Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভালবেসে... নিভৃতে যতনে

ঘুরে বেড়ানো আর ঘর সাজানো... এই দুইয়ের নেশা মিলিয়েই তৈরি হয়েছে এক অন্দর-কাহিনি। তাতে যোগ হয়েছে বাসিন্দাদের রুচিবোধঘুরে বেড়ানো আর ঘর সাজানো... এই দুইয়ের নেশা মিলিয়েই তৈরি হয়েছে এক অন্দর-কাহিনি। তাতে যোগ হয়েছে বাসিন্দাদের রুচিবোধ

বৈঠকী মেজাজ ছিমছাম অন্দরে

বৈঠকী মেজাজ ছিমছাম অন্দরে

পারমিতা সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:৪৯
Share: Save:

বেড়াতে ভালবাসা আর অন্দরসজ্জা— এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব নিবিড়। প্রকৃতিকে অনুভব করা সৃষ্টিসিক্ত মনের মাধুর্যে ও বৈচিত্রের বাহারে অন্দর হয়ে ওঠে চোখের আরাম— ঠিক এমনটাই মনে হল গল্ফ গার্ডেনে শাশ্বত রায়ের ফ্ল্যাটে পৌঁছে। সাড়ে বারোশো স্কোয়ারফুটের সেই আবাসকে তিনি সাজিয়েছেন বেড়াতে গিয়ে ও কাজের সুবাদে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে আনা মূর্তি, প্লান্টার, শো-পিস ও আলোর সমাহারে।

পরিসরে খুব বড় নয় বলে সাজানোর সময়ে ‘স্পেস’ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়েছে অন্দরসজ্জায়। শাশ্বতর কথায়, বাড়িটা যেন ‘ক্লামজ়ি’ মনে না হয় সেটা প্রথম থেকে মাথায় রেখেছি। এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে কর্মরত শাশ্বত থাকেন তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে, পৈতৃক ফ্ল্যাটেই। তবে সাজের পুরো পরিকল্পনা তাঁরই। বললেন, ‘‘ইন্টিরিয়রের ব্যাপারে বরাবরই আমি খুব আগ্রহী। নানা রকম সাইট, ইনস্টাগ্রাম সার্চ করতে থাকি। কোথাও গেলে ইন্টারেস্টিং কিছু চোখে পড়লে, সেই আইডিয়াগুলো নিই। তার সঙ্গে নিজের আইডিয়া মিলিয়ে একটা অন্য রূপ দিতে চেষ্টা করি। তবে আমার বাবা-মা এতটা শৌখিন নন। তাই কখনও কখনও আমাকে বকুনিও খেতে হয়!’’

বাড়ির মধ্যে শাশ্বতর সবচেয়ে প্রিয় একটি কাঠের ক্যাবিনেট, যা তিনি আলাদা করে তৈরি করিয়েছেন। ‘‘প্রায় এগারো-বারো বছর আগে অফিসের কাজে আমাকে প্রায়ই সিকিম যেতে হত। তখন বিভিন্ন মনাস্ট্রি ঘুরে বুদ্ধের টিচিংয়ের প্রতি খুব আগ্রহ জন্মায়। তাই যখনই পাহাড়ে বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গিয়েছি, বুদ্ধমূর্তি সংগ্রহ করেছি। চেষ্টা করেছি মূর্তিগুলোর একটা ফর্ম থেকে অন্যটা যেন আলাদা হয়। আর সে সব দিয়েই এই ক্যাবিনেটটি সাজানো।’’

বসার ঘরে চোখ টানে আয়না

ক্ষিণ কলকাতার এই ফ্ল্যাট জুড়ে রয়েছে নানা গাছের বাহার এবং চমৎকার সব প্লান্টার। শাশ্বতর চাকরির সঙ্গেও অবশ্য সবুজের যোগাযোগ। তাই গাছের প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহ দুই-ই আছে এ বাড়ির বাসিন্দাদের। তবে গাছ রাখলেই হল না, তার যত্নআত্তিও একটা বড় ব্যাপার। তাই গাছ কেনার আগে রীতিমতো পড়াশোনা করে নেন শাশ্বত, তা আদৌ ঘরে রাখা উচিত কি না, তার কতটা যত্ন প্রয়োজন। দু’টি রুমের মাঝে কাঠের উপরে খোদাই করা কাজের একটি প্লান্টার ভীষণ চোখ টানে। প্লান্টারটি আসলে মুখাবয়ব। অসমের হস্তশিল্প মেলা থেকে কিনেছিলেন শাশ্বত। আর একটি টেবলের উপরে সাজানো রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে আনা গাছের গুঁড়ির উপরে একটি কাচের বোল, ওখানেও এই ট্র্যাডিশনাল ক্রাফ্ট এ ভাবে রাখা হয়। পাশে রাখা তুরস্ক থেকে কেনা সুদৃশ্য বাটি এবং একটি প্লেট। পিছনে একটি কাঠের ভাস। ছোট-বড় আয়তনের শো-পিসগুলি একত্রে মিলে ত্রিভুজ আকার নিয়েছে, যা ইন্টিরিয়রের এক গুরুত্বপূর্ণ ‘নিয়ম’। এখানে প্লেটটির কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়, যা আসলে মায়ান ক্যালেন্ডার। ট্র্যাডিশনাল ক্রাফ্টের প্রতি শাশ্বতর ভালবাসার কারণে মেক্সিকো থেকে এটি তাঁকে উপহার দিয়েছেন এক বন্ধু। শিল্পসুষমার পাশে সবুজের ছোঁয়া, এক লহমায় তাকে করে তুলেছে অনবদ্য।

ডিনার টেবলে রোশনাই

এ বাড়ির বসার ঘরে গাছ তো রয়েছে, তবে দেওয়ালের আয়নাটি অন্য মাত্রা দিয়েছে। ‘‘আয়না থাকলে ঘর আরও বড় দেখায়। আর গোল আয়না লাগানোর কারণ হল, ওই ঘরে সব কিছু খুব চৌকো প্রকৃতির। তাই গোলাকার আয়না চোখে পড়বে বেশি,’’ বললেন শাশ্বত। তাঁর বেডরুমে টিভির পিছনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে আলোর সারি। যদিও খুবই মৃদু আলো, তা যেন বয়ে আনছে উৎসবের আমেজ। শাশ্বতর কথায়, ‘‘সারা দিনের পর অফিস থেকে বাড়ি ফিরে যখন নিজের রুমে বসে টিভি দেখি, তখন ওই আলোগুলো যেন হ্যাপিনেস ফ্যাক্টর তৈরি করে।’’ তাঁর রুমে রাখা বিভিন্ন কুশনে পশুপাখির উজ্জ্বল মোটিফ। ঘরের রং যেহেতু সাদা এবং ধূসর, তাই কুশনের রঙের বাহার রুমের গ্ল্যামার বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিভিন্ন সেন্টার টেবলে বা অন্যত্র রাখা নানা মাপের মূর্তি কেনা হয়েছে তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সিকিম, ভুটান বা নেপাল থেকে। আসলে শাশ্বত বেড়াতে ভালবাসেন। পাহাড় আর সমুদ্র নিয়ে তাঁর কোনও বিরোধ নেই, দুই-ই প্রিয়। তবে শহরে ঘুরতে ভাল লাগে না। অচেনা জায়গায় গিয়ে পান অজানাকে জানার আনন্দ। বেড়াতে গিয়ে এ ভাবেই কিনেছিলেন সবুজাভ রঙের অনিন্দ্যসুন্দর এক বুদ্ধমূর্তি, যা এখন অন্দরের শোভা বহুগুণ বাড়িয়েছে। ‘‘বছর আটেক আগে সিকিমের বাবা মন্দিরে গিয়েছিলাম বেড়াতে। তখন কোনও কারণে চিন বর্ডার থেকে কিছু জিনিস এনে একটি ক্যান্টিনে রেখে বিক্রি করা হচ্ছিল। সেখানে এটি চোখে পড়ায় কিনে নিই,’’ বললেন শাশ্বত।

এ বাড়ির আরও একটি আকর্ষক ‘আসবাব’ হল রঙিন কারুকাজ করা ট্রাঙ্ক, যার উপরে রয়েছে সুদৃশ্য প্লান্টারে একটি গাছ। আসলে এ ঘরটি ছিল শাশ্বতর দাদু-ঠাকুমার এবং ট্রাঙ্কটি তাঁদের বিয়ের। সেটিকে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে শাশ্বত তাঁদের ঘরেই রেখেছেন। ভালবাসা, আন্তরিকতা ও সৌন্দর্যবোধের বনিবনা হলে যে চেতনার জন্ম হয়, তা যেন ছুঁয়ে রয়েছে এ অন্দরের প্রতিটি কোণ...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE