ধর্ষণ কি শুধু শরীরের উপরই হয়? আর মনের উপর? উত্তর বোধহয় দিতে পারেন শুধুমাত্র ধর্ষিতাই। সমাজের লজ্জা, ট্রমা, সর্বোপরি ‘ধর্ষণ পরবর্তী জীবন ধর্ষিতার ঠিক কী ভাবে কাটানো উচিত্’ সেই অলিখিত নিয়মের বেড়াজালে ঘরের কোণটাকেই ধর্ষিতার সবচেয়ে কাছের মনে হয়। এমনটাই হয়তো করার কথা ছিল ২৭ বছরের অ্যাম্বর অ্যামরের।
হ্যাঁ, তিনিও ধর্ষিত হয়েছিলেন। বাথরুমের শাওয়ারের তলায় বসে ঝরঝর করে কেঁদেওছিলেন। আর কাঁদতে কাঁদতেই ঠিক করে এ বার তিনি কী করবেন। সেই অঝোরে কান্নার ছবিই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। না, সমবেদনা বা সান্ত্বনা পেতে নয়। এই ছবি দিয়েই শুরু করেন তাঁর ‘স্টপ রেপ, এডুকেট’ লাইভ ব্লগ ক্যাম্পেন। ধর্ষণের ঠিক কয়েক মিনিট পর।
ঠিক কী ঘটেছিল অ্যাম্বরের সঙ্গে? গত নভেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা অ্যাম্বর বেড়াতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে। সেখানেই এক পুরুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব। তাঁর সঙ্গে স্নানের প্রস্তাবে রাজি হন অ্যাম্বর। আর তারপরই অবধারিত ধর্ষণ। অ্যাম্বর বুঝে গিয়েছিলেন আর সময় নেই। তিনি একা নন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, একই সময়ে, একই ঘটনায় ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আরও অনেকগুলো মুখ। তখনই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন ছবি, ব্লগে লিখে ফেলেন নিজের ‘লজ্জার’ কাহিনি। অ্যাম্বর বলেন, ‘‘আমি তখনও বাথরুমেই ছিলাম। অপরাধের অকুস্থলে। উঠতেও পারছিলাম না। বসে বসে শুধু টাইপ করে যাচ্ছিলাম।’’ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, হাসপাতালের বিছানায় রাখা রেপ কিট, সবটাই ইনস্টাগ্রামে তুলে ধরেছেন অ্যাম্বর।
কী ভাবছেন? সমাজ তাকে ছেড়ে দিয়েছে? এত বড় স্পর্ধার পরও? তবে তার কিছুই ছুঁতে পারেনি অ্যাম্বরের অন্তরাত্মাকে। তীর্যক মন্তব্য, কটূক্তি, পুলিশের অসংবেদনশীল আচরণ সব কিছুই তার কাছে শুধুই পরিহাস। অ্যাম্বর বলেন, ‘‘যারা আমাকে দোষারোপ করেছেন, আমি তাদের সকলকেই ক্ষমা করেছি। আমি জানি তোমরা বুঝবে না। কিন্তু বিশ্বাস করি তোমরা পারবে।’’
অ্যাম্বরের পোস্টের পর ইন্সটাগ্রামে মন্তব্য এসেছিল, ‘অসহ্য অজুহাত।’ আর অ্যাম্বরের পাল্টা জবাব, ‘‘তুমি যাই করো না কেন, তা কখনই কাউকে ধর্ষণে উদ্যত করতে পারে না। আমি স্বাধীনতা উপভোগ করি। প্রকৃতির মাঝে নগ্ন হতে আমার ভাল লাগে। কিন্তু তার সঙ্গে সেক্স বা ধর্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি কেন স্নান করতে গিয়েছিলাম তার কৈফিয়ত আমি কাউকে দিতে রাজি নই। খাবারে বিষক্রিয়া হয়ে টানা দু’দিন অসুস্থ ছিলাম আমি। গরম জলে স্নান করতে চেয়েছিলাম।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ঘটনার মাঝেই সবচেয়ে বড় কথাটাও যে বলে ফেলেছেন অ্যাম্বর। ‘‘ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতন নিয়ে কথা বলা অতটাও ভয়ের নয় যতটা তোমরা ভাবছো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy