Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কাশ্মীর নিয়ে ইমরানের উল্টো সুরে বেজিং

পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার টিসিএ রাঘবন জানান, দু’দেশের মধ্যে একটি ‘বোঝাপড়া’ বহু দিন ধরেই চলছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের উল্টো সুরেই আপাতত কথা বলছে চিন। ইমরান খান কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক বিষয় করে তুলতে চাইলেও বেজিং মনে করে এটি একান্তই ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি তাদেরই মেটাতে হবে। শান্তিনিকেতনে ভারত ও চিনের উন্নয়নের রূপরেখা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আসা চিনের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ কিয়ান ফেং সরকারের এই অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানান, বেজিং বরাবরই কাশ্মীর নিয়ে এই অবস্থান নিয়ে চলেছে। তিব্বত ও তাইওয়ানকে যেমন চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে স্বীকার করে দিল্লি।

পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার টিসিএ রাঘবন জানান, দু’দেশের মধ্যে একটি ‘বোঝাপড়া’ বহু দিন ধরেই চলছে। সেটা হল, তিব্বত ও তাইওয়ানের সমস্যাকে চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে ভারত। আর কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয় চিন।

কাশ্মীর নিয়ে চিন তা হলে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের বন্দোবস্ত কেন করল? সে তো পাকিস্তানের সুবিধা করে দিতেই! এই প্রশ্নের জবাবে চিনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের ডিরেক্টর কিয়ান বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের উত্তেজনা মাত্রা ছাড়াক, প্রতিবেশী চিন কখনই সেটা চাইবে না। বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক হলেও তাদের উত্তেজনা প্রশমনে আন্তর্জাতিক মহল সাহায্য করতে পারে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠক ছিল ঘরোয়া এবং রুদ্ধদ্বার।’’ কিয়ান জানান, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তার পরেও উদ্বেগ ছিল বেজিংয়ের। কিন্তু ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং সীমান্তের কোনও পরিবর্তন হবে না।

চিনের আর এক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ লং সিংচুনের দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্য রেখেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে সব সময়েই বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে বেজিং। কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের অবস্থান গোড়াতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। কিন্তু তার পরেও তা নিয়ে ভারতে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তাঁরা লক্ষ করছেন। চিনের ওয়েস্ট নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত-চর্চা কেন্দ্রের ডিরেক্টর লং জানান, এই অবিশ্বাস কাটাতেই ‘ট্র্যাক টু’ কূটনীতিতে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। ভরসা রাখছেন রবীন্দ্রনাথের ওপরও।

বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ বছর ধরে বাংলা বিভাগের দায়িত্বে থাকার পরে অবসর নেওয়া অধ্যাপক শি জিংও ঝরঝরে বাংলায় জানালেন, চিনে অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হয়। কখনও আসন ফাঁকা যায় না। রবীন্দ্রনাথের ভাষা নিয়ে পড়াশোনার খুবই আগ্রহ রয়েছে সে দেশে। বর্ষীয়ান শি-র কাছে প্রশ্ন ছিল, চিনের সাধারণ মানুষের কাছে শি জিনপিংয়ের সরকার কি আলাদা বলে মনে হয়? সব ক্ষেত্রে পার্টি ও পুলিশের কড়া নজরদারি কি এখনও চলে?

চারপাশে তাকিয়ে নিলেন শি। গলা খাদে নামিয়ে বললেন, ‘‘অনেক বদলেছে, অনেক। সেই ব্যাপারগুলো এখন খুবই কম। প্রায় নেই-ই

বলতে পারেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE