Advertisement
০৩ মে ২০২৪

শিবিরেই আশ্রয়, ঘর টানছে রবিরামকে

ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়ই যেন তাঁর কপালে লেখা রয়েছে। এমনই ভাবছেন কোকরাঝাড় জেলার দক্ষিণ গৌড়নগর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক রবিরাম টুডু। না হলে ১৪ বছর ত্রাণ শিবিরে কাটানোর পর বাড়ি ফেরার দু’বছরের মধ্যে ফের ঘরছাড়া হতে হবে কেন? ২৩ ডিসেম্বর রাতে এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠির জঙ্গিরা আদিবাসীদের গুলি করে মারার পরে হামলার আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে স্ত্রী ছেলে মেয়েকে নিয়ে তাঁকে ফের আসতে হল ত্রাণ শিবিরে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে কোকরাঝাড় থানার কারিগাঁও এমই স্কুলের আশ্রয় শিবিরেই সপরিবারে আছেন তিনি।

রাজীব চৌধুরী
ধুবুরি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩
Share: Save:

ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়ই যেন তাঁর কপালে লেখা রয়েছে। এমনই ভাবছেন কোকরাঝাড় জেলার দক্ষিণ গৌড়নগর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক রবিরাম টুডু। না হলে ১৪ বছর ত্রাণ শিবিরে কাটানোর পর বাড়ি ফেরার দু’বছরের মধ্যে ফের ঘরছাড়া হতে হবে কেন? ২৩ ডিসেম্বর রাতে এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠির জঙ্গিরা আদিবাসীদের গুলি করে মারার পরে হামলার আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে স্ত্রী ছেলে মেয়েকে নিয়ে তাঁকে ফের আসতে হল ত্রাণ শিবিরে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে কোকরাঝাড় থানার কারিগাঁও এমই স্কুলের আশ্রয় শিবিরেই সপরিবারে আছেন তিনি। ঘটনার পর সাতদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও চোখ বুজলেই তাড়া করছে সেই রাতের স্মৃতি। সে কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন তিনি। চোখ মুছতে মুছতে জানালেন, ২৩ ডিসেম্বর রাতভর আতঙ্কের মধ্যে বাড়িতেই ছিলেন। সকাল থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। এরপরেই বাড়ি ছেড়ে প্রায় চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সপরিবারে কারিগাঁও এম ই স্কুলের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন তিনি।

১৯৯৮ সালে কোকরাঝাড়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষের সময় তাঁর বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেইসময় বাড়ি ছেড়ে কোকরাঝাড়ের জয়পুর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে সময় রবিরাম বাবুর কোনও ছেলে মেয়ে ছিল না। স্ত্রীকে নিয়েই শরণার্থী শিবিরেই থাকতেন তিনি। সেখানেই ১৯৯৯ সালে মেয়ে মিনির।

এর পরেই হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে তিল তিল করে পয়সা উপার্জন করে মেয়েকে গরুভাষার একটি বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করান। এ ভাবে প্রায় ১৪ বছর শরণার্থী শিবিরে থাকার পরে ২০১২ সালে নিজের ভিটে মাটিতে ফিরে সেখানে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। রবিরাম বাবুর মেয়ে মিনি টুডুর বয়স এখন ১৫ বছর। ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে মিনি। এরই মধ্যে আবারও ভিটে মাটি ছেড়ে ফের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে হল তাঁদের। এ বার আবার কত দিন শরণার্থী শিবিরে থাকতে হবে তা জানেন না তাঁরা। মিনির কথায়, “ছোটবেলা থেকে বাবার মুখে শুনে ছিলাম আমাদের একটি বাড়ি আছে। দু’বছর আগে সেখানে গিয়েও ছিলাম। কিন্তু ত্রাণ শিবিরই যে আমাদের বাড়ি, এ বার ভাল করে বুঝলাম। বাবার জন্যই কষ্ট হয়। বাবা এত বাড়ির কথা বলেন, অথচ সেই বাড়িতেই আমরা থাকতে পারছি না। দু’মাস বাদেই আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা। কী হবে বুঝতে পারছি না।”

রবিরাম টুডুর মতন গৌড়নগর গ্রামের আরও প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দা কারিগাঁও এম ই স্কুলের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদেরই একজন সোনামনি বাস্কে। তাঁর গল্পেও ছঁুয়ে রয়েছে একই দীর্ঘশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

refugee camp dhuburi rabiram tudu rajib choudhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE