Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে কাটল জট, পদ খারিজ সাবিরের

প্রমোদ মুতালিকের ক্ষেত্রে লেগেছিল পাঁচ ঘণ্টা। এ ক্ষেত্রে লাগল ২৪ ঘণ্টা। তার মধ্যেই নীতীশ কুমারের দল থেকে আসা সাবিরের সদস্যপদ খারিজ করে দিলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তবে এই ঘটনা কেন্দ্র করে ফের প্রকাশ্যে এল বিজেপির অন্তঃকলহ ও তা সামাল দিতে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপের ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

প্রমোদ মুতালিকের ক্ষেত্রে লেগেছিল পাঁচ ঘণ্টা। এ ক্ষেত্রে লাগল ২৪ ঘণ্টা। তার মধ্যেই নীতীশ কুমারের দল থেকে আসা সাবিরের সদস্যপদ খারিজ করে দিলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তবে এই ঘটনা কেন্দ্র করে ফের প্রকাশ্যে এল বিজেপির অন্তঃকলহ ও তা সামাল দিতে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপের ঘটনা।

গত কাল সাবির আলি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই দলের সংখ্যালঘু মুখ মুখতার আব্বাস নকভি অভিযোগ করেন, সাবির আলির সঙ্গে ইসলামি জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নেতা ইয়াসিন ভটকলের বন্ধু। নকভি বলেন, ‘এর পরে কি দাউদ ইব্রাহিমকে দলে নেওয়া হবে?’

সাবির বরাবরই বিতর্কিত। নকভির মন্তব্যের পরে তাঁর সঙ্গে ইসলামি জঙ্গি ও দাউদের যোগ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। খোঁজ শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে রাজনাথ মোদীকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, নীতীশের বিষয়ে অনেক কিছু জানেন বলেই সাবিরকে দলে নেওয়া হয়েছে। অতীতের সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

কিন্তু রাজনাথের আপত্তি ধোপে টেকেনি। আজ বিনয় কাটিয়ার, বলবীর পুঞ্জের মতো নেতারাও সাবিরকে বিজেপিতে নেওয়ার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। ময়দানে নামে আরএসএসও। সঙ্ঘের মুখপাত্র রামমাধব বলেন, সাবির আলিকে নেওয়ায় বিজেপিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত সে কথা মাথায় রাখা। সঙ্ঘের হস্তক্ষেপের পরেই রাজনাথ সাবিরের সদস্যপদ খারিজ করা হবে।

সম্প্রতি কর্নাটকে বিতর্কিত রাম সেনের নেতা প্রমোদ মুতালিককে দলে নেওয়া হয়েছিল। পরে মোদীর উদ্যোগে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সাবিরের ক্ষেত্রে বিজেপির কিছু সমস্যা ছিল। মুতালিককে দলে নেওয়ার পরে দায় কর্নাটক নেতৃত্বের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন রাজনাথরা। কিন্তু সাবির দিল্লির সদর দফতরে দলে যোগ দেন। ফলে, এ ক্ষেত্রে তা করা কঠিন ছিল। অনেকে অবশ্য বিহার শাখা ও ওই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধানের উপরে দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন। তবে দলীয় সূত্রে খবর, শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সাবিরকে দলে নেওয়া হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ভোটের মুখে মোদীর পক্ষে এক জন সংখ্যালঘু মুখ দলে আনা যেত। আবার এক সময়ে নীতীশের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই মুখ খুলতে পারতেন সাবির। যেমন লালু প্রসাদকে বিপাকে ফেলতে রামকৃপাল যাদবকে দলে নেওয়া হয়েছে। তবে সাবিরকে সরানো হলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে না বিজেপি। তাই সাবিরকে দিয়েই আজ একটি চিঠি লেখানো হয় ধর্মেন্দ্র প্রধানকে। সেখানে তিনি লেখেন, তাঁর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগের তদন্ত হোক। তত দিন সদস্যপদ স্থগিত রাখা হোক।

পরে সাবির নকভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও এখনও মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দেখার কথা নিরন্তর বলে যাচ্ছেন তিনি। এক বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, সাবির আলির সদস্যপদ খারিজ করার সিদ্ধান্তের পর নকভি গত কালের বিতর্কিত টুইটটিও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নকভির মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ নেতা এ ভাবে প্রকাশ্যে মুখ খুলবেন, তা ভাবতে পারেননি শীর্ষ নেতৃত্ব। বিতর্কের ফলে আপাতত সাবিরকে সরানো হল বটে। কিন্তু পরে ফের তাঁর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

তবে রাজনাথ আজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘দলের কোনও সিদ্ধান্তে যদি কারও আপত্তি থাকে, সেটি দলের মধ্যেই বলা উচিত। প্রকাশ্যে নয়।’ যশোবন্ত সিংহকে টিকিট না দেওয়া নিয়ে যখন প্রকাশ্যে সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির যুদ্ধ চলছিল, তখনও এমন সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন রাজনাথ। কিন্তু দলের কোন্দল থামছে কই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sabir patna delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE