শ্বাসকষ্টে কাতরাচ্ছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের সাড়ে পাঁচ বছরের শিবম রাজবংশী। দরকার ছিল ‘পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর’ (শিশুদের জন্য বিশেষ কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র)-এর। কিন্তু উত্তরবঙ্গের কোথাও সরকারি স্তরে সেই যন্ত্রের খোঁজ মেলেনি। একই হয়রানি হয় পূর্ব মেদিনীপুরের লতা মণ্ডলের। সাত বছরের লতা হৃদ্যন্ত্রের জটিল সমস্যায় জ্ঞান হারাচ্ছিল। কিন্তু মেদিনীপুর বা লাগোয়া এলাকার কোথাও মেলেনি পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর। পরে তাকে কলকাতায় আনা হয়। কিন্তু তিন-তিনটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও ভেন্টিলেটর খালি মেলেনি।
শিবম ও লতা কোনও ক্রমে বেঁচে যায়। কিন্তু বিপরীত নজিরও রয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, প্রতি জেলায় পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর চালুর ব্যাপারে সরকারি উদাসীনতা বহু শিশুর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
নিয়ম অনুযায়ী, সদ্যোজাত থেকে ১ মাসের শিশুদের চিকিৎসা হয় ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)-এ। ১ থেকে ১৫ বছরের শিশুদের চিকিৎসার জন্য দরকার ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ বা পিকু। যাতে অন্তত একটি পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর থাকা বাধ্যতামূলক। এখন প্রশ্ন রাজ্য জেলায় জেলায় বহু কোটি ব্যয়ে এসএনসিইউ তৈরি করলেও পিকু-র পরিকাঠামোর ব্যাপারে উদাসীন কেন? যেখানে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র নিয়ম বলছে, কোনও মেডিক্যাল কলেজে অন্তত একটি পিকু না থাকলে অনুমতি বাতিল হবে, সেখানে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর নিয়ে রাজ্য উদাসীন কী ভাবে?
স্বাস্থ্যকর্তাদের যুক্তি, নিয়মরক্ষার খাতিরে এ রাজ্যে প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে পিকু থাকলেও পরিকাঠামো বেশ খারাপ। যেমন- এ মুহূর্তে রাজ্যে সরকারি স্তরে পিকু-র পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ৩৯। যার বেশিরভাগই কলকাতায়। জেলায় একমাত্র বর্ধমান ছাড়া কোথাও পিকুতে ভেন্টিলেটর নেই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তরবঙ্গের। এক উচ্চপদস্থ স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “সরকারি ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর কম থাকলে মানুষের কাছে বিকল্প থাকবে বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু সেখানে শিশুকে একদিন পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটরে রাখার যা খরচ, তা অনেকে জোগাতে পারবেন না।” স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে যদি সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকে, তা হলে সরকার বিপদে পড়বে।
মা ও শিশুর চিকিৎসায় নজরদারির জন্য গঠিত সরকারি টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “আমরা এসএনসিইউ করেছি। এর পর একটু বড় বাচ্চাদের জন্য পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটরও কেনা শুরু হবে। তবে সময় লাগবে।” স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র কথায়, “রাজ্যের ১২টি জায়গায় পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর বসানোর ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেগুলি চালানোর জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং টেকনিশিয়ান আমাদের হাতে নেই।”
তা হলে এক-দেড় বছরের বেশি বয়সী শিশুর পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর দরকার হলে সে কোথায় যাবে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “প্রাপ্তবয়স্কদের ভেন্টিলেটরে কিছু বিশেষ যন্ত্রপাতি লাগিয়ে সেখানেই শিশুদের ভর্তি করা যাবে।” শুনে নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ বলছেন, “জরুরি অবস্থায় বারো বছর বা বেশি বয়সী বাচ্চাদের প্রাপ্তবয়স্কদের ভেন্টিলেটর দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য যে সব বিশেষ যন্ত্রপাতির কথা বলা হচ্ছে, তার ব্যবস্থা রাজ্য সর্বত্র করে উঠতে পারেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy