Advertisement
০১ মে ২০২৪
Pakistan

দাউদ, হাফিজদের দায় নিতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী ইমরান

একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইতিহাস আঁকড়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে।  পাকিস্তানের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেও এই মুহূর্তে আছে ভারতের আশ্রয়ে।’’

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:১২
Share: Save:

পাকিস্তানের আশ্রয়ে দাউদ ইব্রাহিমের থাকা নিয়ে মুখ খুললেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দায় ঝেড়ে ফেলে জানালেন, কবে কী হয়েছে, সেই ইতিহাসের জন্য তাঁকে দায়ী করা ঠিক হবে না।

ভারতের সঙ্গে শান্তির সম্পর্ক তৈরি করতে নিজের আগ্রহের কথা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহলে জানিয়ে চলেছেন সদ্য নির্বাচিত পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু শুধু কথায় যে চিঁড়ে ভিজবে না, সেই কথাও ইসলামাবাদকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। বুধবারই সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে সুষমা জানিয়েছিলেন, ‘‘আমন্ত্রণ এসেছে কিন্তু তাতে আমরা সদর্থক সাড়া দিচ্ছি না। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনা হবে না। আমরা সার্ক সম্মেলনে যোগ দিচ্ছি না।’’

মুখে শান্তির কথা বললেও এই মুহূর্তে পাকিস্তানের আশ্রয়েই আছে ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণের মূল চক্রী দাউদ ইব্রাহিম এবং ২০০৮-এর ২৬/১১ হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং লস্কর ই তৈবা প্রধান হাফিজ সইদ। এক দিকে এই দুই সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয় দান, অন্য দিকে শান্তি আলোচনার আহ্বান, এই দ্বিচারিতা নিয়েই আপত্তি ভারতের। আর ভারতের তোলা সেই অভিযোগ নিয়েই এবার মুখ খুললেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

আরও পড়ুন: কাশ্মীর টানলেন ইমরান, কথায় রাজি নয় ভারত

এ দিন ইসলামাবাদে এক বৈঠকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পাক প্রধানমন্ত্রী। মুম্বই হামলার মূল চক্রী দাউদ ইব্রাহিম ও হাফিজ সইদকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইমরান বলেন, অতীতে যা ঘটেছে তার জন্য তিনি দায়ী নন। তাঁর পাল্টা দাবি, ভারতে লুকিয়ে থাকা এমন বেশ কিছু ‘ওয়ান্টেড’-এর তালিকা পাকিস্তানের হাতেও রয়েছে। সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার প্রসঙ্গে ইমরানের বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষেও অনুকূল নয়। তবে হাফিজ সইদের উপরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’ ইমরানের কথায়, ‘‘এ বার দু’দেশের আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। সামরিক পথে কাশ্মীর সমস্যা মিটবে না। যে কোনও বিষয় নিয়েই আমি আলোচনায় বসতে রাজি আছি। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেও কথা বলতে চাই। দিল্লির বার্তা পেতে প্রয়োজনে ভারতে লোকসভা ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’’

দাউদের পাকিস্তানে থাকার খবর ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে থাকলেও তা বিভিন্ন সময় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। যদিও ভারতের দাবির পাশেই দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই বছরেই পৃথিবীর সব থেকে বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের পাশাপাশি সব থেকে বিপজ্জনক জঙ্গিদের একটি তালিকা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেখানে দাউদ ইব্রাহিমের নামের সঙ্গে তার করাচির ঠিকানাও প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

আরও পড়ুন: করতারপুর করিডর মানেই আলোচনা নয়, সার্কের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে কড়া বার্তা সুষমার

১৯৯৩ সালে মুম্বইতে সব মিলিয়ে ১২টি বিস্ফোরণ ঘটানো হয় দাউদের নেতৃত্বে। নিহত হন ২৫৭ জন, আহত হন প্রায় সাতশো সাধারণ মানুষ। এর পরই ভারত থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয় দাউদ। তাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু, পাকিস্তানের আশ্রয়ে থাকায় তাকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

ভারতের গুরদাসপুরে ডেরা বাবা নানক থেকে পাকিস্তানের করতারপুরে দরবার সাহিব পর্যন্ত চার কিলোমিটার ভিসামুক্ত করিডরের শিলান্যাস অনুষ্ঠান ছিল কাল। এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন শিখ পুণ্যার্থীরা। পাকিস্তানের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বাদল ও হরদীপ সিংহ পুরী। সেই সঙ্গে হাজির ছিলেন পঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিংহ সিধুও। অনুষ্ঠান মঞ্চে সিধুর ‘ইমরান স্তুতি’ ও ‘পাক-প্রীতি’ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার দিনভর বিজেপির তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। সিধুর জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে ইমরান জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানেও ভোটে দাঁড়ালে সিধু জিতে যাবেন। সেই কথা তুলে হরসিমরত কৌর বাদল এ দিন সিধুকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘ভারতের থেকে পাকিস্তানেই হয়তো উনি বেশি সম্মান-ভালবাসা পাচ্ছেন।’’

বিজেপি কর্মী কৃষ্ণা হেগড়ের পাল্টা প্রশ্ন, পাক জেলে বন্দি ভারতীয় যুবক হামিদ নেহাল আনসারির মুক্তি ত্বরান্বিত করতে পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিধু কেন কথা চালাচ্ছেন না? চরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৫ সালে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হামিদকে কারাদণ্ড দেয় পাকিস্তানের এক সামরিক আদালত। পরে অবশ্য পাক সরকার জানায়, আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও হামিদের সঙ্গে তাঁর পরিবার যোগাযোগ করতে পারেনি। ইমরান আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি তিনি নজরে রাখবেন।

আজ ফেসবুকে খলিস্তানি নেতা গোপাল সিংহ চাওলার পোস্ট করা একটি ছবি এই আগুনে ঘি ঢেলেছে। ছবিতে গত কালের অনুষ্ঠানে গোপাল ও সিধুকে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে। অমৃতসরে সাম্প্রতিক হামলার পিছনে এই খলিস্তানি নেতার সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে মত দিল্লির। সব মিলিয়ে বেজায় চাপে সিধুও।

(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan Imran Khan Dawood Ibrahim India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE