যবৃদ্ধিও সময় মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তার উপর রেলের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। রেলের ভাড়ার বিষয়টি সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত। তা সত্ত্বেও বিজেপির সমীক্ষা বলছে, মানুষ ভরসা রাখছেন মোদীর উপরেই।
তাই মোদী-জাদু ফিরিয়ে এনেই বিজেপিকে রাজ্য জয়ের কৌশল তৈরি করতে হবে।
এই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিজেপির এক নেতা বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের সময় মানুষ ভোট দিয়েছিলেন কেন্দ্রে ক্ষমতা বদলের জন্য। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন হয় অনেকটাই স্থানীয় বিষয়ের উপরে। এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদীই একমাত্র মুখ, যাঁকে ভরসা করেই এই বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব।” এই নেতার মতে, মোদীর উপরে মানুষের যে গগনচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, প্রথম দু’মাসে তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছিল। কিন্তু ১৫ অগস্ট লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তাতে সেই দশা অনেকটা কেটে গিয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সব বক্তব্য রেখেছেন, তাতে মহিলারা যথেষ্ট প্রভাবিত হন। রাজ্য জয়ের জন্য সাংগঠনিক স্তরে অমিত শাহ তো পদক্ষেপ করছেনই। পাশাপাশি, জনতাকে জাগিয়ে তুলতে মোদীর ক্যারিশমাকেও ব্যবহার করা যায়। সরকারের করা পদক্ষেপগুলি যাতে মানুষের আরও বেশি নজরে পড়ে, সে দিকেও খেয়াল রাখা উচিত।
এই সমীক্ষার উপরে ভিত্তি করেই বিজেপি নেতৃত্ব মোদীকে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন। ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে সরকারি কর্মসূচি নিয়ে মোদী রাজ্যওয়াড়ি সফরও শুরু করে দিয়েছেন। সরকারি কর্মসূচি হলেও মোদী সেখানে কার্যত রাজনৈতিক বক্তৃতাই দিচ্ছেন। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় এই সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হবে। যদিও ইউপিএ সরকারের মতো মোদী একশো দিনের কোনও লক্ষ্যমাত্রা রাখেননি, কিন্তু দলের প্রস্তাব সেই দিন বড়সড় একটি কর্মসূচির আয়োজন করা হোক। যাতে মোদী সরকারের প্রথম একশো দিনের সাফল্য জনতার সামনে মেলে ধরা যায়।
কিন্তু মোদী-মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সদস্যের কথায়, “প্রধানমন্ত্রী যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সমস্যা হল, দেশের হাল যে অবস্থায় ফেলে রেখেছিল ইউপিএ সরকার, সেখান থেকে পুরোপুরি মোড় ঘোরাতে কিছুটা সময় দরকার। আমরা নিশ্চিত, সবুরে মেওয়া ফলবে। ভুলে গেলে চলবে না, শুধুমাত্র সরকারের সাফল্যের উপরেই ভর করে নরেন্দ্র মোদী পাঁচ বছর পর ফের জনতার দরবারে যাবেন। ফলে তার অনেক আগেই সুদিন নিশ্চিত করতে চান তিনি।”
ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে, এই রাজ্যগুলিতে মোটামুটি মোদীর পক্ষেই হাওয়া বইছে। হরিয়ানায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে, সেখানে বিজেপির জোট নিয়ে সঙ্কট মেটেনি। তবে বিজেপির পক্ষে বাড়তি সুবিধা, কংগ্রেস সেখানে ছত্রভঙ্গ। আর সমস্যা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের উপত্যকায়। সেখানে বিজেপির দাপট বাড়াতে এখনও অনেক কালঘাম ছোটাতে হবে। ফলে সরকার ও দল উভয়কেই এই রাজ্যে আরও নিখুঁত কৌশল তৈরি করতে হচ্ছে।
সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “দিল্লিতে রাজ্যসভা কাঁটা দূর করার জন্য রাজ্যগুলিতে দলের দাপট বাড়ানো আরও বেশি প্রয়োজন। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি রাজ্যসভায় সংস্কারের বিভিন্ন বিল আটকে দিচ্ছে। রাজ্যসভায় এনডিএ-র শক্তি বাড়ানোর জন্যও বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে দলের ভাল ফল দরকার। সেই হিসেবেই দল রণনীতি তৈরি করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy