এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হয়েছিল জলপাইগুড়ি থেকে। কোচবিহার, শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মালদহের পরে এ বার এই রোগের বলি দক্ষিণ দিনাজপুরের এক রোগী। এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ মিলেছে বর্ধমানের এক রোগীর দেহেও। এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের গলিরাম এলাকার বাসিন্দা আমিনা বেওয়া (৭৫)। শুক্রবার তাঁকে সেখানে ভর্তি করানো হয়।
এই নিয়ে গত জুলাই থেকে ২ অগস্টের মধ্যে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার রোগীদের মধ্যে কেবল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেই মৃত্যু হল ৯৬ জনের। যাঁদের মধ্যে ২৭ জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। বাকিদের রোগ নির্ণয় হয়নি।
এ দিনই এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ বছরের কিশোর সনাতন মাড্ডি। তার বাড়ি কাঁকসার গাঁড়াদহ গ্রামে। ওই গ্রামে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির তৈরি করা হয়েছে। জ্বরে আক্রান্তের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সনাতনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
রোগ নির্ণয় অবশ্য হয়নি আমিনা বেওয়ারও। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আমিনা ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে’ মারা গিয়েছেন। ভর্তির ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কেন ওই মহিলার রক্ত পরীক্ষা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “যা বলার স্বাস্থ্য অধিকর্তাই বলবেন।”
এই নিয়ে শুধু দক্ষিণ দিনাজপুরে এনসেফ্যালাইটিস জনিত উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা হল ৭ জন। এর মধ্যে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ৩ জন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন বালুরঘাট হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ৪৫ বছরের এক মহিলা এবং দু’বছরের এক শিশু ভর্তি হয়েছে। বংশীহারি ব্লকের জামার গ্রামের বাসিন্দা মামনি কিস্কু নামে ১৪ বছরের এক বালিকা ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ভর্তি। এখনও পর্যন্ত ওই রোগের উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত ৩৫ জন রোগীর রক্তের নমুনা বালুরঘাট থেকে পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। কত জনের রিপোর্ট জেলায় এসেছে, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মণ্ডল তা জানাতে পারেননি। জেলা হাসপাতালে ওই রোগের রক্ত পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই।
মালদহেও রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মালদহের এক প্রৌঢ়ার। আক্রান্ত এক শিশুও। এ নিয়ে মালদহের চাঁচল মহকুমায় ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হল। দু’জনের মধ্যে এক জনের কলকাতায় ও এক জনের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বাড়ি থেকেই তাদের রোগের উপসর্গ শুরু হওয়ায় মহকুমা জুড়েই ক্রমে বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আক্রান্ত দু’জনের চিকিৎসা চলছে কলকাতায়। চাঁচলের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস জানান, রোগের উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারে প্রচার চালানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তপসিয়া এলাকায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে গত বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় রতুয়ার মালোপাড়ার এক প্রৌঢ়ার। তাঁর নাম উমে কুলসুম (৫০)। গত ১২ দিন ধরে সেখানে ভর্তি ছিলেন তিনি। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মালদহের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। অবস্থার অবনতি হলে এনসেফ্যালাইটিস সন্দেহ করেন চিকিৎসকেরা। তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। এসএসকেএম-এ ভর্তি বছর তিনেকের ইয়াসমিন পারভিনও। তার বাড়ি চাঁচল-২ ব্লকের আলাদিপুরে। তাকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতায় রেফার করা হয়। চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy