Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Pentagon

হাতে সব চেয়ে উন্নত হাইপারসনিক অস্ত্র, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে চিন, রিপোর্ট পেন্টাগনের

কম খরচে এবং ভাল পরিকাঠামোতে উৎপাদনের আকর্ষণে সারা পৃথিবীর তাবড় কোম্পানির গন্তব্য এখন চিন। তাতে কোম্পানিগুলির মুনাফা হলেও চিনের কাছে চলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়েই এখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিভিন্ন যু্দ্ধাস্ত্রের অধিকারী হয়ে গিয়েছে চিন।

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চিনের বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং। ছবি: রয়টার্স।

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চিনের বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:৪৫
Share: Save:

পৃথিবীর সব থেকে উন্নত এবং অত্যাধুনিক বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে চিন। সামরিক শক্তির বিচারে সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ এবং আন্তর্জাল, সব ক্ষেত্রেই নিজেদের অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে তারা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বেজিং। ভারত মহাসাগর জুড়েও ক্রমাগত নিজেদের আধিপত্য বাড়িয়ে চলেছে তারা। খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের অভাবনীয় শক্তির ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তাইওয়ানের উপর সামরিক অভিযানও চালাতে পারে চিনের সরকারি সেনা অর্থাৎ পিপলস লিবারেশন আর্মি। মার্কিন সামরিক গোয়েন্দাদের রিপোর্ট সামনে এনে চিনকে নিয়ে এই আশঙ্কার কথা সামনে আনল মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর

মার্কিন সরকারের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি অর্থাৎ মার্কিন সামরিক গোয়েন্দাদের রিপোর্টে সামনে এল বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে চিনের অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা। মার্কিন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, শেষ কয়েক দশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করে ফেলেছে চিন। মার্কিন গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর অর্থাৎ উৎপাদন শিল্পে চিন সারা পৃথিবীর ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা থেকেই এই এগিয়ে যাওয়ার শুরু। কম খরচে এবং ভাল পরিকাঠামোতে উৎপাদনের আকর্ষণে সারা পৃথিবীর তাবড় কোম্পানির গন্তব্য এখন চিন। তাতে কোম্পানিগুলির মুনাফা হলেও চিনের কাছে চলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়েই এখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিভিন্ন যু্দ্ধাস্ত্রের অধিকারী হয়ে গিয়েছে চিন। বেজিং-এর দ্রুত গতিতে সামরিক উত্থানের পিছনে এই যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছেন মার্কিন সামরিক গোয়েন্দারা।

যদিও মার্কিন গোয়েন্দাদের সব থেকে বেশি উদ্বেগ ‘হাইপারসনিক’ যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে। এই যুদ্ধাস্ত্র শব্দের থেকে কয়েক গুণ বেশি গতিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানে। গতি অত্যন্ত বেশি হওয়ায় কোনও রেডার বা সেন্সরে এই যুদ্ধাস্ত্রকে চিহ্নিত করা যায় না। তাই এই যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে কাজ করে না অনেক ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাই।উন্নত মানের হাইপারসনিক যুদ্ধাস্ত্র হাতে এলে নিশ্চিত ভাবেই নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বে চিনের সরকারি সেনা বা পিপলস লিবারেশন আর্মি, এমনটাই আশঙ্কা মার্কিন গোয়েন্দাদের।

দক্ষিণ চিন সাগরের মধ্যে কৃত্রিম উপায়ে বানানো চিনা বিমানঘাঁটি। ছবি: এপি।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে ৭০ হাজার কোটির সাহায্য সৌদির, নজর রাখছে চিন

পেন্টাগন প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে পিপলস লিবারেশন আর্মির হাতে এখন আছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা সব যুদ্ধাস্ত্র। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ওরাই শ্রেষ্ঠ। সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ এবং ইন্টারনেট, সব ক্ষেত্রেই নিজের এলাকায় শ্রেষ্ঠ এখন বেজিং।’ পাশাপাশি যুদ্ধবিমান বানানোর ক্ষেত্রেও অভাবনীয় উন্নতি করেছে চিন। মাঝারি এবং দূরপাল্লার বোমারু বিমান তৈরিতেও এখন একেবারে প্রথম সারিতে চিন। ২০২৫ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সফল উড়ান সেরে ফেলার লক্ষ্যে এখন কাজ করছেন চিনা প্রযুক্তিবিদেরা। সেই লক্ষ্যে সফল হলে আকাশের লড়াইতেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে ফেলবে চিন।

শুধু আকাশ নয়, ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণও নিজের কব্জায় রাখতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে চিন। সেই নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিজেদের উপকূল ছাড়িয়ে এখন তারা নজর দিয়েছে বিভিন্ন বিদেশি সমুদ্র বন্দরে। পাকিস্তানের গ্বাদর এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দর এখন আক্ষরিক অর্থেই চিনা নিয়ন্ত্রণে। বিনিয়োগ ও উন্নয়নের আড়ালে এই বন্দরগুলিতে এখন চিনা প্রাধান্য প্রশ্নাতীত। পাশাপাশি বেজিং প্রভাব বাড়াচ্ছে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দরেও।

মার্কিন সামরিক গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ, গত ৪০ বছর ধরে সামরিক ক্ষেত্রে শুধুই অগ্রগতি হয়েছে চিনের। কিন্তু সত্যিকারের যুদ্ধের কোনও অভিজ্ঞতা নেই পিপলস লিবারেশন আর্মির। সেই কথা খুব ভাল করেই জানেন চিনা সামরিক কর্তারা। সেই কারণে সত্যিকারের যুদ্ধের মহড়া হিসেবে তারা বেছে নিতে পারে তাইওয়ানকে। এমনটাই আশঙ্কা মার্কিন গোয়েন্দাদের। কারণ, চিন সাগরে আমেরিকার অন্যতম বন্ধু দেশ তাইওয়ান। দক্ষিন চিন সাগরে নিজেদের উপস্থিতির জন্য তাইওয়ানের উপর নির্ভরশীল মার্কিন নৌসেনা। অন্য দিকে পূর্ব আর দক্ষিণ চিন সাগরের মাঝে এই দ্বীপের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেয় না বেজিং। এই মুহূর্তে তাইওয়ান স্বায়ত্বশাসিত। নিজেদের আলাদা পতাকা, মুদ্রা এবং সরকার থাকলেও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ বলে মেনে নেয় না রাষ্ট্রপুঞ্জও। এর আগে বেজিং প্রকাশ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা যুদ্ধ করতে পিছপা হবে না। তাই নিজেদের সামরিক শক্তির সক্ষমতা যাচাই করতে তাইওয়ানকেই প্রথম যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে পারে চিন। মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে সেই সময় প্রায় আগত।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে চিন, উদ্বেগ বাড়ল ভারতের

আমেরিকা থেকে চিন, ব্রিকস থেকে সার্ক- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE