অতীতের প্রকল্পগুলির থেকে নেহরু-ইন্দিরা-রাজীবের নাম নিঃশব্দে মুছে ফেলছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তার বদলে দেওয়া হচ্ছে জনসঙ্ঘের নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায় এমনকী আরএসএস-এর নানাজি দেশমুখের নাম। কিন্তু নামকরণ যা-ই হোক, পুরনো প্রকল্পগুলি বাতিল করার পথে হাঁটছে না নতুন সরকার।
কিন্তু কেন এই নাম পরিবর্তন? সরকারের মুখপাত্র কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর বলেন, “প্রত্যেকটি প্রকল্পের একটা কার্যকালের মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তখন সেই প্রকল্পগুলিকে মন্ত্রিসভা পুর্নমূল্যায়ন করে। তার পর সরকার এগুলির নতুন নাম দিতেই পারে। কারণ এ’টি তো তখন সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প!”
শেক্সপীয়রের বহু ব্যবহৃত শব্দবন্ধ নামে কি বা আসে যায়? এ ক্ষেত্রেও মূল প্রশ্নটা হল, এই সব সামাজিক প্রকল্প বাতিল হচ্ছে না থাকছে? সেই প্রকল্পগুলিতে যে সব কর্মী কাজ করতেন, তাঁদের চাকরি থাকছে না যাচ্ছে? ক’দিন আগেও পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্দিরা বিশ দফা কর্মসূচি’তে কাজ করছিলেন প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কর্মী। ‘ইন্দিরা বিশ দফা কর্মসূচি’ বাতিল করলেও নরেন্দ্র মোদী কর্মীদের বেকার করেন কি না, সেটাই ছিল দেখার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে একটি লিখিত নির্দেশে জানানো হয়েছে, ‘বিভিন্ন সাংসদের সুপারিশ আমাদের কাছে এসেছে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে কৃষি বিকাশ শিল্পকেন্দ্রকে পশ্চিমবঙ্গে নিয়মিত করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিশ দফা কর্মসূচির অর্ন্তগত সাড়ে ছ’হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মীদের ফের কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’ প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের ওই নির্দেশে বলা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে আরও বেশি করে প্রকল্পভিত্তিক কর্মসূচিতে সামিল করা হবে।
ইন্দিরা গাঁধী ক্ষমতায় ফেরার পর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নতুন করে বিশ দফা কর্মসূচি প্রবর্তন করেন। ১৯৮২ সালের ১৪ জানুয়ারি বেতার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা ঘোষণা করেন, জরুরি অবস্থার সময় যে বিশ দফা কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল, তাকে আবার ঢেলে সাজাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ও পশ্চিমবঙ্গ সহ ছ’টি রাজ্যে ফের বিশ দফা কর্মসূচি চালু করা হয়।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি বিকাশ শিল্পকেন্দ্রের কর্ণধার তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে বৈঠক করেছেন। মন্ত্রী স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘ইন্দিরা বিশ দফা কর্মসূচি’র সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মোদীর গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যেই এটিকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। তরুণবাবু বলেন, দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলির তদারকিতেই যুক্ত থাকবেন এই কর্মীরা।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, এই একই সমস্যা দেখা যায় পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যেও। এই সব রাজ্যের কৃষি বিকাশ শিল্পকেন্দ্রগুলিও একই ভাবে কৃষিমন্ত্রীর কাছে দরবার করে। কিন্তু তাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নামকরণ যাই হোক, সরকার সামাজিক প্রকল্পগুলি বাতিল করার পথে হাঁটছে না। অরুণ জেটলি তাঁর প্রথম বাজেটেও এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। অরুণ জেটলির কথায়, “ভারতের মতো মিশ্র অর্থনীতির রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনই সামাজিক কল্যাণের বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া কর্তব্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy