Advertisement
০২ মে ২০২৪

রোজের খাবারেও লুকিয়ে আর্সেনিক!

গোড়াতেই গলদ! শুধু জলে নয়, রোজকার খাবারেও হদিস মিলছে আর্সেনিকের। ভাত, রুটি, চিঁড়ে, খই, মুড়ি— আর্সেনিক বিষ ছড়িয়ে সব কিছুতেই। আর তা ছড়াচ্ছে একেবারে গোড়া থেকেই।

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৯
Share: Save:

গোড়াতেই গলদ!

শুধু জলে নয়, রোজকার খাবারেও হদিস মিলছে আর্সেনিকের। ভাত, রুটি, চিঁড়ে, খই, মুড়ি— আর্সেনিক বিষ ছড়িয়ে সব কিছুতেই। আর তা ছড়াচ্ছে একেবারে গোড়া থেকেই। চাষের কাজে ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক যুক্ত জল ব্যবহার করাতেই এই বিপদ, এমনটাই দাবি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের গবেষকদের।

সম্প্রতি শহরে বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে মেয়র তথা রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আর্সেনিকের বিষ থেকে রক্ষা পেতে বছর তিনেকের মধ্যেই নলকূপ মুক্ত শহর গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শোভনবাবুর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও গবেষকদের মতে শুধু নলকূপ মুক্ত করে শহরকে আর্সেনিক মুক্ত করা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি খিদিরপুর, বালিগঞ্জ, তিলজলা, টালিগঞ্জ, উল্টোডাঙা, কৈখালি, হাতিয়ারা, কাঁকুড়গাছি এলাকার পঁয়তাল্লিশটি পরিবারের কাছ থেকে চাল এবং গম সংগ্রহ করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। সেই নমুনা পরীক্ষা করে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা তাঁদের। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী এক জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতি কেজি ওজনে দুই মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সংগৃহীত চালের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গড়ে প্রতি কেজি চালে একশো পাঁচ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক রয়েছে। কোনও পরিবারের চালের নমুনায় প্রতি কেজিতে ন্যূনতম চুরানব্বই মাইক্রোগ্রাম, কোনওটিতে আবার প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ একশো বাষট্টি মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিকও মিলেছে। গমের ক্ষেত্রেও গড়ে প্রতি কেজিতে মিলেছে ছিয়াশি মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের গবেষক অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আর্সেনিকের যে বিভিন্ন ধরন রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘আর্সেনিক-থ্রি’। যাকে সাধারণভাবে আর্সেনাইড বলা হয়। শহর থেকে সংগৃহীত চাল এবং গমের নমুনার আশি শতাংশের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে আর্সেনাইড।’’ গবেষকদের বক্তব্য, কোনও ব্যক্তি যদি নিয়মিত এই চাল থেকে তৈরি ভাত, চিঁড়ে, খই, মুড়ি বা এই গমের আটা দিয়ে তৈরি রুটি খান, তাঁর শরীরে আর্সেনিকের প্রকোপে চর্ম রোগ এবং তা থেকে ক্যানসারও হতে পারে।

কিন্তু চাল এবং গমের মধ্যে আর্সেনিক আসছে কি করে? গবেষকেরা জানালেন, আর্সেনিকপ্রবণ বিভিন্ন এলাকায় ধান এবং গমের চাষ হয়। সেখানে চাষের কাজে ব্যবহৃত হয় ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক যুক্ত জল। সেই ধান থেকে তৈরি চাল, গম এবং তা থেকে তৈরি খাবার বিক্রি হচ্ছে শহরের দোকানে। গোড়ার এই গলদ থেকেই মানুষের শরীরে নীরবে ঢুকে পড়ছে আর্সেনিকের বিষ।

কিন্তু এই বিপদের হাত থেকে মুক্তির উপায় কী? গবেষক তড়িৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জল সেচের কাজে ব্যবহার করা বন্ধ না হলে এই বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও উপায় নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arsenic Food products
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE