অনলাইন গেম নিয়ে কর্মশালা। রোটারি সদনে। নিজস্ব চিত্র
টিউশন থেকে দ্রুত বা়ড়ি ফিরে এসেছিল নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। সে দিন বাবা-মায়ের সঙ্গে একটু আহ্লাদ করতেই ইচ্ছে করছিল তার। দু’জনকে জড়িয়ে ধরে গল্প করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখে, একটি ঘরে তার বাবা ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। অন্য ঘরে মা মুখ গুঁজে রেখেছেন মোবাইলে। মেয়ের দিকে এক বার তাকিয়েই ফের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁরা।
সে মুহূর্তে নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিল তার। এর পরেই কাঁদতে কাঁদতে অন্য ঘরে গিয়ে মোবাইলে গেম খেলতে শুরু করে মেয়েটি। তার কথায়, ‘‘সব সময় একা লাগে। মন খারাপ হলেই অনলাইন গেম খেলি। আমাকে এর থেকে বাঁচাতে পারেন?’’
প্রেক্ষাগৃহে কয়েকশো পড়ুয়া, শিক্ষক ও মনোবিদের সামনে এ ভাবে নিজের অবস্থা তুলে ধরে বাঁচার পথ দেখানোর জন্য কাতর আর্তি করল ওই ছাত্রী। ততক্ষণে সকলেরই প্রায় গলা বন্ধ হয়ে আসছে। কেউ আবার মাথা নিচু করে বসে আছেন।
শনিবার, রোটারি সদনে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশন’-এর আয়োজিত কর্মশালায় এ ভাবেই একাকিত্বের শিকার কিছু পড়ুয়া নিজেদের দুর্দশা তুলে ধরল। সমীক্ষা বলছে, মাঠে খেলার থেকে অনলাইনের নানা মারণ খেলায় পড়ুয়াদের আসক্তি বাড়ছে। তা থেকে তাদের বাঁচাতেই কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান ও দুই মেদিনীপুরে সিআইএসসিই বা কাউন্সিল ফর দ্য ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগজামিনেশন–এর আওতায় থাকা ২২৫টি স্কুলের প়ড়ুয়া ও শিক্ষকদের নিয়ে ওই কর্মশালা আয়োজিত হয়েছিল। সেখানেই ওই ছাত্রী এই ঘটনাটি তুলে ধরে।
মনোবিদ সলোনি প্রিয়া এর প্রেক্ষিতে উত্তরও দেন। তিনি ওই ছাত্রীকে জানান, এমন ঘটলে পাশের ঘরে বসেই বাবা-মাকে ল্যাপটপ এবং মোবাইলে তার মনের কথা জানাতে হবে। অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে না পেরে সন্তানেরা যখন যন্ত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করবে, তখনই অভিভাবকদের বাস্তবের মুখোমুখি করানো যাবে বলে মত তাঁর। সংগঠনের সভাপতি সুজয় বিশ্বাসের কথায়, ‘‘একই ভাবে সন্তানেরা যখন একাকিত্ব থেকে বাঁচতে এই সব অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন অভিভাবকেরাও আর তাঁদের ফেরাতে পারেন না।’’
শুধু ওই ছাত্রীই নয়, এ দিন আরও অনেকেই অনলাইন গেমের প্রতি আসক্তি নিয়ে নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছে কর্মশালায়। যেখান থেকে একটি বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া গিয়েছে, অধিকাংশই একাকিত্ব থেকে বাঁচতে এ সব গেমের আশ্রয় নিচ্ছে। টিউশনের চাপে একেই বাইরের পরিবেশ থেকে অনেকেই সরে এসেছে, তার উপরে অভিভাবকদের কাছে আশ্রয়টুকুও না পেলে শিশুদের ঠিক পথে রাখা যাবে না বলেও জানান সলোনি প্রিয়া।
তবে একাকিত্বই নয়, অনলাইন গেম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কম থাকলে বন্ধুদের জগতেও উপেক্ষিত হওয়ার ভয় থাকে। তাই এ সবের প্রতি আগ্রহ রাখতে হয়। এর থেকে বাঁচতে বন্ধুরা মিলে মাঠে নেমে খেলার উপরে জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সন্তানদের দামি জিনিস দিলেই অভিভাবকদের দায় মিটে যায় না। সন্তানদের মনে জমে থাকা কষ্টগুলো বোঝা দরকার। না হলে তারা একাকিত্বের অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy