মডেল: সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়, ভিরাজ রায়, রোমিত বন্দ্যোপাধ্যায়; ছবি: জয়দীপ দাস; মেকআপ: চয়ন রায়; ছবি: অমিত দাস। ছবি: অমিত দাস
আদরের পুত্তলি সন্তানটি বড় হয়ে যাচ্ছে। যে খুদের এক সময়ে মা-বাবাকে ছাড়া চলত না, সে এখন দিব্যি একা ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকে। পাল্টে গিয়েছে পছন্দ-অপছন্দ। বিশ্বের নানা বিষয়ে আগ্রহ, খাওয়ার টেবিলে স্পষ্ট মতামত দেয় সে। কিছু অপছন্দ হলেই ঠোঁট উল্টে নস্যাৎ করা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। পরিণত হচ্ছে সে, তীব্র হচ্ছে তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে টক্কর লাগছে সেখানেই— ফলাফল? কথা বন্ধ, দূরত্ব, নিজের গণ্ডির মধ্যে কাউকে ‘অ্যালাও’ না করা। পাল্টা উদ্বেগ বাড়ছে বাবা-মায়েরও।
পারস্পরিক সম্মান
সত্যি কথা বলতে কী, প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটা কথা বারবার শোনা যায়। কৈশোর-বয়ঃসন্ধি খুব সংবেদনশীল একটা সময়। বাবা-মাকে বলা হয়, যত্ন করতে হবে এ সময়ে। ‘বয়সটা তো ভাল নয়, খেয়াল রেখো’, গুরুজনদের লব্জে নিষিদ্ধ ইশতেহারের মতো ছুঁয়ে থাকে শব্দগুলো। অথচ বাস্তবে কৈশোরে পদার্পণ করা ছেলেমেয়েরা কী চায়?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বললেন, “পারস্পরিক সম্মান অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ। কিশোর-কিশোরীরা এ বয়সে পৃথিবীকে নতুন করে চেনে, জানে, অনুভব করে। সেই সময়ে পারস্পরিক সম্মান ও মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনাই হল সুস্থ সম্পর্কের অন্যতম চাবিকাঠি। বাবা-মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য বা দূরত্ব তৈরি হওয়ায় যে সব সময় সন্তানেরই ভূমিকা থাকবে, তা নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মা দায়সারা হন, আধিপত্য বজায় রাখতে চান। সমস্যা শুরু হয় সেখানে। বাচ্চাদের বড় হওয়ার সময়ে, তাদের সঙ্গে আচরণের ধরন বদলাতে হবে। সম্মান সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” একটা কথা বাবা মাকে মাথায় রাখতে হবে, বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যটি আর খুদে নেই। তাই তার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পাশাপাশি তাকে সম্মান দেওয়াও প্রয়োজন।
ভুল করলে?
সন্তানকে বিপদ থেকে রক্ষা করার মনোভাব বাবা মায়ের থাকা খুব স্বাভাবিক। যে খুদেটি এক সময়ে নির্ভরশীল ছিল, সে হঠাৎ নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চাইছে। এতে বাবা-মায়ের অস্বস্তির চেয়েও ভয় হয় বেশি যে, ভুল করবে। ক্ষতি হয়ে যাবে সন্তানের। সেই ভয় বা উদ্বেগ থেকেই আরও বেশি আঁকড়ে ধরা। অনেক বাবা মায়ের আবার আধিপত্য বজায় রাখার প্রবণতা থাকে। অর্থাৎ ‘আমি খাওয়াচ্ছি, পরাচ্ছি, লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছি, অথচ আমার কথা শুনতেই আপত্তি! আমি তো ভালর জন্যই বলছি।’ মুশকিল হল, প্রতিটি মানুষ আলাদা, ভাবনার ধরন আলাদা। তাই, নিজেদের ভাবনার ধরন থেকে যেটাকে বিপজ্জনক ভাবছেন, সেটা আদতে তত বিপজ্জনক না-ও হতে পারে। নিরাপত্তার কথা ভাবুন, কিন্তু যুক্তি বুদ্ধির ঊর্ধ্বে উঠে নয়।
ডা. রাম এই প্রসঙ্গেই বললেন, “সন্তান ভুল করলেই সব শেষ হয়ে গেল এটা ভাবার কোনও যুক্তি নেই। ভুল না করলে মানুষ অভিজ্ঞ হয় না। অভিজ্ঞতা থেকেই সূচনা হয় ঠিক জিনিস শেখার। তাই সন্তান ভুল করেছে, তাই তাকে একঘরে করে দিলে আখেরে ক্ষতি। বরং সে যেন তথাকথিত ভুল করে আপনার কাছে এসে সে বিষয়ে কথা বলতে পারে, সেই নিরাপত্তাটুকু দেওয়া প্রয়োজন।”
না বলাও জরুরি
তা হলে কি সন্তান যা চাইবে তাতেই রাজি হয়ে যাবেন? ডা. রাম বললেন, “না বলা অত্যন্ত জরুরি। তার চেয়েও জরুরি কী ভাবে ‘না’ বলা হচ্ছে। শান্ত ভাবে তাকে বোঝান কেন সে পরীক্ষার মাঝের উইকেন্ডে তাজপুর যেতে পারবে না। মুখের উপরে কোনও কারণ ছাড়া ‘না’ বলে দিলে সে গুটিয়ে যাবে বা বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিন। তাদের শেখান, কী ভাবে পাওয়ার তুলনায় অর্জনে আনন্দ বেশি।’’
পাশাপাশি, বিকল্প প্রস্তাবও দিতে পারেন। অর্থাৎ তুমি তাজপুর এখন যেয়ো না, স্টিফেন কিংয়ের নতুন বইটা কিনে দেব পরীক্ষা শেষ হলেই। ধৈর্যশীল ভাবে যুক্তি দিয়ে ‘না’ বললে ছেলে মেয়েরা সহনশীল হয়ে উঠবে। বুঝবে, জীবনে সব কিছু চাইলে পাওয়া যায় না। অর্জন করতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy