Advertisement
০২ মে ২০২৪
Marine Engineering

অন্য রকমের ইঞ্জিনিয়ারিং

প্যারামিলিটারি কোর্সের সঙ্গে বেশ কিছুটা মিল রয়েছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। সেই বিষয়ের পড়াশোনা, উচ্চশিক্ষা ও কেরিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলেন শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু দাসপ্যারামিলিটারি কোর্সের সঙ্গে বেশ কিছুটা মিল রয়েছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। সেই বিষয়ের পড়াশোনা, উচ্চশিক্ষা ও কেরিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলেন শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু দাস

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০৮
Share: Save:

সিভিল, মেক্যানিক্যাল, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো যে সব প্রথাগত শাখার কথা আমরা জানি, তার থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বেশ কিছুটা আলাদা। জাহাজ চালাতে যে ধরনের যন্ত্রপাতি লাগে, তা সবই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্তর্গত। জাহাজের দু’টো বিভাগ: টেকনিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং আর নটিক্যাল। জাহাজের গতিপথ, কোথায় জাহাজের জ্বালানি ভরা হবে, জিনিসপত্রের রক্ষণাবেক্ষণ, সেগুলি জাহাজে তোলা-নামানো ইত্যাদি সবই পড়ে নটিক্যাল-এর মধ্যে। আর, এ সব করতে যে সব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, সেগুলি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্তর্গত।

স্নাতক স্তরে কোর্স

যে হেতু এটাও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়, তাই যোগ্যতার ক্ষেত্রে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান থাকা আবশ্যক। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এই বিষয়ে পড়তে হলে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় ফিজ়িক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথমেটিক্সে গড়ে ৬০ শতাংশ, এবং ইংরেজিতে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (৪ বছর), বি টেক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং (৪ বছর), বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স (৩ বছর), বি এসসি শিপ বিল্ডিং অ্যান্ড রিপেয়ার-এর (৩ বছর) মতো কোর্সে ভর্তি হতে পারে ছেলেমেয়েরা। এ ছাড়াও, ৩ বছরের বিবিএ (লজিস্টিক্স, রিটেলিং অ্যান্ড ই-কমার্স) এবং ১ বছরের ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স (যা শেষ করে পরে বি এসসি অ্যাপ্লায়েড নটিক্যাল সায়েন্সে যোগ দেওয়া যায়) পড়ারও সুযোগ রয়েছে। বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষে ল্যাটারাল এন্ট্রি-র মাধ্যমে যোগ দিতে পারে ডিপ্লোমা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা।

অতিমারির কারণে অন্য বারের মতো এ বছর স্নাতক স্তরে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা (সিইটি) বাতিল হয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে, উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। আবেদনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরে ভর্তির কোনও সুযোগ তৈরি হলেও হতে পারে।

প্রতিষ্ঠান ও কোর্স

ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (আইএমইউ) কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজ মন্ত্রকের অন্তর্গত একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস রয়েছে কলকাতা (www.merical.ac.in), মুম্বই পোর্ট, নবী মুম্বই, চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম এবং কোচিতে। কলকাতা, মুম্বই পোর্টে পড়ানো হয় বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। আবার বিশাখাপত্তনমে বি টেক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং, চেন্নাই ক্যাম্পাসে বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স, ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স এবং বিবিএ (লজিস্টিক্স, রিটেলিং অ্যান্ড ই-কমার্স), নবী মুম্বই-তে বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স এবং ডিপ্লোমা ইন নটিক্যাল সায়েন্স আর কোচি ক্যাম্পাসে বি এসসি নটিক্যাল সায়েন্স, বিবিএ (লজিস্টিক্স, রিটেলিং অ্যান্ড ই-কমার্স)। এ ছাড়া আইএমএউ-এর অধীনস্থ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্নাতক বা ডিপ্লোমা কোর্স পড়া যায়। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এখন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত নানা কোর্স পড়ানো হয়।

উচ্চশিক্ষা

এম টেক বা এম এসসি করা যায়। এম টেক পড়ানো হয় তিনটি বিষয়ে: নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং, ড্রেজিং অ্যান্ড হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। এম টেক পড়তে হলে প্রার্থীর বি টেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বা বি টেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিগ্রি থাকতে হবে। আর এম এসসি পড়ানো হয় কমার্শিয়াল শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক্স-এ। আইএমইউ-তে এম এসসি ও পিএইচ ডি হয়। এ ছাড়াও এখানে দু’বছরের এমবিএ (ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিক্স ম্যানেজমেন্ট, পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট) পড়ানো হয়।

কেরিয়ার

বিষয়টির সঙ্গে প্যারামিলিটারি কোর্সের বেশ কিছুটা মিল আছে। এ ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তা, বিচক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে কোনও শিক্ষার্থী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজে যোগ দেবে। পরে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে উঁচু পদে উঠতে পারবে। যেমন, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের পরের পোস্ট হল ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। ডিরেক্টর জেনারেল অব শিপিং-এর পরীক্ষা দিতে ওই পদে উঠতে হবে। একই ভাবে নটিক্যাল সায়েন্স পাশ করে যোগ দেওয়া যাবে জুনিয়র অফিসার হিসেবে। তার পরে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে এক সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন হওয়ার সুযোগ মিলবে। পরীক্ষাগুলো বেশ কঠিন হয়। এগুলোকে বলে ‘সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সি’। তবে শুধু ভারতে নয়, গোটা দুনিয়ায় এই নিয়ম রয়েছে। কারণ, ছাত্র বা ছাত্রীটি যে কোনও দেশের জাহাজে যোগ দিতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন জাহাজ সংস্থায়, বহুজাতিক সংস্থাতেও কাজের সুযোগ থাকে ছেলেমেয়েদের।

কৃষ্ণেন্দু দাস, আইএমইউ কলকাতার অধ্যাপক

সাক্ষাৎকার: সৌরজিৎ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marine Engineering
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE