জরুরি বিভাগে অন্তত ৮ জন ইএমও (এমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার) থাকার কথা। অথচ রয়েছে ২ জন। তাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পরিষেবার মান ঠিক রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছেন ওই হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশই। অন্যান্য বিভাগ থেকে চিকিৎসক পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও সমস্যা মেটেনি। জরুরি বিভাগে অবজারভেশন ওয়ার্ডের বিশেষ দরকার। চিকিৎসকের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। ঠেকা দিয়েই চলছে জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্য পরিষেবা। পরিষেবা দিতে কর্তৃপক্ষকে নির্ভর করতে হচ্ছে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরেই।
ইএমও হিসাবে অভিজ্ঞ সিনিয়র চিকিৎসক কেন দেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর ভর করেই জরুরি বিভাগে নতুন অবজারভেশন ওয়ার্ড চালু করতে উদ্যোগী হন কর্তৃপক্ষ। গত ২২ মার্চ সে জন্য ৬ জন জুনিয়র চিকিৎসক ঠিক করতে কাউন্সেলিং ডাকলেও অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা ইএমও ছাড়া তাঁরা কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তাতে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়।
জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ জানান, দুর্ঘটনায় জখম রোগী থেকে মুমুর্ষু রোগীদের নিয়ে পরিবারের লোকেরা প্রথমে জরুরি বিভাগে-ই যান। অনেক ক্ষেত্রে সেখানে চটজলদি সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবার দরকার হয়। অথচ সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমনকী চটজলদি সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা না পেলে রোগীর পরিবারের সঙ্গে চিকিৎসকদের গোলমালের আশঙ্কাও রয়েছে। তাই তারা দায়িত্ব নিতে চাননি।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের অভাবের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্রনাথ সরকার। তিনি বলেন, “বর্তমানে জরুরি বিভাগের জন্য ২ জন মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। তাই অন্য বিভাগ থেকে ৬ জন চিকিৎসককে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব দিতে হচ্ছে। সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদেরও রাখা হচ্ছে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া জুনিয়র চিকিৎসকরা দায়িত্ব নিতে না চাওয়ায় অবজারভেশন ওয়ার্ড চালু করতে সমস্যা হচ্ছে।” সুপার জানান, চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বাস্থ্য দফতরে একাধিকবার জানানো হয়েছে। অন্য বিভাগ থেকে যাঁদের পাঠানো হচ্ছে সেই সমস্ত চিকিৎসকদের একাংশ জানান, এ ভাবে দু দিক সামালাতে গেলে কোনও ওয়ার্ডেই তাঁরা সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে পারছেন না। সম্প্রতি বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৬ জনকে নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে। তারাই ভাগ করে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব নিচ্ছেন। যে সমস্ত বিভাগ থেকে তাঁরা এসেছেন সেখানেও চিকিৎসকের অভাব দেখা দিচ্ছে। জরুরি বিভাগে পুরুষ এবং মহিলাদের যে দুটি ‘ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ড’ রয়েছে সেখানেও কোনও আরএমও নেই। চালাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরাই। ওই দুটি ওয়ার্ডে অন্তত ৬০ টি শয্যা রয়েছে। রোগীর পরিস্থিতি গুরুতর হলে অন্য বিভাগ থেকে চিকিৎসক ডেকে আনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারের অভাবে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি নিয়তই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের অভাবে হাউস স্টাফদের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি জুনিয়র চিকিৎসকেরা এ ভাবে দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন। তাঁদের যুক্তি, অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে থেকেই তাঁদের কাজ করার কথা। পরে অন্য বিভাগ থেকে ৬ জনকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের একজন তুষারকান্তি সরকার বলেন, “আমাদের চিকিৎসক হিসাবে নিয়োগ করা হলে অনেকেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্যথায় হাউজ স্টাফ হিসাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকর সঙ্গে থাকাটাই আমাদের নিয়মের মধ্যে পড়ে। চিকিৎসক নিয়োগ করা না হলে হাউজ স্টাফদের কাঁধে ভর করে এ ভাবে চলতে পারে না।”
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত এক বছরে সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট, নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট, করনারি কেয়ার ইউনিটের মতো বিভিন্ন নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অথচ কোনও ক্ষেত্রেই নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরে বারবার জানানো হলেও সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তারা উদাসীন বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy