ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে মোজার দৈর্ঘ্য। হিমেল হাওয়া রুখতে মোজা পায়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকলেই বেশ গরম হয়ে ওঠে চারপাশ। এখন মোজাও পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের। তবে মোজার চল নতুন নয়। প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ মোজার ব্যবহার করে আসছে। প্রমাণ পাওয়া যায় গুহাচিত্রে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে মানব ইতিহাসের প্রাচীনতম ফ্যাশন কিন্তু মোজায় সুরক্ষিত। তবে সে সময়ে পশুর গায়ের লোম বা চামড়া দিয়েই পা ঢাকার এক ধরনের পোশাক বানানো হত। তখন তার নাম ছিল পিলোই। পশমের মোজা বা হাতে বোনা মোজা পরা শুরুও তারও পরে।
মোজা হোক প্রিয় বন্ধু
একে তো পা ঢেকে রাখায় ঠান্ডা কম লাগে। পা পরিষ্কারও থাকে। পা ফাটা, কর্নের সমস্যা থাকলে মোজা পরুন বারো মাস। মোজা পরলে অনেকক্ষণ ময়শ্চার বজায় থাকে পায়ের। ফলে পায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় না।
রকমফের
সব ধরনের আউটফিট বা জুতোর সঙ্গে সব মোজা পরা যায় না। কেমন পোশাক বা জুতোর সঙ্গে কোন ধরনের মোজা ভাল মানাবে, তা আগে জানতে হবে।
স্লিপ অন: এই ধরনের মোজা অনেকটা জুতোর মতোই দেখতে হয়। পায়ের চারপাশটা শুধু ঢেকে রাখে। পায়ের উপরের অংশ উন্মুক্তই থাকে। এই জন্য একে নো-শো সকসও বলে।
সুতির মোজা: শীত চলে গেলেও মোজা তুলে রাখবেন না। সারা দিন রাস্তায় ঘুরুন বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে কাজ হোক, পায়ে থাকুক সুতির মোজা। তা হলে বেশি ঘামও হবে না। পা-ও থাকবে পরিষ্কার।
খেয়াল রাখুন
কেনার সময়ে মোজার সাইজ় দেখে নেওয়া জরুরি। মোজা কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। প্রত্যেকের পায়ের আকার, গড়ন আলাদা। মোজা যেহেতু ইলাস্টিক হয়, তাই তা বেড়ে গেলে আপনার পায়ে ফিট করবে না
নেটের মোজা: ফিশ নেট ও ফেন্স নেট সকস সাধারণত পার্টিতে বা অনুষ্ঠাতে পরতে পারেন। ফিশ নেট একটু ছোট হয় আর ফেন্স নেট হাঁটুর উপর পর্যন্ত। সাদা ও কালোয় জালের মতো বোনা এই মোজা ফ্যাশন জগতে খুব ইন।
পেন রিলিভার: রোজ দৌড়লে বা নিয়মিত হাইক করলে পায়ের উপরে চাপ পড়ে। পায়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে এ ধরনের মোজা পরুন। এতে কমপ্রেশন জ়োন থাকায় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ফাইবারে তৈরি হওয়ায় এই মোজা পরলে পায়ে গন্ধও হয় না।
ফুটবল সকস: এই ধরনের মোজার ফ্যাব্রিকে ভেন্টিলেশন খুব ভাল হয়। ইলাস্টিকও টাইট হয়। ফলে দৌড়ঝাঁপ করলেও মোজা খুলে যায় না। অন্য দিকে পায়ের হিলের দিকে গার্ড দেওয়া থাকে।
ব্যালে গ্রিপ সকস: ব্যায়াম, পিলাটেস করার জন্য এই ধরনের গ্রিপ-সহ মোজা ব্যবহার করতে পারেন। এতে মেঝেয় পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। নতুন হাঁটতে শিখছে এমন বাচ্চাদের জন্যও এই মোজা ভাল।
দৈর্ঘ্য অনুসারে ভাগ
অ্যাঙ্কল লেংথ: লো কাট মোজা। ফলে লো কাট জুতোর সঙ্গেই ভাল মানায়। বিশেষত লোফারস, বোট শু, অক্সফোর্ডসের সঙ্গেই অ্যাঙ্কল লেংথ মোজা পরা হয়।
কোয়ার্টার লেংথ: গোড়ালির একটু উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখে। ফলে পায়ে ফোসকা পরা রোধ করে। অফিশিয়াল কাজে এই মোজা পরা যায়।
ক্রিউ লেংথ: সাত-আট ইঞ্চি এই মোজা কাফ মাসল পর্যন্ত দীর্ঘ। ফলে শীতকালে খুব আরামদায়ক।
কাফ লেংথ: এই ধরনের মোজা সাধারণত বুটের সঙ্গেই পরা হয়। অনেক সময়ে মিড কাফ লেংথও ব্যবহার করা যায়।
এ ছাড়া নি-লেংথ, থাই হাই লেংথ মোজাও বাজারে পেয়ে যাবেন। শীতকালে এই ধরনের মোজার ব্যবহার বেশি।
নিয়মও অনেক
• সাধারণত ট্রাউজ়ার্সের সঙ্গেই মোজার রং বা প্যাটার্ন ম্যাচ করে পরতে হয়। ট্রাউজ়ার্সের চেয়ে এক শেড গাঢ় বা হালকা রঙের মোজা বাছতে পারেন। কোনও প্যাটার্ন বা ডিজ়াইনের মোজা পরতে চাইলে তা-ও যেন ট্রাউজ়ার্সের সঙ্গে মানায়, দেখে নিতে হবে।
• বসার সময়ে ট্রাউজ়ার্স কতটা উঠছে, খেয়াল রাখুন। ট্রাউজ়ার্সের নীচে যেন মোজাই দেখা যায়, পা যেন বেরিয়ে না আসে। সেই অনুযায়ী মোজার দৈর্ঘ্য বাছুন।
• স্পোর্টস সকস খেলার মাঠে এবং ড্রেস শু-এর সঙ্গে পরা যাবে না। স্পোর্টস সকস সাধারণত অনেক মোটা হয়। ফলে ফর্মাল জুতোর সঙ্গে ভাল দেখায় না। সে ক্ষেত্রে হালকা মোজা পরতে পারেন। অন্য দিকে স্পোর্টস শু-র সঙ্গেও এমন মোজা না পরে স্পোর্টস সকস পরাই ভাল।
• প্রত্যেক দিন বাড়ি ফিরে মোজা কাচা দরকার। একই মোজা রোজ পরা চলবে না। না হলে মোজায় দুর্গন্ধ হবে ও ছড়াবে।
ফ্যাশন স্টেটমেন্ট পালটে দিতে পারে মোজা। তাই চাইলে পোশাকের সঙ্গে মানানসই অনেক ধরনের মোজাও রাখতে পারেন ওয়ার্ড্রোবে।
মডেল: আয়েন্দ্রী রায়, ছবি: অয়ন নন্দী, মেকআপ: চয়ন রায়, পোশাক: ম্যাক্স
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy