Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

কম সময়ে নির্ভুল উত্তর

আর কিছু িদন পরেই রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স। পরীক্ষায় ভাল করতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেিণর সিলেবাস তো পড়তেই হবে, দিতে হবে নিয়মিত মক টেস্টও। পরীক্ষা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ২০১৯ সালের সফল পরীক্ষার্থী ঋষভ বসু। শুনলেন সৌরজিৎ দাসআর কিছু িদন পরেই রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স। পরীক্ষায় ভাল করতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেিণর সিলেবাস তো পড়তেই হবে, দিতে হবে নিয়মিত মক টেস্টও

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:৫৭
Share: Save:

রাজ্য জয়েন্ট পরীক্ষাকে যদি পাখির চোখ করে এগোতে চাও, তা হলে তার প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া উচিত একাদশ শ্রেণি থেকেই। কিন্তু দশম থেকে একাদশ শ্রেণি— এই উত্তরণটা যে কতখানি, তা প্রথমে অনেক ছেলেমেয়েই ধরতে পারে না। আমিও পারিনি। যে কারণে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা তেমন ভাল হয়নি। সিলেবাসের বেশ কিছুটা বাকি থেকে গিয়েছিল। জয়েন্টের জন্য একাদশ শ্রেণির সিলেবাসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর বোর্ড পরীক্ষার আগেই জয়েন্ট পড়লেও সাধারণত উল্টোটাই হয়। মাঝে সময় থাকে মোটামুটি এক-দেড় মাস। তাই দুটো পরীক্ষার প্রেপারেশন একই সঙ্গে নিতে হয়। একাদশ শ্রেণির সিলেবাস ঠিকমতো পড়া থাকলে পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে যায়। আর দ্বাদশ শ্রেণিতে হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষার পরেই একাদশ শ্রেণির পড়াটা ঝালিয়ে নিতে পারলে ভাল। কারণ বোর্ডের পরীক্ষার সময় যত এগিয়ে আসে তত ওই পড়ার উপরেই জোর দিতে হয় বেশি। যদি কারও দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসটা মোটামুটি আয়ত্তে থাকে, তা হলে অক্টোবর-নভেম্বর থেকেও একাদশ শ্রেণির সিলেবাসের রিভিশন শুরু করতে পারো। আর জানুয়ারি থেকে বোর্ডের পরীক্ষার পড়াশোনা। তবে এ বছর যেহেতু জয়েন্ট পরীক্ষা আগেই হয়ে যাচ্ছে, তাই তোমাদের আগে ওই পড়াটা শেষ করে ফেলতেই হবে। একই সঙ্গে এটাও ঠিক, জয়েন্টের পরে হাতে খুব একটা সময় থাকবে না বোর্ডের পরীক্ষার জন্য। পুরোটাই চলে যাবে রিভিশনে। তবে গোটা বছরটা পরিকল্পনা করে দুটো সিলেবাস পড়ে রাখা থাকলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আর তার জন্য দ্বাদশ শ্রেণির গোড়া থেকেই একটা রুটিন বানিয়ে দুটো পরীক্ষার পড়া করতে হবে তোমাদের।

আগেই বলেছি আমার একাদশ শ্রেণির সিলেবাসের পুরোটা পড়া ছিল না। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণিটা খুব ভাল ভাবে পড়েছিলাম। মোটামুটি অক্টোবর-নভেম্বর থেকে রিভিশন শুরু করেছিলাম একাদশ শ্রেণির পড়াশোনার। একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম, তবে খুব বেশি ক্লাস করতাম না। বরং বাড়িতে বসে নিজের মতো পড়াশোনা করাটাই বেশি পছন্দ ছিল আমার। জয়েন্টের জন্য পড়ার পাশাপাশি রোজ অঙ্ক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির মধ্যে কোনও একটা বিষয়ে দু’ঘণ্টা মক টেস্ট দিতাম। দেখে নিতাম কোথায় ভুল হয়েছে। পেপার সল্ভ না করলে তুমি কখনওই ধরতে পারবে না কোন বিষয়গুলি তুমি ভাল পারো, আর কোথায় তোমার খামতি। জয়েন্টের প্রশ্নের ধাঁচ জানার একটা ভাল উপায় পুরনো পেপার সল্ভ করা। অনেক সময়ই দু’একটা প্রশ্ন পেতেই পারো, যেগুলির ধরন অনেকটা পুরনো পেপারের কোনও প্রশ্নের মতোই। কোচিং সেন্টারে যোগ দেওয়ার একটা বড় সুবিধে, এখানে অনেক সময় শিক্ষকরা কোনও প্রশ্নের খুব কম সময়ে উত্তর করার কৌশল শিখিয়ে দেন।

এ বার আসি বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে। আমার মতে অঙ্কের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্তর করা ছাড়া আর কোনও গতি নেই। পুরনো বছরের প্রশ্নের পাশাপাশি বোর্ডের বই এবং বাজারচলতি বইগুলি থেকে অঙ্ক করলেই হবে। তবে, সময়ের কথাটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু জয়েন্ট একটা এলিমিনেশন টেস্ট, তাই কম সময়ে প্রশ্ন সল্ভ করার দক্ষতা আয়ত্ত করাটা জরুরি।

ফিজিক্সে কনসেপ্ট পরিষ্কার না থাকলে মুশকিল। ফলে টেক্সট বই ভাল করে পড়ার পাশাপাশি অনুশীলনের সাবজেক্টিভ প্রশ্নগুলি উত্তর করতে হবে। জয়েন্টে অবজেক্টিভ প্রশ্নই থাকে। কিন্তু সাবজেক্টিভ প্রশ্ন উত্তর করলে কনসেপ্ট পরিষ্কার হয়। তাই আমি সব সময় অবজেক্টিভের সঙ্গে সঙ্গে সাবজেক্টিভ প্রশ্নও সল্ভ করতাম। ফিজিক্সে মেকানিক্সের অংশটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ওখান থেকে ভালই প্রশ্ন থাকে। মেকানিক্সের অংশটা থাকে একাদশ শ্রেণিতে। তাই ওই অংশটার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দিতে হবে। কেমিস্ট্রিতে তিনটে অংশ— ফিজিক্যাল, অরগ্যানিক এবং ইনঅরগ্যানিক। ইনঅরগ্যানিক কেমিস্ট্রিতে সমীকরণগুলি বুঝে মুখস্থ করতে হবে। এবং প্রতি দিন কিছুটা সময় দিতে হবে এই অংশটির জন্য। ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি অনেকটা অঙ্কের মতো। ফলে এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রশ্নোত্তর করলেই চলবে। অরগ্যানিক কেমিস্ট্রিটাও অনেকটা ইনঅরগ্যানিকের মতোই। প্রতি দিন কিছুটা সময় দিতে হবে এর জন্যেও।

কোনও কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেখানকার মেটিরিয়ালগুলি যেমন খুঁটিয়ে পড়তে হবে, তেমনই সেখানকার সব ক’টি মক টেস্টও দিতে হবে। আমি কোচিং সেন্টারের সাপ্তাহিক মক টেস্টগুলি দিতাম। অঙ্ক এবং ফিজিক্সের জন্য সেনগেজ সিরিজের বইগুলি দেখতে পারো। বিশেষত ফিজিক্সে এখানে যে সাবজেক্টিভ প্রশ্নোত্তর আছে, সেগুলি তোমার কনসেপ্ট পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, অঙ্কের জন্য পঙ্কজ জোশীর বইটিরও বাজারে বেশ নাম আছে। কেমিস্ট্রিতে অরগ্যানিকের জন্য দেখতে পারো ও পি ট্যান্ডন, ফিজিক্যালের জন্য আর সি মুখার্জি এবং ইনঅরগ্যানিকের জন্য এনসিইআরটি-র বই।

পরীক্ষার হল-এ ঠিকঠাক প্রশ্ন বাছাইয়ে নজর দাও। কোনও প্রশ্নে বেশি সময় দেবে না। যদি এক মিনিটের মধ্যে কোনও প্রশ্ন করতে না পারো, পরেরটায় চলে যাও। এমন যেন না হয়, একটা শক্ত প্রশ্ন সল্ভ করতে গিয়ে তোমার চারটে সোজা প্রশ্ন করা হল না। এখানে এক-আধটা নম্বরও র‌্যাঙ্কিং-এ বিরাট ফারাক গড়ে দিতে পারে।

এ বছর তোমাদের রাজ্য জয়েন্ট পরীক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার আগেই বলে অনেকেই হয়তো একটা বাড়তি চাপ অনুভব করছ। আমার পরামর্শ, অযথা নিজের উপরে চাপ সৃষ্টি কোরো না। একটা পরীক্ষা হয়ে গেলে, সেটার ভাল-মন্দ না ভেবে পরের পরীক্ষায় মনোনিবেশ করো।

ঋষভ গত বছরের পরীক্ষায় ১৭০ র‌্যাঙ্ক করেছিলেন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Joint Entrance Exam Education JEE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE