বছর চারেক আগে আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা বলেছিল দমকল। সেই মতো কাজও শুরু করেছিল হাসপাতালগুলি। কিন্তু বিষয়টি কিছুটা থিতিয়ে যেতেই যে সেই কাজ থমকে গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে পর পর অগ্নিকাণ্ডে।
যেমন গত ছ’মাসেই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে অন্তত ১০টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কখনও এসএসকেএম, কখনও মেডিক্যাল কলেজ, কখনও বা ন্যাশনাল। আমরির মতো বিশাল না হলেও পর পর এই ঘটনাগুলিতেও যে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তা থেকেও যে কোনও শিক্ষা নেয়নি হাসপাতালগুলি, তার প্রমাণ মিলল বুধবারের ঘটনাতেই। অল্পের জন্য বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগ।
এ দিন সকালে আগুন লাগে এনআরএস-এর শিশু বিভাগের অপারেশন থিয়েটারের। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনে। এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর না থাকলেও হাসপাতালের কর্মী এবং ওই চত্বরে থাকা রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। দমকল বিভাগের অনুমান, অপারেশন থিয়েটারের সুইচ বোর্ড থেকে শর্ট সার্কিট হয়েই এই ঘটনা।
কিন্তু পর পর এত অগ্নিকাণ্ডের পরেও আদৌ কি কোনও শিক্ষা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর? স্বাস্থ্য সচিব মলয় দে এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন, কলকাতার হাসপাতালগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে আগুন লাগছে। তিনি বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের তার থেকে আগুন ছড়াচ্ছে। পূর্ত দফতরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগকে সমস্ত হাসপাতালের হাল খতিয়ে দেখতে বলেছি। বেশ কিছু হাসপাতালে ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু কবে সেই কাজ শেষ হবে, তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেশির ভাগ হাসপাতালেই মান্ধাতার আমলের তার জড়িয়ে-পেঁচিয়ে একাকার হয়ে আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলিও পুরনো। এ দিকে, কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার সময়ে আবার অনেকে যন্ত্র বন্ধ করেন না। ফলে অতিরিক্ত ভার বহন করতে গিয়ে সেগুলি বিগড়ে যায়। কাজেই শুধু তার বা যন্ত্র বদলালে হবে না, সঙ্গে প্রয়োজন কড়া নজরদারিও।’’
কী হয়েছিল এ দিন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু বিভাগের ওই অপারেশন থিয়েটারের এক দিকে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম ধোওয়া হচ্ছিল। হঠাৎই সেখানকার একটি সুইচ বোর্ড থেকে আগুনের ফুলকি বেরোতে দেখা যায়। ক্রমে তা বাড়তে থাকে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে কর্মীরা অপারেশন থিয়েটার বেরিয়ে আসেন। তাঁরাই খবর দেন দমকলে। দমকলের আধিকারিকেরা এসে ‘সুইচ বোর্ড’ থেকে প্লাগ খুলে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই সময়ে সেখানে কোনও অস্ত্রোপচার হচ্ছিল না। কর্মীদের দাবি, ওই অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীদের ওয়ার্ডটি দূরে থাকায় সেখানে তেমন আতঙ্ক ছড়ায়নি। মিনিট পনেরোর মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy